সালাতে আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা

শয়তান আমাদের পরম দুশমন শয়তানের শত্রুতা হল, সে একজন মুসল্লিকে তার সালাতের মধ্যে কু-মন্ত্রণা ও ওয়াস-ওয়াসা দেয়; যাতে তার খুশু‘ চলে যায়, আর এভাবেই সে তার সালাতে বিভ্রান্তি তৈরী করে।
“প্রত্যেক ব্যক্তি যখনই আল্লাহর যিকির বা কোনো ইবাদতের দিক মনোযোগ দেয়, তখনই শয়তান তাকে বিভিন্ন ধরনের কু-মন্ত্রণা দিতে থাকে। সুতরাং একজন বান্দার জন্য জরুরী হল, সে ইবাদতে ধৈর্য ধারণ করবে,  অটল ও অবিচল থাকবে এবং ইবাদত, যিকির ও সালাতে সর্বদা নিমগ্ন থাকবে, কোনো প্রকার অস্বস্তি প্রকাশ করবে না। কারণ, ইবাদতে লেগে থাকার মাধ্যমে শয়তানের ষড়যন্ত্র তার থেকে দূরে সরে যাবে।
﴿إِنَّ كَيۡدَ ٱلشَّيۡطَٰنِ كَانَ ضَعِيفًا ٧٦﴾ [النساء : ٧٦]   
“নিশ্চয় শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল”[77]
আর যখনই একজন বান্দা অন্তর দ্বারা আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হতে চায়, তখন অন্য কোন বিষয় তার সামনে এসে তাকে কু-মন্ত্রণা দিতে থাকে। শয়তান হল, ছিনতাইকারী ও ডাকাতের মত। যখন কোনো বান্দা আল্লাহর দিকে রওয়ানা করে, শয়তান তখন তাকে হাইজ্যাক করতে চায়। এ কারণে কোনো পূর্বতম মনিষী (সালাফ)কে বলা হল, ইয়াহূদী ও নাসারারা বলে, “তাদের শয়তান কু-মন্ত্রণা দেয় না। তিনি বললেন, সত্য কথাই বলছে। নষ্ট ঘরে শয়তান প্রবেশ করে লাভ কি।”[78]
এ বিষয়টিকে সুন্দর একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝানো হল, তিনটি ঘর: একটি বাদশাহর ঘর তার মধ্যে রয়েছে, বাদশাহর ধন-ভাণ্ডার, খাজানা ও মণিমুক্তা। অপর ঘর একজন দাসের ঘর, তাতে রয়েছে, দাসের ধন-ভাণ্ডার, খাজানা ও মণিমুক্তা, তবে তা বাদশাহর ধন-সম্পদের সাথে তুলনীয় নয়। আরেকটি ঘর তা একেবারেই খালি, তাতে কিছুই নেই। যখন চোর আসবে, সে কোন ঘরে প্রবেশ করবে এবং কোন ঘর থেকে চুরি করবে?[79]
“যখন বান্দা সালাতে দাড়ায় তখন তার উপর শয়তানের ঈর্ষা-হিংসা ও দ্বেষ চলতে থাকে। কারণ, তখন বান্দা একটি মহান ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের স্থানে দাঁড়িয়েছে এবং শয়তানের জন্য সবচেয়ে অধিক কষ্টদায়ক ও কঠিন স্থানে অবস্থান করছে। একজন বান্দা যাতে সালাতকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারে, সে জন্য শয়তান যাবতীয় চেষ্টাই করতে থাকে। তাকে বিভিন্ন ধরনের আশা দেয়, প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সালাতকে ভুলিয়ে দিতে সব চেষ্টাই সে করে। শয়তান একজন বান্দাকে সালাত থেকে বিরত রাখার জন্য হাতি-ঘোড়াসহ তার সব ধরনের সৈন্যকে ব্যবহার করে এবং আরও যা যা ব্যয় করা দরকার তার সবই সে ব্যয় করতে থাকে, যাতে বান্দাটি সালাতকে গুরুত্বহীন মনে করে এবং সালাতের প্রতি যত্নবান ও মনোযোগী না হয়। শয়তানের এ ধরনের টানা-হেঁচড়া ও যুদ্ধ ঘোষণা করার কারণে বান্দা অনেক সময় সালাতকে গুরুত্বহীন মনে করে এবং সে সালাত আদায় করা ছেড়ে দেয়। আর যখন শয়তান কোনো বান্দার ক্ষেত্রে অক্ষম হয় এবং বান্দা শয়তানের বশ্যতা স্বীকার না করে, আর সালাতে দাঁড়িয়ে (আল্লাহর নৈকট্য লাভের) এ মহান অবস্থানে পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহর দুশমন একজন বান্দার মাঝে ও তার অন্তরের মাঝে অবস্থান করে এবং বান্দার মাঝে ও অন্তরের মাঝে সালাতে যাতে মনোযোগী হতে না পারে সে জন্য দেয়াল তৈরি করে। তারপর সে সালাতে বান্দাকে এমন সব কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা সালাত আরম্ভ করার পূর্বে স্মরণ করানো হয় নি। এমনকি দেখা যায়, কোনো বিষয় ও প্রয়োজন এমন আছে, যা বান্দা একেবারে ভুলে গেছে এবং তা হতে সে নিরাশ হয়ে গেছে, এ ধরনের