কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
(كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا صلى طأطأ رأسه و رمى ببصره نحو الأرض)
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথা ঝুঁকাতেন এবং চোখ দ্বারা যমিনের দিক দৃষ্টি দিতেন”।[66]
অপর এক হাদিসে বর্ণিত,
(و لما دخل الكعبة ما خلف بصره موضع سجوده حتى خرج عنها).
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা‘বা ঘরে প্রবেশ করেন, বের না হওয়া পর্যন্ত তার দৃষ্টি সেজদার স্থান হতে অন্য দিকে ফেরান নি”।[67]
আর যখন তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসবেন, তখন ইশারার আঙ্গুল যেটি নাড়া-চাড়া করছেন, তার দিকে তাকাবেন। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,
(أنه كان إذا جلس للتشهد يشير بأصبعه التي تلي الإبهام إلى القبلة ويرمي ببصره إليها)
“যখন তিনি তাশাহ্হুদের জন্য বসতেন, তখন তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের- সাথে মিলিত আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং চোখ দ্বারা তার দিক দৃষ্টি দিতেন”।[68]
মাসআলা:
এখানে একটি প্রশ্ন কতক মুসল্লির অন্তরে ঘুরপাক খাচ্ছে, আর তা হল, সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ রাখার বিধান কি, বিশেষ করে, যখন কোনো মানুষ চোখ বন্ধ করে রাখে, তখন সে সালাতে অধিক খুশু ও মনোযোগ অনুভব করে তখন চোখ বন্ধ করে রাখা যাবে কিনা?
উত্তর: একটু আগেই অতিবাহিত হয়েছে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নিয়মপদ্ধতির পরিপন্থী। কারণ, চোখ বন্ধ করা দ্বারা সেজদা স্থান ও আঙ্গুলের দিক তাকানোর সুন্নাত ছুটে যায়। তবে এখানে বিষয়টিতে বিশ্লেষণ আছে। আমরা ময়দানকে অশ্বারোহীর জন্য ছেড়ে দিলাম। আবু আব্দুল্লাহ ইবনুল কাইউম রহ. বিষয়টি বর্ণনা করেন এবং স্পষ্ট করেন, তিনি বলেন, “সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত বা আদর্শ নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহ্হুদ পড়ার সময় দো‘আতে চোখ দ্বারা আঙ্গুলের দিক দৃষ্টি দিতেন। তার দৃষ্টি তার ইশারার বাইরে যেত না। এছাড়াও সালাতুল কুছুফে (সূর্যগ্রহণের সালাতে) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত দেখেন, তখন তিনি আঙ্গুরের থোকা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ান। অনুরূপভাবে জাহান্নাম দেখা, জাহান্নামে বিড়ালকে কষ্টদানকারীকে দেখা এবং বাঁকা লাঠিধারীকে দেখা (যে লাঠির মাধ্যমে মানুষের সম্পদ নিয়ে নিত)। অনুরূপভাবে, রাসূল কর্তৃক তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জন্তুকে অতিক্রম করা থেকে বাধা প্রদান, অনুরূপভাবে ছেলে শিশু মেয়ে শিশুকে সামনে দিয়ে গমন করতে বাধা প্রদান। দু’ কন্যা সন্তানের মাঝে বাধা দেওয়া। অনুরূপভাবে, সালাতের মধ্যে থাকা অবস্থায় এক লোক তাকে সালাম দিলে, ইশারা করে, তার সালামের উত্তর দেয়া। কারণ, তিনি তো শুধু যাকে দেখেন তার প্রতিই ইশারা করেন। অনুরূপভাবে, সালাতের মধ্যে শয়তান সামনে এলে, তিনি তাকে ধরে গলা টিপে দেন। আর এটি তো ছিল তখনই, যখন তিনি তাকে চোখে দেখেন। এ সব উল্লেখিত হাদিস এবং এ ছাড়াও আরও অন্যান্য হাদিসসমূহ প্রমাণ করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে রাখতেন না।
তবে সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ রাখা মাকরূহ হওয়ার বিষয়ে ফিকাহ-বিদদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইমাম আহমদ ও তার সঙ্গীরা বলেন, মাকরূহ। তারা বলেন, এটি ইয়াহূদীদের কর্ম। অপর এক জামাত আলেম এটিকে মুবাহ বলেন, মাকরুহ বলেন না। তবে বিশুদ্ধ কথা হল, যদি চোখ খোলা রাখা দ্বারা সালাতে খুশুর বিঘ্ন না ঘটে তাহলে, চোখ খোলা রাখা উত্তম। আর যদি কিবলার দিক সাজ-সজ্জা, চাক-চিক্ক ও সৌন্দর্য ইত্যাদি থাকে, যা তার অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করে, আর তা থাকার কারণে, সালাতে খুশু অবলম্বন করার বিঘ্ন ঘটে, তাহলে চোখ বন্ধ রাখা কখনোই মাকরূহ হবে না। আর এ অবস্থার আলোকে চোখ বন্ধ রাখাকে মাকরুহ না বলে, মোস্তাহাব বলা, শরীয়তের মূলনীতি ও উদ্দেশ্যসমূহের অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহই ভালো জানেন।[69]
এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, সুন্নত হল, চোখ বন্ধ না রাখা। তবে যদি প্রয়োজন পড়ে অর্থাৎ খুশুতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজকে প্রতিহত করতে চোখ বন্ধ রাখে, তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই।