হাঁচির উত্তর দেয়া ও উত্তর দাতার জবাব দেয়ার বিধান

যখন কোন ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে, তার উত্তর দেয়া ফরযে কিফায়া। আর তার উত্তরে يرحمك الله বলা ফরযে আইন। 
প্রমাণ:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে মারফু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 
«إذا عطس أحدكم فحمد الله فحق على كل مسلم سمعه أن يقول له يرحمك الله»  
“যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দেয় এবং আলহামদু লিল্লাহ বলে, তখন যে মুসলিম কথাটি শুনল, তার উপর ওয়াজিব হল, সে يرحمك الله ‘ইয়ার হামুকাল্লাহ’ ‘আল্লাহ তোমাকে দয়া করুক’ বলবে”।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إذا عطس أحدكم فليقل الحمد لله على كل حال وليقل أخوه أو صاحبه يرحمك الله ويقول هو يهديكم الله ويصلح بالكم» رواه أبو داود.
“যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয়, তখন সে যেন সর্বাবস্থায় আলহামদু লিল্লাহ বলে, উত্তরে তার সাথী বা ভাই যেন বলে, يرحمك الله  তারপর সে বলবে يهديكم الله ويصلح بالكمআল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে সংশোধন করে দিক”। আবু-দাউদ। 
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
"عطس رجلان عند النبي  فشمت أحدهما، ولم يشمت الآخر فقال الذي لم يشمته عطس فلان فشمته وعطست فلم تشمتني فقال: «هذا حمد الله وإنك لم تحمد الله» متفق عليه.
“একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে দুই লোক হাঁচি দিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ একজনের হাঁচির উত্তর দেন অপর জনের হাঁচির উত্তর দেন নি। যার হাঁচির উত্তর দেয়নি সে বলল, অমুকের হাঁচির উত্তর দিলেন আর আমি হাঁচি দিয়েছি, কিন্তু আমার হাঁচির উত্তর দেন নি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে বললেন, সে লোকটি আলহামদু লিল্লাহ বলেছে। আর তুমি তা বলোনি”। [বুখারি ও মুসলিম]

যখন কোন ব্যক্তির হাই আসে, সাধ্য অনুযায়ী তা দমিয়ে রাখা ভালো। তারপরও যদি অক্ষম হয়, তাহলে হাত বা কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মুখ ডেকে রাখবে। 
প্রমাণ: আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,  রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إذا تثاءب أحدكم فليمسك بيده على فيه فإن الشيطان يدخل» رواه مسلم.
“তোমাদের কেউ যখন হাই তুলে, সে যেন তার হাতকে মুখের উপর রাখে। কারণ, তখন শয়তান তার মুখে প্রবেশ করতে থাকে। আর যখন কোন ব্যক্তি হাঁচি দেয়, সে যেন তার চেহারাকে ডেকে রাখে এবং আওয়াজ ছোট করে, যাতে অন্যদের কষ্ট না হয়”। 
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, 
«أنه كان إذا عطس غطى وجهه بثوبه ويده» حديث صحيح.
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি তার চেহারাকে হাত বা কাপড় দিয়ে ডেকে রাখতেন। হাদিসটি বিশুদ্ধ। 
শারহে মানযুমাতুল আদাব কিতাবে এসেছে, আল্লামা ইবনে হুবাইরা রহ. বলেন, যখন কোনো মানুষ হাঁচি দেয়, তাতে তার শরীরের সুস্থতা প্রমাণিত হয়। তার হজম শক্তি ভাল হওয়া ও তার শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণিত হয়। সুতরাং, তার জন্য উচিত, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে আল্লাহর প্রশংসা করার নির্দেশ দেন। 
বুখারিতে বর্ণিত, “আল্লাহ তা‘আলা হাঁচিকে পছন্দ করেন এবং হাইকে অপছন্দ করেন।” কারণ, হাঁচি দেয়া মানুষের শরীরের সুস্থতা ও কর্মঠ হওয়াকে প্রমাণ করে। পক্ষান্তরে ‘হাই তোলা’ দেহ ভারী হওয়া, ঢিলে-ডালা হওয়া ও দুর্বল হওয়াকে প্রমাণ করে। ফলে তা মানুষকে অলসতার দিকে নিয়ে যায়। এ কারণেই হাইকে শয়তানের কর্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ, শয়তান তাতে খুশি হয় এবং তার কারণেই শয়তান মানুষকে প্রবৃত্তির পূজা করার প্রতি ধাবিত করে। যখন কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার হাঁচি দেয়, তখনও তুমি তার হাঁচির উত্তর দাও। আর যদি চতুর্থ বার হাঁচি দেয়, তাহলে তার জন্য নিরাপত্তা বা রোগমুক্তির দো‘আ কর। 

