সুরা আলাম-নাশরাহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ
আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি? [সুরা আলাম-নাশরাহ: ১]
وَوَضَعْنَا عَنكَ وِزْرَكَ
আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা, [সুরা আলাম-নাশরাহ: ২]
الَّذِي أَنقَضَ ظَهْرَكَ
যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ। [সুরা আলাম-নাশরাহ: ৩]
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। [সুরা আলাম-নাশরাহ: ৪]
فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। [সুরা আলাম-নাশরাহ: ৫]
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। [সুরা আলাম-নাশরাহ: ৬]
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانصَبْ
অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন। [সুরা আলাম-নাশরাহ: ৭]
وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ
এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন। [সুরা আলাম-নাশরাহ: ৮]


নামকরণ : সূরার প্রথম দুটি শব্দকেই নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কাল : এই সূরাটি মক্কী সূরা এবং নবুয়তের এমন অবস্থায় অবতীর্ণ হয় যখন রাসূল (সা.)-এর বিরোধীতা মাত্র শুরু হয়। বিষয়বস্তুর সাথে সূরা আদ দুহার বেশ মিল রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে, সূরা আলাম নাশরাহ সূরা আদ দুহার পরেই নাযিল হয়।

বিষয়বস্তু : রাসূল (সা.)-কে শান্তনা দানই এই সূরার মূল বিষয়বস্তু। মুহাম্মদ (সা.) সুদীর্ঘকাল তাঁর সমাজে বসবাস করেছেন। মানুষের সঙ্গে তাঁর চমৎকার ব্যবহার, লেন-দেনে স্বচ্ছতা, আমানতদারিতা, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা, মানুষের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া, পরোপকারি মনোভাব ইত্যাদি সৎ গুণাবলীর কারণে তিনি ছিলেন তৎকালিন সমাজে সবার থেকে ব্যতিক্রম। তাঁর জাতির কাছে তিনি ছিলেন সর্বাধিক প্রিয় ও একান্ত আপনজন  এবং সবার আদরের আল-আমিন। কিন্তু নবুয়াতপ্রাপ্তির পর তিনি যখন মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান জানাতে থাকেন তখনই তাঁর বংশ ও সমাজের মানুষগুলো তাঁর দুশমন হয়ে যায়। তাঁর প্রতি পূর্বের সেই ভালোবাসা-ভক্তি-শ্রদ্ধা সব দূর হয়ে হিংসা-বিদ্বেষ শুরু হয়। লোকে আর তাঁর কথা শুনতে রাজি নয় বরং তাঁকে দেখলে শীষ দিতে থাকে, গালিগালাজ করতে থাকে। এমতাবস্থায় তিনি বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। এমনি সময়ে তাঁকে শান্তনা দিয়ে সূরা আদ দুহা ও আলাম নাশরাহ নাযিল হয়। বড় বড় তিনটি নেয়ামতের কথা স্মরণ করে দিয়ে আল্লাহ বলেন, এ অবস্থা কোন দীর্ঘস্থায়ী বিষয় নয়; সহসাই তা কেটে যাবে। তিনটি নেয়ামত হলো আল্লাহর দ্বীনের জন্য বক্ষকে প্রশস্ত (হৃদয়কে উন্মুক্ত) করে দেয়া, নবুয়তের পূর্বে সমাজের অনাচার-অবিচার, গোমরাহীর কারণে তিনি যে পেরেশানী অনুভব করতেন তা অপসারণ করে দেয়া ও তাঁর খ্যাতি বুলন্দ করে দেয়া। তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, বিরোধীতাকে পরোয়া না করে নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে গেলে শীঘ্রই সংকীর্ণতা দূর হয়ে তাঁর জন্য যমীন প্রশস্ত হয়ে যাবে। সূরা আদ দুহাতেও এমনিভাবে তাঁকে শান্তনা দিয়ে বলা হয়েছে পূর্বাবস্থা থেকে পরবর্তী অবস্থা তাঁর জন্য সব সময়ই কল্যাণকর হবে। কঠিন অবস্থা মোকাবেলার জন্য সূরার শেষে বেশি বেশি করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে আত্মনিয়োগ করা এবং আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভর করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।