বিষয়গুলো শয়তান সালাতের মধ্যে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যাতে তার অন্তরকে সালাত থেকে ফিরিয়ে নেয়া যায় এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখা যায়। ফলে সে সালাতে নিষ্প্রাণ হয়ে (আল্লাহর সামনে) দাঁড়ায়। আল্লাহকে সামনে রেখে মনোযোগ সহকারে সালাত আদায়কারী যেভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও সাওয়াব হাসিল করে, সে তার কোন কিছুই লাভ করতে পারে না। ফলে সে যেভাবে খালি হাতে সালাতে দাড়িয়ে ছিল, সেভাবে খালি হাতেই সালাত থেকে গুনাহের বোঝা নিয়ে বের হয়ে আসে। সালাত আদায়ের কারণে তার গুনাহের বোঝা একটুও হালকা হয় না। কারণ, সালাত ঐ ব্যক্তির গুনাহগুলো দূর করে, যে সালাতের হক আদায় করে, সালাতকে মনোযোগ সহকারে আদায় করে, সালাতে খুশুকে পরিপূর্ণ করে এবং সালাত আদায় করার সময় আল্লাহর সামনে মনোযোগ সহকারে দাড়ায়[80]
শয়তানের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা ও শয়তানের কুমন্ত্রণাকে দূর করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্ন লিখিত চিকিৎসার প্রতি দিক নির্দেশনা দেন। আবুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
يا رسول الله إن الشيطان قد حال بيني وبين صلاتي وقراءتي يلبِّسها عليّ ، فقال رسول الله صلى عليه وسلم : «ذاك شيطان يُقال له خنزب فإذا أحسسته فتعوّذ بالله منه واتفل على يسارك ثلاثا». قال : ففعلت ذلك فأذهبه الله عني.
“হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার সালাতের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এবং আমার কেরাআত পড়ার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি শয়তান, এর নাম ‘খানযাব’ যখন তুমি তা অনুভব করবে, তখন আল্লাহর নিকট শয়তান হতে আশ্রয় চাও এবং তোমার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেল। তিনি বলেন, আমি কাজটি করলে, আল্লাহ তাআলা আমার থেকে তা দূর করে দেন”[81]
সালাত আদায়কারীকে শয়তানের ধোঁকা দেয়া ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন এবং তিনি বলেন,
«إن أحدكم إذا قام يصلي جاء الشيطان فلبس عليه - يعني خلط عليه صلاته وشككه فيها - حتى لا يدري كم صلىفإذا وجد ذلك أحدكم فليسجد سجدتين وهو جالس»
“যখন তোমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তি সালাতে দাড়ায়, শয়তান এসে তাকে বিপাকে ফেলে। অর্থাৎ তার সালাতকে এলোমেলো করে দেয় এবং সালাতের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করে। ফলে সে কত রাকাত সালাত আদায় করল, তা ভুলে যায়। যখন তোমাদের এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তখন বসা অবস্থায় তোমরা দুটি সেজদা করে নিবে”[82]  
অনুরূপভাবে শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে আমাদের আরও সংবাদ দেন যে,
«إذا كان أحدكم في الصلاة فوجد حركة في دبره أحدث أو لم يحدث ، فأشكل عليه ، فلا ينصرف حتى يسمع صوتا أو يجد ريحا»
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে থাকা অবস্থায় তার পায়ু পথে নড়-চড় অনুভব করে এবং ওজু ভঙ্গ হল কি হল না সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারছে না, সে যেন যতক্ষণ পর্যন্ত কোন আওয়াজ না শোনে বা হাওয়া না বের হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত না ছাড়ে”[83]
বরং শয়তানের ষড়যন্ত্র অনেক সময় আশ্চর্য রূপ ধারণ করে। যেমনটি এ হাদিস তা স্পষ্ট করে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل عن الرجل يخيّل إليه في صلاته أنه أحدث ولم يُحدِث ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم «إن الشيطان يأتي أحدكم وهو في صلاته حتى يفتح مقعدته فيخيل إليه أنه أحدث ولم يُحدث ، فإذا وجد أحدكم ذلك فلا ينصرفن حتى يسمع صوت ذلك بأذنه أو يجد ريح ذلك بأنفه»   