যখন কোনো ব্যক্তি ‘আত্মীয় হোক বা না হোক’ ঘরে প্রবেশ করতে চায়, তাকে অবশ্যই ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাইতে হবে। 
প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ٢٧ ﴾ [النور: ٢٧]  
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«الاستئذان ثلاث فإن أذن لك، وإلا فارجع» متفق عليه.
 “অনুমতি চাওয়া তিনবার। যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, তা হলে ভাল। অন্যথায় তুমি ফিরে যাও”। বুখারি ও মুসলিম। 
কালদা ইব্‌ন হাম্বল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
"أتيت النبي  فدخلت عليه ولم أسلم فقال النبي : «ارجع فقل السلام عليكم أأدخل!» رواه أبو داود وقال الترمذي: حديث حسن.
 “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে সালাম না দিয়ে তার নিকট প্রবেশ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বললেন, ফিরে যাও! এবং বল, ‘আসসালামু আলাইকুম’ আমি কি প্রবেশ করব”? বর্ণনায় আবু-দাউদ এবং তিরমিযী, ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান। 
যখন কোন ব্যক্তি অন্য কোনো নামে তাকে না চিনে তখন যে নামে মানুষ তাকে চিনে সে নামে নিজের পরিচয় তুলে ধরাতে কোন অসুবিধা নাই। যদিও তাতে নিজেকে এক প্রকার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন- সে তার উপাধি দ্বারা পরিচয় তুলে ধরল এবং বলল, আমি মুফতি অমুক, অথবা অমুক বিচারক অথবা শেখ অমুক ইত্যাদি বিনয় সম্বলিত শব্দ উল্লেখ করা। এতে কোনো ক্ষতি নাই। প্রমাণ: 
উম্মে হানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তার নাম ফাখেতা, কেউ কেউ বলেন, তার নাম ফাতেমা, আবার কেউ কেউ বলেন, তার নাম হিন্দ। তিনি বলেন, 
أتيت النبي  وهو يغتسل وفاطمة تستره فقال: «من هذه» قلت أنا أم هانئ.
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে দেখি তিনি গোসল করছেন এবং ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ তাকে ডেকে রাখছেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করে বলেন, কে সে? আমি বললাম, আমি উম্মে হানি। [বুখারি মুসলিম]
আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
«خرجت ليلة من الليالي فإذا رسول الله  يمشي وحده فجعلت أمشي في ظل القمر فالتفت فرآني فقال: من هذا، فقلت: أبو ذر» متفق عليه.
“এক রাত আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পেলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ চাদের আলোতে একা একা হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর সে ঘুরে দাঁড়ালে আমাকে দেখল এবং বলল, লোকটি কে? আমি বললাম, আমি আবু যর”। [বুখারি মুসলিম ]


যার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব এবং যার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়

এমন জামাতকে সালাম দেয়া মাকরূহ যারা ওজু-গোসল করছে, খাচ্ছে, যুদ্ধ করছে, কুরআন তিলাওয়াত বা যিকির করছে, তালবীয়া পাঠ করছে, হাদিস পড়াচ্ছে, ভাষণ দিচ্ছে, ওয়াজ করছে, ওয়াজ-নছীহত বা ভাষণ শুনছে, ফিকহের আলোচনা করছে, পাঠদান করছে, গবেষণা করছে, আযান দিচ্ছে, সালাত আদায় করছে, পেশাব-পায়খানায় লিপ্ত আছে, স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশা করছে, বিচার কাজে লিপ্ত আছে ইত্যাদি। যদি কোনো ব্যক্তি এমন সময় সালাম দেয়, যখন সালাম দেয়া মাকরূহ, তার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। আল্লামা খালওয়াতী রহ. যাদের সালাম দেয়া মাকরূহ তাদের কথা কাব্য আকারে একত্র করে আলোচনা করেন। তিনি বলেন,
رد السلام واجب إلا على
من في الصلاة أو بأكل شغلاً