ব্যাখ্যা : বক্ষদেশ উন্মুক্ত করে দেয়া বলতে এখানে দুটি অর্থ রয়েছে। এক. প্রকৃত সত্যগ্রহণের লক্ষ্যে হৃদয়-মন উন্মুক্ত করে দেয়া। রসূল (সা.) যে সময়ে নবুয়াতপ্রাপ্ত হন সে সময়ে সমাজের মানুষ শিরক-কুফর ও নানাবিধ কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল। নবুয়াতের মাধ্যমে সঠিক পথের দিশাদান আল্লাহরই অনুগ্রহ এবং সেই সত্যকে দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করার জন্য আল্লাহপাক তাঁর হৃদয়ে প্রশস্ততা দান করেছেন। এমন কথাই সূরা আনয়ামের ১২৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে-কাজেই যে ব্যক্তিকে আল্লাহ হেদায়াত দান করার সংকল্প করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। দ্বিতীয়ত, নবুয়াতের এ দায়িত্বপালন অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং নবুয়াতের এ ঘোষণাদান সমগ্র মানবগোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। স্বাভাবিকভায়ে ভয়-ভীতি ও জড়তা তাঁর মধ্যে কাজ করে। যেমন মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে যেতে বলা হলে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহতায়ালাকে বলেন, হে আমার রব! আমার ভয় হচ্ছে তারা আমাকে মিথ্যা বলবে এবং আমার বক্ষদেশ সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে-সূরা শুআরার ১২-১৩। তিনি আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করেন, হে আমার রব! আমার বক্ষদেশ আমার জন্য খুলে দাও এবং আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও-সূরা ত্বাহা ২৫-২৬। বক্ষদেশ উন্মুক্ত করে দেয়ার মাধ্যমে রাসূল (সা.) একদিকে যেমন প্রশান্তচিত্ত হয়ে গেলেন যে, মানবজাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও মুক্তি রয়েছে ইসলামের মাঝে; সাথে সাথে এর প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যে চ্যালেঞ্জ ও বিপদাপদ রয়েছে তা উপেক্ষা করার মত শক্তি-সাহস ও হিম্মত তিনি অন্তরে অনুভব করেন। তিনি সাহসিকতার সাথে গোটা আরবের বিরুদ্ধে একাকী দাঁড়িয়ে গেলেন। বক্ষ উন্মুক্ত করা প্রসঙ্গে অনেকে ছোটকালে তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করার কথাও উল্লেখ করেন। তবে প্রথমোক্ত ব্যাখ্যা বেশি মানানসই বলে মনে হয়।

