নি:সন্দেহে বলা যায়, আল্লাহর সাথে কথোপকথন করা, আল্লাহর কাছে বিনয় প্রকাশ করা, আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং আল্লাহর কাছে বার বার ফিরে যাওয়া দ্বারা আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক সুদৃঢ় হয় এবং বন্ধন হয় অটুট। ফলে সালাতে খুশু বৃদ্ধি পায়। আর দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে এ ইবাদতটি করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন,
﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ ٥٥﴾ [الاعراف: ٥٤]
“তোমরা তোমাদের রবকে ডাক অনুনয় বিনয় করে ও চুপিসারে।[100]”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من لم يسأل الله يغضب عليه»
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট না চায়, আল্লাহ তার উপর ক্ষুব্ধ হন”।[101]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে নিদিষ্ট কিছু স্থানে দো‘আ করার বিষয়টি প্রমাণিত, যেমন, সেজদার মধ্যে দো‘আ করা, দুই সেজদার মাঝে দো‘আ করা, তাশাহ্হুদের পরে দো‘আ করা। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দো‘আর স্থান হল, সেজদা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد فأكثروا الدعاء»
“কোন বান্দা সর্বাধিক আল্লাহর নিকটে অবস্থান করে, যখন সে সেজদারত থাকে। অতএব, তোমরা সেজদায় বেশি বেশি দো‘আ কর”।[102]
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল, সেজদা। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«...أما السجود فاجتهدوا في الدعاء فَقَمَن - أي حريّ وجدير - أن يُستجاب لكم»
“সেজদায় তোমরা বেশি বেশি দো‘আ কর। কেননা, অবশ্যই তা তোমাদের দো‘আ কবুল করার সবচেয়ে উপযোগী”।[103]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদায় যে সব দো‘আ পড়তেন, তার মধ্য হতে কয়েকটি দো‘আ যেমন,
«اللهم اغفر لي ذنبي دِقَّه وجِلَّه ، وأوله وآخره ، وعلانيته وسره »
“হে আল্লাহ আপনি আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন, সূক্ষ্ম গুনাহ ও বড় গুনাহ, প্রথম গুনাহ ও শেষ গুনাহ এবং প্রকাশ্য গুনাহ এবং গোপন গুনাহ।[104]”
অনুরূপভাবে আরও বর্ণিত দো‘আ,
«اللهم اغفر لي ما أسررت وما أعلنت»
“হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় সব গুনাহ ক্ষমা করে দিন।[105]
আর দুই সেজদার মাঝখানে পঠিত দো‘আ খুশুর ১১ তম উপায় বর্ণনায় অতিবাহিত হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহ্হুদের পর যে দো‘আ পড়তেন, তন্মধ্যে আমরা যা জেনেছি, তা হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন তাশাহ্হুদ পড়া হতে ফারেগ হতেন, সে যেন আল্লাহর নিকট চারটি বস্তু হতে আশ্রয় কামনা করে। জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, হায়াত ও মওতের ফিতনা হতে এবং দাজ্জালের ফিতনা হতে। তিনি আরও বলতেন,
«اللهم إني أعوذ بك من شر ما عملت ومن شر ما لم أعمل » «اللهم حاسبني حسابا يسيرا »
“হে আল্লাহ! আমি আমার কর্ম যা আমি করেছি তার অনিষ্টতা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং আমি যা করিনি তার অনিষ্টতা থেকেও আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার থেকে সহজ হিসাব নিন”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে, এ কথা বলতে শেখান-
«اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ، ولا يغفر الذنوب إلا أنت ، فاغفر لي مغفرة من عندك، وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم »
“হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশি জুলুম করেছি আর আপনি ছাড়া কেউই আমার গুনাহসমূহ মাফ করতে পারে না। সুতরাং, আপনি আপনার নিজ পক্ষ থেকে আমাকে পূর্ণরূপে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি রহমত করুন। নিশ্চয় আপনিই ক্ষমাকারী ও দয়ালু”।
তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনেন,
«اللهم إني أسألك يا الله الأحد الصمد الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد أن تغفر لي ذنوبي إنك أنت الغفور الرحيم فقال صلى الله عليه وسلم : قد غُفر له ، قد غُفر له»
“হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট চাই। হে আল্লাহ আপনি এক, কারো মুখাপেক্ষী নন, যিনি কাউকে জন্ম দেনটি এবং নিজেও কারো থেকে জন্ম গ্রহণ করেন নি। আর কেউ তার সমকক্ষ নয়। হে আল্লাহ, আমি চাই যেন আপনি আমার গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দিন, নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। এ কথগুলো শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল।”
অপর এক ব্যক্তিকে তিনি তাশাহ্হুদে এ কথাগুলো বলতে শুনেন-
«اللهم إني أسألك بأن لك الحمد، لا إله إلا أنت وحدك لا شريك لك المنان يا بديع السموات والأرض يا ذا الجلال والإكرام يا حي يا قيوم إني أسألك الجنة وأعوذ بك من النار»
অর্থ, “হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি। যাবতীয় প্রশংসা আপনারই। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি একক। আপনার কোন শরীক নেই। আপনি মান্নান, (দয়া প্রদর্শনকারী) হে আসমান ও যমিনের স্রষ্টা। হে ইজ্জত ও সম্মানের অধিকারী। হে চিরঞ্জীব, হে সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার নিকট জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি”।
এ কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, তোমরা কি জান লোকটি কি বলে দো‘আ করেছে? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ সত্তার কসম করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, লোকটি ইসমে আজম (মহৎ নাম) দ্বারা আল্লাহর কাছে চেয়েছে, যার দ্বারা দো‘আ করা হলে আল্লাহ উত্তর দেন, আর তার দ্বারা কোন কিছু চাওয়া হলে, তিনি তা দান করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহ্হুদ ও তাসলীমের শেষে যা বলতেন তা হচ্ছে,
« اللهم اغفر لي ما قدّمت وما أخّرت وما أسررت وما أعلنت وما أسرفت وما أنت أعلم به مني أنت المقدِّم وأنت المؤخِّر ، لا إله إلا أنت »
“হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, যা আমি পূর্বে করেছি এবং যা আমি পরবর্তীতে করেছি। আরও ক্ষমা করুন, যা আমি প্রকাশ্যে করেছি এবং যা আমি গোপনে করেছি। আর যা সম্পর্কে আপনি আমার থেকে অধিক অবগত। আপনিই প্রথম এবং আপনিই শেষ। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।
এসব দো‘আ ও আরও অন্যান্য দো‘আ আল্লামা আলবানী রহ. এর সীফাতুস সালাত, পৃ: ১৬৩ কিতাব হতে নেয়া হয়েছে। এ দো‘আগুলো মুখস্ত করার কারণে, ইমামের পিছনে চুপ করে বসে থাকার যে সমস্যা তার সমাধান হয়। অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি ইমামের পিছনে সালাত আদায় করে, যদি সে তাশাহ্হুদ পড়া শেষ করে, সময় পায় তাহলে এ দো‘আগুলো পড়বে। কারণ, অনেক লোককে দেখা যায় সে চুপ করে বসে থাকে কি পড়বে তা জানে না।