أو شرب أو قراءة أو أدعيه

أو ذكر أو في خطبة أو تلبية

أو في قضاء حاجة الإنسان

أو في إقامة أو الأذان

أو سلم الطفل أو السكران

أو شابة يخشى بها افتتان

أو فاسق أو ناعس أو نائم

أو حالة الجماع أو تحاكم

أو كان في الحمام أو مجنونًا

فهي اثنتان قبلها عشرونًا
“সালামের উত্তর দেয়া সবার উপর ওয়াজিব। তবে যে ব্যক্তি সালাত আদায়ে ব্যস্ত অথবা খাওয়া বা পান করায় ব্যস্ত তার জন্য সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। অনুরূপভাবে দো‘আ, যিকির, খুতবা, তালবীয়া পাঠ, পায়খানা-পেশাবে লিপ্ত ব্যক্তির উপর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। আযান ইকামত দেয়া অবস্থায় সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। বাচ্চাদের জন্য সালামের উত্তর দেয়া, মাতাল, যুবতী নারী যার সালামের উত্তর দেয়াতে ফিতনার আশংকা থাকে তার সালামের উত্তর ও ফাসেকের সালামের উত্তর দেয়া, ওয়াজিব নয়। তন্দ্রাচ্ছন্ন, ঘুমন্ত, স্ত্রীর সাথে সহবাস অবস্থায়, বিচার কার্য পরিচালনার সময় [সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়] অথবা যখন কোন ব্যক্তি গোসল খানায় থাকে বা মাতাল থাকে [তখনও সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়] এখানে দুটির কথা আলোচনা হল, এর পূর্বে বিশটি। 
এখানে যতগুলো লোককে সালাম দেয়া মাকরূহ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, অধিকাংশের বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর যাদের বিষয়ে কোন হাদিস পাওয়া যায় না, তাদেরকে হাদিসের উপর ক্বিয়াস করে মাকরূহ বলা হয়েছে। যখন ওয়াজিব না থাকে, তখন মুস্তাহাব বা বৈধ হওয়া বাকী থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্তর দেয়াও মাকরূহ হয়ে যায়। যেমন যে লোকটি পেশাব-পায়খানা বা স্ত্রীর সাথে লিপ্ত এ ধরনের ক্ষেত্রে সালামের উত্তর দেয়া মাকরূহ হয়ে যায় ।

সালামের উপকারিতা ও ফলাফল

এক- মনে রাখবে সালাম দেয়ার উপকারিতা অনেক। তার মধ্যে একটি উপকার, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর সুন্নত পালন করা। 

দুই- যারা বলেন, প্রথমে সালাম দেয়া ওয়াজিব, তাদের কথা অনুযায়ী হারাম থেকে রেহাই পাওয়া। যদিও বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য মত হল, সালাম দেয়া ওয়াজিব না হওয়া। 

তিন-  কৃপণতা থেকে মুক্ত হওয়া। 

হাদিসে বর্ণিত, কৃপণ জান্নাতে আদনে প্রবেশ করবে না। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 
أي داء أدوى من البخل، والبخيل بغيض إلى الله، بغيض إلى الناس، بعيد من الجنة، حبيب إلى الشيطان، قريب إلى النيران، والجنة دار الأسخياء .
“কৃপণতার চেয়ে আর কোন ব্যাধি এত বেশি মারাত্মক? কৃপণ আল্লাহর নিকট ঘৃণিত, মানুষের নিকট ঘৃণিত, জান্নাত হতে বিতাড়িত, শয়তানের বন্ধু এবং জাহান্নামের নিকটে অবস্থানকারী। আর জান্নাত হল, দানশীলদের ঠিকানা” । 

চার- যে সব কারণগুলো মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, সালাম একটি অন্যতম কারণ। 

যেমন- আব্দুল্লাহ ইবন সালামের হাদিসে বর্ণিত। এ ছাড়াও সালাম জান্নাতে প্রবেশকে ওয়াজিব করে। যেমন-আবু সারাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর হাদিস; তিনি বলেন,
يا رسول الله أخبرني بشيء يوجب الجنة، قال: «طيب الكلام، وبذل السلام، وإطعام الطعام»
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে জিজ্ঞাস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তুমি আমাকে এমন আমল বাতলেয়ে দাও, যা জান্নাতে প্রবেশকে ওয়াজিব করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “মিষ্টি কথা, সালামের প্রসার এবং মানুষকে খানা খাওয়ানো। বর্ণনায় তাবরানী, ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহতে এবং হাকেম তার সহীহতে।

