আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يزال الله عز وجل مقبلا على العبد وهو في صلاته ما لم يلتفت ، فإذا التفت انصرف عنه »
“যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা সালাতে এদিক সেদিক তাকাবে না, আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দার দিক চেয়ে থাকেন। অতঃপর যখন সে এদিক সেদিক তাকায় তখন আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন”।[130]
সালাতে এদিক সেদিক তাকানো দুই ধরনের হয়ে থাকে।
এক. অন্তরকে মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর দিকে মনোনিবেশ করা।
দুই. চোখের দ্বারা এদিক সেদিক তাকানো। উভয় প্রকারের তাকানোই নিষিদ্ধ এবং এতে সালাতের সাওয়াব কমে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাতে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন,
«اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد»
এটি একটি ছিনতাই, শয়তান বান্দার সালাত থেকে তা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।[131] যে ব্যক্তি স্বীয় সালাতে চোখ দিয়ে ও অন্তর দিয়ে এদিক সেদিক তাকায় তার দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির মত, যাকে বাদশাহ তার দরবারে ডাকলে সে বাদশাহর ডাকে সাড়া দেয় এবং বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হয়। আর যখন বাদশাহ তার সাথে কথা বলছে এবং তাকে সম্বোধন করছে, তখন সে বাদশাহর কথা না শোনে ডান ও বাম দিক তাকায়। বাদশাহর কথার প্রতি কোন মনোযোগ না দেয়াতে সে বাদশাহ কি বলছে, তা বুঝতে পারছে না। কারণ, তার অন্তর উপস্থিত নেই। এ ধরনের লোকের সাথে বাদশাহর কি আচরণ করবে বলে তোমার ধারণা? এ ব্যক্তির ভাগ্যে এটিই হওয়া উচিত যে, সে আল্লাহর দরবার হতে, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যাবে এবং আল্লাহর দৃষ্টি হতে সে দূরে সরে যাবে। এ ধরনের মুসল্লি কখনও সে মুসল্লির সমান হবে না, যে ব্যক্তি সালাতে আল্লাহর সম্মুখে নিজেকে পেশকারী, যে ব্যক্তি অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্বকে অনুভব করে, যার সামনে দাঁড়াল তার প্রতি সজাগ থাকে, যার ফলে তার অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভরে যায় এবং আল্লাহর জন্য তার মাথা ঝুঁকে পড়ে; আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি মনোযোগ দেয়া বা কোনো দিকে তাকানো থেকে লজ্জা করে। তাদের উভয়ের সালাত এক রকম হতে পারে না। তাদের উভয়ের সালাতের মধ্যে তেমন পার্থক্য যেমনটি বলেছেন হাস্সান ইবন আতিইয়া, “দুই ব্যক্তি একই সালাত আদায় করছে, অথচ তাদের উভয়ের সালাতের মধ্যে ব্যবধান, আসমান ও জমিনের মধ্যের ব্যবধানের সমান। কারণ, তাদের একজন অন্তর দিয়ে আল্লাহর সমীপে নিজেকে পেশ করেছে, আর অপর ব্যক্তি অমনোযোগী ও গাফেল।[132]”
তবে প্রয়োজনের সময়, ‘তাকানো’তে কোনো অসুবিধা নেই। ইমাম আবু দাউদ সাহাল ইবনুল হানযালিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
(ثُوَّبَ بالصلاة - صلاة الصبح - فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي وهو يلتفت إلى الشعب).
“সালাতের ঘোষণা দেওয়া হলো, অর্থাৎ ফজরের সালাতের ঘোষণা দেয়া হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন এবং তিনি পাহাড়ের চুড়ার দিকে তাকাচ্ছিলেন”। ইমাম আবু দাউদ বলেন, (وكان أرسل فارسا من الليل إلى الشعب يحرس) “রাতে তিনি অশ্বারোহীকে পাহাড়ের চুড়ায় পাহারা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন”। (অর্থাৎ তিনি সেটার অবস্থা জানার জন্যই তাকাচ্ছিলেন)। আর অনুরূপ হচ্ছে, উমামা বিনতে আবিল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে সালাতে বহন করা, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার জন্য সালাত-রত অবস্থায় দরজা খোলা, মিম্বার থেকে নেমে নেমে সাহাবীদের সালাত শিক্ষা দেয়া, সালাতুল কুসুফে আগে পিছে যাওয়া, শয়তানকে বেধে রাখা ও তার গলা চেপে ধরা যখন সে সালাত ভেঙ্গে দিতে চেষ্টা করে, সালাতে সাপ ও বিচ্ছুকে হত্যা করা, সালাতের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে প্রতিহত করা ও তার সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া এবং নারীদেরকে সালাতের মধ্যে হাতের তালি দেয়ার নির্দেশ প্রদান এবং সালাতের মধ্যে কোনো প্রয়োজনীয় ইঙ্গিত প্রদান করা, ইত্যাদি কাজগুলো, যা প্রয়োজনের সময় করার অনুমতি রয়েছে। আর যদি বিনা প্রয়োজনে সালাতে এ ধরনের কোন কাজ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা হবে সালাতে অনর্থক ও নিষিদ্ধ কর্ম করা যেগুলো সালাতের মনোযোগকে নষ্ট করে এবং খুশর পরিপন্থী হয়।[133]
আকাশের দিক তাকানো হতে বিরত থাকা:
হাদিসে আকাশের দিক তাকানো হতে নিষেধ করেছেন এবং যারা সালাতে আকাশের দিক তাকায় তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا كان أحدكم في الصلاة فلا يرفع بصره إلى السماء ، أن يلتمع بصره »
“যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে থাকে, সে যেন আকাশের দিক না তাকায়; যাতে তার চোখের আরো ছিনিয়ে নেওয়া না হয়।”[134] অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما بال أقوام يرفعون أبصارهم إلى السماء في صلاتهم»
“তাদের কি হয়েছে, যারা সালাতে তাদের চোখকে আকাশের দিক উঠায়?” অপর এক বর্ণনায়, “সালাতে দো‘আ করার সময় তাদের চক্ষুকে আসমানের দিক উঠানো হতে নিষেধ করা হয়”।[135] এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত কঠিন হুমকি দেন, এমনকি তিনি বলেন,
«لينتهنّ عن ذلك أو لتخطفن أبصارهم »
“তারা হয়, আকাশের দিক তাকানো থেকে বিরত থাকবে, না হয় তাদের চোখ ছিনিয়ে নেওয়া হবে”।[136]