কোন কোন সময় সালাম দেওয়া বা নেওয়া জায়েজ / নিষিদ্ধ?

সালাম সর্বাবস্থায় আদান-প্রদান করা যায়। রাসূল (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থাতেও হাতের ইশারায় সালামের উত্তর দিতেন (আবুদাউদ হা/৯২৬, তিরমিযী হা/৩৬৭, মিশকাত হা/৯৯১)। কেবল পেশাব-পায়খানার সময় তিনি সালামের উত্তর দিতেন না, বরং বের হয়ে উত্তর দিতেন (যদি সেই ব্যক্তি মওজুদ থাকত) (বুখারী হা/৩৩৭, আবুদাঊদ হা/১৭, মিশকাত হা/৪৬৭, ৫৩৫)


খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া জায়েজ, আবার সালামের জবাব দেওয়াও জায়েজ। কারণ, খাওয়ার সময় অন্য সব কথা বলা হচ্ছে। সব কথা বলা জায়েজ রয়েছে, তাহলে সালাম দেওয়া কেন নিষেধ থাকবে। কে বা কারা নিষেধ করেছে সালাম দিতে?

বলা হয়, আপনি খাওয়া-দাওয়া করছেন, তাই সালাম দিতে পারলাম না। এ ক্ষেত্রে কথা কিন্তু বলা হয়েই গেল। এটি আমাদের একটি ভুল কাজ এবং ভুল ধারণা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 


«لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا ألا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم» 
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বাতলায়ে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? এ কথার উত্তরে তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর। মুসলিম”  । 
একজন মুসলিম যখন অপর মুসলিমকে সালাম দেবে, তখন তার জবাবে লোকটি তার মতই সালাম দ্বারা উত্তর দেবে অথবা তার চেয়ে উত্তম কথা দ্বারা সালামের উত্তর দেবে। তার উপর তার অপর ভাইয়ের সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। আল্লাহ্ তা‘আলা এ বিষয়ে বলেন,

﴿وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٖ فَحَيُّواْ بِأَحۡسَنَ مِنۡهَآ أَوۡ رُدُّوهَآۗ ٨٦﴾ [النساء: ٨٦]
“আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬]
এটি হল, মুসলিম উম্মাহর অভিবাদন ও সম্ভাষণ যা ইসলাম মুসলিম উম্মাহর জন্য নিয়ে এসেছে। 

আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন, 

﴿تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ ٦١﴾ [النور: ٦١]
আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ। [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]

কিন্তু ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের অভিবাদন মুসলিমদের অভিবাদনের চেয়ে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। ইয়াহূদীদের অভিবাদন হল, হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা আর খৃষ্টানদের অভিবাদন হল, হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা। আর আমাদেরকে খৃষ্টান ও ইয়াহূদীদের অনুকরণ ও তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং সালাম দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, 

«ليس منا من تشبه بغيرنا، لا تشبهوا باليهود ولا بالنصارى فإن تسليم اليهود الإشارة بالأصابع وتسليم النصارى الإشارة بالأكف» 
“যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সাথে সদৃশ অবলম্বন করো না। কারণ ইয়াহূদীদের অভিবাদন হল, আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা আর খৃষ্টানদের অভিবাদন হল, হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা”  । 
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,

«لا تبدءوا اليهود ولا النصارى بالسلام»
 “তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রথমে সালাম দেবে না”  । 
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন, 

«من تشبه بقوم فهو منهم»
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে সদৃশ রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ।” 
আর আল্লাহ্ তা‘আলা নিজে সালাম; তার থেকেই সালাম। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে মুসলিম উম্মাহর অভিবাদন হল সালাম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, 

﴿تَحِيَّتُهُمۡ يَوۡمَ يَلۡقَوۡنَهُۥ سَلَٰمٞۚ وَأَعَدَّ لَهُمۡ أَجۡرٗا كَرِيمٗا ٤٤﴾ [الاحزاب: ٤٤]  
“যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে: ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান”। [সূরা আহযাব, আয়াত: ৪৪]  
﴿ لَا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا تَأۡثِيمًا ٢٥ إِلَّا قِيلٗا سَلَٰمٗا سَلَٰمٗا ٢٦ ﴾ [الواقعة: ٢٥،  ٢٦]  
“তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, সালাম, সালাম”। [সূরা ওয়াকেয়া, আয়াত: ২৫, ২৬]
জান্নাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও ফেরেশতারা মুমিনদের সালাম দেবেন। এ ছাড়া মুমিনরাও জান্নাতে একে অপরকে সালাম দেবে। অথচ সেখানে তারা যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত। কোনো এক কবি বলেন, 
الدار دار سلامة وخطابهم فيها سلام

واسم ذي الغفران

 
“ঘরটি হল, শান্তির ঘর, তারপরও তাতে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম এবং মহা ক্ষমাশীল আল্লাহর নাম”।
হে মুসলিম ভাইয়েরা! যেহেতু ইসলাম হল, মহব্বত, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব, উত্তম পরিণতি, স্থায়ী শান্তি ও পরিপূর্ণ সম্মান লাভের দ্বীন, সেহেতু আমরা যারা মুসলিম তাদের জন্য ইসলামের শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করা, ইসলামের বিধান অনুযায়ী আমল করা এবং ইসলামের প্রদর্শিত পথ ও নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করা খুবই জরুরি। হে আল্লাহ ! তুমি নিজেই শান্তি, তোমার থেকেই শান্তি। হে প্রভু! তুমি আমাদের শান্তিতে বেঁচে থাকার তাওফিক দাও, যাবতীয় অপকর্ম ও অপরাধ থেকে আমাদের রক্ষা কর। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর উপর, তার পরিবার-পরিজনের উপর এবং তার সমগ্র সাহাবীদের উপর ।