পাঁচ- সালামের প্রসার করা, মাগফিরাত ও ক্ষমা লাভ করার কারণ। 

আল্লামা তাবরানী আবু সারহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বিশুদ্ধ সনদে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, 
"قلت يا رسول الله دلني على عمل يدخلني الجنة، قال: «إن من موجبات المغفرة بذل السلام وحسن الكلام».
“আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল বাতলেয়ে দাও, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ক্ষমা লাভের কারণ হল, সালামের প্রসার ও সুন্দর কথা”।

ছয়. সালাম মুসলিম ভাইদের মধ্যে পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি করে। যেমন উপরে উল্লেখিত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর হাদিস ও অন্যান্য হাদিসে বিষয়টি বর্ণিত( )। আর একটি কথা মনে রাখবে মহব্বতের শান অধিক মহান, তার মর্তবা অনেক বড়। আর ঊর্ধ্ব জগত ও নিম্ন জগতের ভিত্তিই হল, মহব্বত। 
সমগ্র জগতের উত্থান-পতন, নড়-চড়, সবই মহব্বত থেকেই সৃষ্ট। এ কারণেই মহব্বতের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস অনেক। এ ছাড়াও মহব্বত ঈমানের ঝাণ্ডা হওয়াটা তার গুরুত্ব বুঝার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ্ তা‘আলাই ইহসানের অভিভাবক। 

সাত- সালাম দেয়া দ্বারা অপর মুসলিম ভাইয়ের অধিকার আদায় করা হয়। 

যেমন- সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 
«حق المسلم على المسلم ست، قيل وما هن يا رسول الله؟ قال: إذا لقيته فسلم عليه، وإذا دعاك فأجبه، وإذا استنصحك فانصح له، وإذا عطس فحمد الله فشمته، وإذا مرض فعده، وإذا مات فاتبعه».
“একজন মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের হক ছয়টি। জিজ্ঞাসা করা হল হে আল্লাহর রাসূল! সে গুলো কি? তিনি বললেন, তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলে, সালাম দেবে। তোমাকে দাওয়াত দিলে, তাতে শরিক হবে, উপদেশ চাইলে,  উপদেশ দেবে। হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বললে, তার উত্তর দেবে। অসুস্থ হলে, তাকে দেখতে যাবে এবং মারা গেলে, তার জানাযায় শরিক হবে”। 

আট- আল্লাহর নিকট উত্তম ব্যক্তি হওয়া। 

প্রমাণ: ইমাম আবু-দাউদ ও ইমাম তিরমিযী উভয় আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 
«إن أولى الناس بالله من بدأهم بالسلام» ولفظ الترمذي: "قيل يا رسول الله الرجلان يلتقيان أيهما يبدأ بالسلام؟ قال: أولاهما بالله تعالى.
“আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি, যে মানুষকে আগে সালাম দেয়”। 

তিরমিযীর শব্দ নিম্নরূপ: 
জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দুইজন লোক পরস্পর পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ হলে কে আগে সালাম দেবে?  রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “তাদের দুজনের মধ্যে যে আল্লাহর নিকট অধিক উত্তম”। 

নয়- ফযিলত গ্রহণ করা। 

প্রমাণ: ইমাম বাযযায ও ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ কিতাবে জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করে বলেন,
«يسلم الراكب على الماشي، والماشي على القاعد، والماشيان أيهما بدأ فهو أفضل».
“আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে, আর পায়ে হাটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। আর উভয় ব্যক্তি যখন পায়ে হাটা হবে, তখন যে প্রথমে সালাম দেবে সেই উত্তম”। 