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যার মনে হচ্ছে যে, সালাতে তার বায়ু বের হয়ে ওজু ভঙ্গ হয়েছে অথচ তার ওজু ভঙ্গ হয় নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “শয়তান তোমাদের সালাতে উপস্থিত হয়ে তার পায়ু পথ খোলে দেয়, ফলে সে মনে করে তার ওজু নষ্ট হয়ে গেছে অথচ তার ওজু নষ্ট হয় নি। সুতরাং যখন তোমাদের কেউ এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সে যে সালাত থেকে ফিরে না যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ কানে পায়ুর আওয়াজ শুনতে না পায় অথবা নাকে তার দুর্গন্ধ অনুভব না করে”[84]

মাসআলা   
সালাতে শয়তানের এক প্রকার ধোঁকা আছে, যে ধোঁকাটি ‘খানযাব’ নামের শয়তান মুসল্লিদের মধ্যে যারা ভালো তাদেরকে দিয়ে থাকে। আর তা হল, মুসল্লিদের মনোযোগকে সালাত থেকে সরিয়ে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীর দিকে নিয়ে যায়। যেমন, মুসল্লিদের মনোযোগকে কোন দাওয়াতি কাজের প্রতি মগ্ন করে দেয়া অথবা কোনো ফিকহী মাসআলার মধ্যে চিন্তা মগ্ন করে দেয়। ফলে তারা তাদের সালাতের একটি অংশে কি করল তা বুঝতেই পারে না। আবার কোনো কোনো সময় অনেকে এ মনে করে ধোঁকায় পড়ে যে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাতে সৈন্য পরিচালনা করতেন। [সুতরাং, আমাদের জন্যও সালাতে কোনো ফিকহী মাসআলা বা দ্বীনি বিষয়ে চিন্তা করা বৈধ, তা সালাতে খুশুর পরিপন্থী নয়শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এ বিষয়টিকে  পুরোপুরি স্পষ্ট করেন এবং এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর দেন।
তিনি বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তি, ‘আমি সালাতে আমার সৈন্য প্রস্তুত করি’ এটি তার জন্য খাস ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। কারণ, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমীরুল মুমিনীন হওয়ায়, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট ছিলেন এবং তিনি জিহাদেরও আমীর। ফলে তিনি এক দিক দিয়ে ঐ মুসল্লির মত, যে দুশমনের মুখোমুখি হওয়া অবস্থায় যুদ্ধের ময়দানে ভীতির সালাত আদায় করছে। হয়ত সে যুদ্ধরত অথবা সে যুদ্ধরত নয়, তবে সর্বাবস্থায় সে সালাতেও আদিষ্ট এবং জিহাদেও আদিষ্ট। সুতরাং তার ক্ষমতা অনুযায়ী তার জন্য দুটি আদেশই পালন করা ওয়াজিব। তাকে যথাসাধ্য দুটি আদেশই পালন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا لَقِيتُمۡ فِئَةٗ فَٱثۡبُتُواْ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٤٥﴾ [الانفال: ٤٥]   
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোনো দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাক, আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও”।[85] আর এ কথা আমাদের কারোই অজানা নয়, জিহাদ চলাকালীন অন্তরের অবস্থা, আর অন্য সময় যখন জিহাদ চলে না, সে সময়ের অন্তরের অবস্থা কখনোই এক হবে না। তখন যদি ধরে নেয়া হয়, জিহাদের কারণে সালাতে কোনো প্রকার দুর্বলতা পাওয়া যায় বা সালাত ছাড়া অন্য কোন দিক মনোযোগ যায়, তা বান্দার ঈমানের পরিপূর্ণতা ও আনুগত্যটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না এবং এতে বান্দা কোন প্রকার দোষীও সাব্যস্ত হয় না।
এ কারণেই সালাতুল খাওফকে অন্য সময়ের সালাতের তুলনায় সংক্ষিপ্ত করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা যখন সালাতুল খাওফের কথা উল্লেখ করেন, তখন বলেন,