এখানে ভারি বোঝা বলতে সমাজের মানুষের গুমরাহী ও পাপাচার এবং সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন যা তাঁকে বড় কাতর করে তুললেও এর সমাধান তাঁর জানা ছিল না, সেটাই বোঝানো হয়েছে। নবুয়াতের মাধ্যমে সমাধান জানিয়ে সেই ভারি বোঝা তাঁর ওপর থেকে অপসারণ করে তাঁকে স্বস্তি দান করা হয়েছে। ইসলামের মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান-এব্যাপারে তিনি ছিলেন দ্বিধাহীন ও দৃঢ়চিত্ত। দ্বীন প্রচারের কারণে তিনি হয়ে পড়েছিলেন সমাজে অপাংক্তেয়, মান-ইজ্জত-সম্মান সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন। এমনি অবস্থায় এই সূরায় বলা হয়েছেতোমার খ্যাতির কথা বুলন্দ করে দিয়েছি। এ সবই আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর নবীর প্রতি শান্তনা ও সুসংবাদ। সত্যিই সেদিন হাতেগোণা কয়েকজন সঙ্গি-সাথী নিয়ে ছিল তাঁর পথচলা। তাঁর শত্রুরাই তাঁর প্রচারের ব্যবস্থা করে দেয়। মক্কার ঘরে ঘরে এবং হজ্জ্ব মওসুমে আগত লোকদের কাছে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে বলে যে, তাদের মাঝে মুহাম্মদ নামে এমন এক লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যার সংস্পর্শে আসলে পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-ভাই-এর সম্পর্ক বিনষ্ট হয়, ফলে কেউ তার ধারেকাছে যেন না ঘেঁষে। তাদের এই প্রচারণায় উল্টা ফল দেখা দেয় এবং মানুষের মধ্যে ব্যাপক ঔৎসুক্য সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সাথীদের আরো সংস্পর্শে আসে এবং তাদের মাঝে ভিন্নতর আদর্শ ও নৈতিকতা লক্ষ্য করে। প্রচন্ড বাধা-বিপত্তির মাঝেও রসূল (সা.)-এর দাওয়াতে মানুষের মাঝে সাড়া দেয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। সমগ্র আরবে ইসলামকে পৌঁছে দেয়া মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর স্বল্পসংখ্যক সাথীদের পক্ষে কখনই সম্ভব হত না। বর্তমানে ইসলাম দ্রুত সম্প্রসারণশীল একটি আদর্শ এবং ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে ইসলামের প্রতি ব্যাপক আগ্রহের পেছনে এর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা অন্যতম কারণ। আমাদের দেশেও ইসলাম ও ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠী বৈরী প্রচারণার সম্মুখীন। কোথাও কিছু ঘটলেই ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ও দমন-পীড়ন চালনা একটি সাধারণ ঘটনা। আবার পরক্ষণেই মানুষের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে যে, এর সাথে তাদের দূরতম সম্পর্কও নেই, তখন তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি জাগ্রত হচ্ছে এবং ইসলামপন্থীরা আরো বেশি সংযত ও সুসংহত হচ্ছে, পক্ষান্তরে ইসলামের শত্রুরা বেপরোয়া ও লাগামছাড়া। তাদের জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অত্যাচারে মানুষ অতীষ্ঠ। মক্কায় তেরোটা বছরে প্রতিকূল পরিবেশে যাঁরা রাসূল (সা.)-এর সাথী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন তাঁরা কাফিরদের জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হন এবং মদীনায় হিজরত করার পর রাসূল (সা.) তাঁদেরকে নিয়ে একটি সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁর দুঃখের দিন ক্রমান্বয়ে পার করে আসেন এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তোমার খ্যাতির কথা বুলন্দ করে দিয়েছি কার্যকর শুরু হয়ে যায়। মাত্র আট বছরের ব্যবধানে মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে সমগ্র আরবে ইসলাম বিজয়ী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং ইসলামের শত্রু আবু জেহেল-আবু লাহাবদের যামানার চির অবসান ঘটে। মুহাম্মদ (সা.)-এর পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীন ও তৎপরবর্তী সময়ে ইসলাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বত্র মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম গভীর শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হয়। মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম উচ্চারণের সাথে সাথে মানুষ পরম ভক্তিভরে দরুদ পাঠ করে এবং নামাযে দরুদ ও আযানের সময় তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। আযানে আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে সাক্ষ্যদানের সাথে তাঁর রেসালতের সাক্ষ্যও প্রদান করা হয়। এভাবে আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় নবীর নাম কিয়ামত পর্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং আখিরাতে তো রয়েছেই। হাউজে কাউছারের পানি পানের ব্যবস্থাপনা তাঁর হাতেই থাকবে। আল্লাহপাকের ভবিষ্যৎ বাণী এভাবেই বাস্তবায়িত হয়।

সংকীর্ণতার সাথে প্রশস্ততাও রয়েছে। আসলে সংকীর্ণতার সাথে আছে প্রশস্ততাও। দুবার বলা হয়েছে। নবী (সা.)-এর প্রতি দুঃখ-কষ্ট-যাতনা কোন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপার নয়। সত্যিই মক্কার সেই দুঃসহ অবস্থা সহসাই দূর হয়ে যায় এবং সুদিন ফিরে আসে নবী (সা.) ও তাঁর সাথীদের; আর আখিরাতে তো রয়েছেই, তা শুধুই মুমিনদের। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ শান্তনা কেবল নবী মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়, সকল মুমিনের জন্যই এই শান্তনা। দুনিয়া একটি পরীক্ষাগার। আল্লাহপাক এখানে ঈমানদার ও কাফির উভয়েরই পরীক্ষা গ্রহণ করছেন। দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে মুমিন তার ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, আর কাফির কতখানি সীমালঙ্ঘন করতে পারে সে পরীক্ষাও আল্লাহপাক গ্রহণ করছেন। আখিরাতে কাফিরের জন্য শুধুই আযাব। মুমিনের সকল দুঃখ-কষ্টের পরিসমাপ্তি এ দুনিয়াতেই এবং আখিরাত তার জন্য শুধুই ফলভোগের জায়গা। সে আল্লাহর কাছ থেকে এত পাবে যে, সে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। ফলে আল্লাহর সব দুঃখ-কষ্ট, নিপীড়ন-নির্যাতন সে অকাতরে সহ্য করে যায় এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পরম ধৈর্য অবলম্বন করে।

আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-কে বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করার জন্য আল্লাহর ওপর নির্ভরতা ও তাঁর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য দাওয়াতে দ্বীন বা তালিম-তারবিয়ত বা পারিবারিক কাজের ব্যস্ততা থেকে অবসর পাওয়ার সাথে সাথে কঠোর ইবাদত-বন্দেগীতে আত্মনিয়োগ করা এবং পরিপূর্ণভাবে আল্লাহমুখি হয়ে যাওয়া বা আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়ার জন্য বলেছেন। সূরা মুয্যাম্মিলের ৯ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালাকে নিজের উকিল হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে বলা হয়েছে। উকিল তাকেই বলা হয় যার ওপর মামলা সংক্রান্ত ভার অর্পণ করে একজন ব্যক্তি নিরুদ্বিগ্ন থাকতে পারে। আল্লাহপাক এমন সত্তা যিনি বিশ্বজাহানের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক এবং যাঁর ওপর নির্ভর করে তাঁর বান্দাহ সম্পূর্ণ ভয়-ভীতি ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে পারে। মুমিনদের নির্ভর করার মত একমাত্র সত্তাই হলেন আল্লাহতায়ালা এবং তিনি তাদের জন্য যথেষ্ট।

শিক্ষা : ইসলামের পথে চলা কুসুমাস্তীর্ণ নয়। পদে পদে বিপদাপদ খুবই স্বাভাবিক। অগ্রসর হয়ে এ পথে যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে ডাকেন তাঁরা দ্বায়ী ইলাল্লাহ, তাঁরা নবী-রাসূলদের উত্তরসূরী। নবী-রাসূলরা যেমন পরীক্ষার সম্মুখিন হয়েছেন তাঁদের উত্তরাধিকার হিসেবে যাঁরা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার দায়িত্ব পালন করবেন তাঁদেরকেও নানাবিধ পরীক্ষার সম্মুখিন হতে হবে। আল্লাহপাক তাঁর নবীকে যেভাবে শান্তনা দান করেছেন তা তাঁর উত্তরাধিকারদের জন্যও প্রযোজ্য। মুমিনদের জন্য আল্লাহপাকের অনুগ্রহ যে তিনি তাঁর দ্বীনের জন্য তাদের হৃদয়কে প্রশস্ত করে দিয়েছেন ও সাহস-হিম্মত জুগিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী এই প্রতিকূল অবস্থায় ঈমানের ওপর অবিচল থাকা তারই ইংগিত বহন করে। প্রতিকূল অবস্থার সহসাই অবসান ঘটবে এবং মুমিনের পরবর্তী অবস্থা উত্তম হবে ইনশা-আল্লাহ। এজন্য প্রয়োজন হতোদ্যম না হয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা অবলম্বন ও তাঁর সাথে নিবিড় সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাতের আঁধারে তাঁরই দরবারে ধর্ণা দেয়া। মুমিনরা যদি আল্লাহর হয়ে যায় তাহলে আল্লাহও তাদের হয়ে যাবেন এবং তিনি ভীতিকর অবস্থা পরিবর্তন করে তাদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা দান করবেন। মুমিনদের সরল উক্তি-আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব। এমন উক্তি মুমিনদেরকে প্রশান্তচিত্ত করে ও সকল ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি দান করে। আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে তাঁর ওপর নির্ভরতা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। আমিন।