আল্লামা তাবরানী কবীর গ্রন্থে এবং স্বীয় কিতাব আওসাতে সহীহ সনদে আগার হতে এবং তিনি মুযাইনা গোত্রের আগার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, 
«كان رسول الله  أمر لي بجريب من تمر عند رجل من الأنصار فمطلني به، فكلمت فيه رسول الله ، فقال: أغد يا أبا بكر فخذ له من تمره، فوعدني أبو بكر المسجد إذا صلينا الصبح، فوجدته حيث وعدني فانطلقنا، فكلما رأى أبا بكر رجل من بعيد سلم عليه، فقال أبو بكر رضي الله عنه أما ترى ما يصيب القوم عليك من الفضل لا يسبقك إلى السلام أحد، فكنا إذا طلع الرجل من بعيد بادرناه، بالسلام قبل أن يسلم علينا».
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে একজন আনসারী লোক থেকে এক থলে খেজুর গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সে খেজুর দেয়ার ক্ষেত্রে আমার সাথে টালবাহানা করে। বিষয়টি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে অবহিত করি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’কে ডেকে বললেন, হে আবু বকর! তুমি প্রত্যুষে তার কাছে যাও এবং তার জন্য খেজুর সংগ্রহ কর। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ আমাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন ফজরের সালাতের পর মসজিদে উপস্থিত থাকার। পরদিন আমি তাকে সেখানেই পেলাম, যেখানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমি তার সাথে হাটতে হাটতে দেখলাম, যখন তিনি কোনো লোককে অনেক দূর থেকে দেখতেন, তখনি তাকে সালাম দিতেন। আমাকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বললেন, তুমি কি দেখছ না? লোকেরা কিভাবে তোমার উপর ফযিলত লাভ করে ফেলছে, কেউ যেন তোমাকে আগে সালাম দিতে না পারে, সে দিকে লক্ষ রাখবে। তারপর থেকে যখন কোনো লোককে অনেক দূর থেকে দেখতাম, তখন তাকে আমরা অনেক দূর থেকে তার সালাম দেয়ার পূর্বেই সালাম দিয়ে দিতাম”। 

দশ- আল্লাহর সালাম নামটি প্রচার করার ফযিলত লাভ এবং তা প্রচার করার মাধ্যমে বিশেষ মর্তবা অর্জন করা:

 আল্লামা বাযযার ও তাবরানী উভয়ে শক্তিশালী সনদে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 
«السلام اسم من أسماء الله تعالى وضعه في الأرض فأفشوه بينكم، فإن الرجل المسلم إذا مر بقوم فسلم عليهم فردوا عليه كان له عليهم فضل درجة بتذكيره إياهم السلام، فإن لم يردوا عليه رد عليه من هو خير منهم».
“সালাম আল্লাহ্ তা‘আলার নামসমূহ হতে একটি অন্যতম নাম। আল্লাহ্ তা‘আলা যমিনে এ নামটিকে ছেড়ে দিয়েছেন; তোমরা তোমাদের মধ্যে নামটির প্রসার ঘটাও। যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে এবং তাদের সালাম দেবে, তাহলে তোমরা তার সালামের উত্তর দাও। তার জন্য ঐ সব লোকদের উপর একটি মর্তবা অবশ্যই থাকবে। কারণ, সে লোকদের সালামটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। যদি তারা তার সালামের উত্তর না দেয়, তার সালামের উত্তর এমন একজন দেবে,  যে তাদের চেয়ে অধিক উত্তম”।  

এগার: বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত নেকীসমূহ লাভে ধন্য হওয়া:

আবু-দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী এবং বাইহাকী ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, 
«جاء رجل إلى النبي  فقال: السلام عليكم، فرد عليه ثم جلس، فقال النبي  عشر، ثم جاء آخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله، فرد فجلس فقال عشرون، ثم جاء آخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله وبركاته، فرد فجلس فقال ثلاثون» ورواه أبو داود عن معاذ مرفوعًا بنحوه وزاده "ثم أتى آخر فقال: «السلام عليكم ورحمة الله وبركاته ومغفرته»، فقال: أربعون هكذا تكون الفضائل.
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে বললেন, السلام عليكم، রাসূল তার সালামের উত্তর দিল। তারপর লোকটি বসে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, দশ [অর্থাৎ দশ নেকী]। কিছুক্ষণ পর অপর একজন লোক এসে বলল, السلام عليكم ورحمة الله، রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিল এবং লোকটি বসে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, বিশ। তারপর আরও একজন লোক উপস্থিত হল এবং বলল, السلام عليكم ورحمة الله وبركاته،   রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিলে এবং লোকটি বসে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ত্রিশ। ইমাম আবু-দাউদ হাদিসটিকে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বৃদ্ধি করেন, তারপর আরও একজন লোক উপস্থিত হল, তখন সে বলল, السلام عليكم ورحمة الله وبركاته ومغفرته، রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, চল্লিশ। 
অনুরূপভাবেই দেয়া হয়ে থাকে সালামের ফযিলত। 

বার- নিরাপত্তা-শান্তি অর্জন করা: 