﴿فَإِذَا ٱطۡمَأۡنَنتُمۡ فَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَۚ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣﴾ [النساء : ١٠٣]   
“অতঃপর যখন তোমরা নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।[86] সুতরাং নিরাপদ অবস্থায় যে সালাত রকম কায়েম করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ভীতির সময়ে সে রকম সালাত কায়েমের নির্দেশ দেওয়া হয় নি।
এ ছাড়াও মানুষ এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আছে। যখন বান্দার ঈমান মজবুত ও শক্তিশালী হবে, তখন সে অন্যান্য কাজগুলোর ফিকির করার সাথে সাথে সালাতেও মনোযোগী হতে সক্ষম হবে। আল্লাহ তাআলা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মুখে ও অন্তরে সত্যকে প্রতিস্থাপন করেছেন। তিনি ছিলেন ‘মুহাদ্দিস’ তথা সত্যকথক ও ‘মুলহাম’ তথা সত্যের দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত। তার মত ব্যক্তির পক্ষে সালাতের মধ্যে সৈন্য পরিচালনা করার সাথে সাথে অন্তরের পূর্ণ উপস্থিতি অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অন্যদের জন্য সেটা সম্ভব নয়। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে, সালাতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত করার বিষয়টি আগমন করার চেয়ে সেটা না আসলে সালাতে অন্তর বেশী হাজির হয়। আর এতে কোন সন্দেহ নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত নিরাপদ অবস্থায় ভীতির অবস্থার তুলনায় অধিক পরিপূর্ণ। আল্লাহ যেহেতু ভীতির অবস্থায় সালাতের অনেকগুলো ওয়াজিব আদায় না করাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে অন্তরের অবস্থা-তো আরও অধিক ক্ষমা যোগ্য।
মোটকথা, একজন মুসল্লি স্বীয় সালাতে ওয়াজিব কোনো বিষয়ে চিন্তা করা, যার চিন্তা করার সময় সংকীর্ণ হয়ে এসেছে, (সালাতের পরে যা করার মত সময় নেই), আর ওয়াজিব নয় বা যার সময় সংকীর্ণ হয়ে যায় নি, (সালাতের পরও যেটা নিয়ে চিন্তা করার প্রচুর সময় রয়েছে) এমন বিষয়ে সালাতে চিন্তা করা এক রকম নয়। হতে পারে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য ঐ সময় সেনাবাহিনীর কথা চিন্তা করা ছাড়া আর কোনো সময় ছিল না। তিনি উম্মতের ইমাম এবং তার নিকট মানুষের কাছ থেকে আগত সমস্যা অসংখ্য। প্রতিটি মানুষ তার মর্যাদা অনুযায়ী এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। আর মানুষ সালাতে এমন সব বিষয় স্মরণ করে, যা সালাতের বাহিরে সে স্মরণ করে না। সালাতে মানুষের এ সবকিছু সাধারণত শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়। যেমন, সালাফে সালেহীন থেকে একটি ঘটনা বর্ণিত, এক লোক তার কিছু টাকা পয়সা মাটিতে পুঁতে রাখে। কিছুদিন অতিবাহিত হলে,  লোকটি তার টাকা পয়সা কোথায় পুতে রেখেছে, তা ভুলে যায়। তখন তাকে কোনো এক সালাফ উপদেশ দিলেন, তুমি সালাতে দাড়াও। তারপর সে সালাতে দাঁড়ালে, সালাতের মধ্যে জায়গাটি তার স্মরণ আসল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তুমি এটি কোথায় শিখলে? তিনি বললেন, আমি জানি শয়তান কোনো মানুষকে সালাতে শান্তিতে থাকতে দেয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়, যা তাকে সালাতে মনোযোগ দেয়া হতে বিরত রাখে। কিন্তু বুদ্ধিমান ব্যক্তি অন্যান্য আদিষ্ট কর্মগুলো পুরোপুরি সম্পাদনের সাথে সাথে সালাতেও পুরোপুরি মনোযোগী হতে সচেষ্ট থাকে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, “মহান, সর্ব্বোচ্চ আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত গুনাহ থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই, তেমনিভাবে ইবাদত করারও কোনো ক্ষমতা নেই।”[87]