যেমন- বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 
«أفشوا السلام تسلموا» 
“তোমরা সালামকে প্রসার কর, নিরাপদ থাকবে”। 
অর্থাৎ দুনিয়াতে তোমরা কৃপণতা ও গুনাহ হতে নিরাপদ থাকবে। অথবা তার চেয়েও ব্যাপক অর্থ: অর্থাৎ, দুনিয়াতে যাবতীয় সব ধরনের আপদ-বিপদ হতে নিরাপদ থাকবে। আর আখিরাতের ভয়াবহ বিপদ থেকে মুক্তি পাবে। 

তের: সালামের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ নিরাপদে অথবা আল্লাহর নামের যিকিরের সাথে অথবা আল্লাহর নাম সালামের সাথে একত্র হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।    

চৌদ্দ: সালাম তোমার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি খালেস ভালোবাসাকে জাগ্রত করে: 

আল্লামা তাবরানী তাঁর আওসাত গ্রন্থে শাইবা আল-হাজাবী, তিনি তার চাচা থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, 
«ثلاث يصفين لك ود أخيك: تسلم عليه إذا لقيته، وتوسع له في المجلس، وتدعوه بأحب أسمائه إليه».
 “তিনটি জিনিস তোমার জন্য তোমার মুসলিম ভাইয়ের মহব্বতকে খাটি করে। এক- তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলে, সালাম দেবে। দুই- কোনো মজলিসে তাকে জায়গা করে দেবে। তিন- তার নিকট যে নামটি প্রিয়, সে নামে তাকে ডাকবে” । 

পনের: ইসলামের ফযিলত লাভ করা এবং সবার চেয়ে উত্তম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা: 
যেমন, পূর্বে উল্লেখিত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত হাদিস । 

ষোল- আমাদের পিতা আদম আ. এর সুন্নতকে পূনরুজ্জীবিত করা:

ইমাম বুখারি ও মুসলিম আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 
«لما خلق الله آدم قال: اذهب فسلم على أولئك، نفر من الملائكة جلوس فاستمع ما يحيونك، فإنها تحيتك وتحية ذريتك، فقال: السلام عليكم، فقال: السلام عليك ورحمة الله فزادوه ورحمة الله».
“আল্লাহ্ তা‘আলা যখন আদম আ: কে সৃষ্টি করার পর তাকে নির্দেশ দেন, যাও ঐ সব ফেরেশতাদের সালাম দাও যারা বসে আছে। তারপর দেখ তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়। তারা যে উত্তর দেবে তা হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের অভিবাদন ও সম্ভাষণ। তারপর তিনি ফেরেশতাদের নিকট গিয়ে বললেন, السلام عليكم، তার এ কথার উত্তরে তারা বলল, السلام عليك ورحمة الله তারা ورحمة الله শব্দটিকে বাড়াল”। 

আল্লামা মুজাহিদ রহ. বলেন, 
كان عبد الله بن عمر رضي الله عنهما يأخذ بيدي فيخرج إلى السوق يقول إني لأخرج وما لي حاجة إلا لأسلم ويسلم علي، فأعطي واحدة واحدة وآخذ عشرًا يا مجاهد إن السلام من أسماء الله تعالى، فمن أكثر السلام أكثر ذكر الله تعالى.
“আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ আমার হাত চেপে ধরত, তারপর আমাকে নিয়ে সে বাজারে বের হত এবং বলত, বাজারে আমার কোন প্রয়োজন নাই, তবে আমি বাজারে বের হলাম যাতে বাজারের লোকদের সালাম দিতে পারি। আমরা একজনকে একবার সালাম দিতাম এবং দশটি করে নেকী কামাই করতাম। তিনি বলতেন, হে মুজাহিদ! সালাম আল্লাহর নামসমূহ হতে একটি নাম। যে ব্যক্তি বেশি বেশি সালাম দেয়, সে আল্লাহর যিকির বেশি করল”।  

সতের: জান্নাতিদের সম্ভাষণের সাথে একাত্মতা: 

কারণ, যারা জান্নাতে যাবে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে করীমে এরশাদ করেন।
﴿وَتَحِيَّتُهُمۡ فِيهَا سَلَٰمَٞۚ ١٠ ﴾ [يونس: ١٠]  
 “আর তাতে তাদের অভিবাদন হল ‘সালাম’। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০] 
আল্লাহ্ তা‘আলাই পুরস্কারের অভিভাবক।