দান-সদকার ফজিলত


দান-সদকা প্রকাশ্যেও দেয়া যায়, গোপনেও দেয়া যায়। প্রকাশ্যে দিলে অন্য লোকেরাও দানখয়রাত করতে অনুপ্রাণিত হয়, কিন্তু তাতে লোক দেখানোর মনোভাব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গোপনে দিলে এই আশঙ্কা থাকে না। হাদিস শরিফে আছে, প্রকাশ্যে দান-সদকাকারী উচ্চৈঃস্বরে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতকারীর মতো। আর গোপনে সদকা-খয়রাতকারী নিচুস্বরে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতকারীর মতো। এই আয়াতের তাফসিরে আল্লামা ইবনে কাসির র: লিখেন, এই আয়াত দ্বারা গোপনে সদকা-দানকারীর ফজিলত প্রমাণিত হয়। এরপর তিনি বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফে সঙ্কলিত এবং হজরত আবু হুরায়রা রা: কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
এতে প্রিয় নবী হজরত রাসূলে কারিম সা: ইরশাদ করেছেন, সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন নিজের ছায়ায় স্থান দেবেন, যে দিন আল্লাহ পাকের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।
(১) সুবিচারক রাষ্ট্রনায়ক,
(২) যে যুবক তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করেছে,
(৩) সেই দুই ব্যক্তি যারা শুধু আল্লাহর ওয়াস্তে একে অন্যকে ভালোবেসেছে,
(৪) সেই ব্যক্তি যার অন্তরে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় থেকে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত মসজিদের চিন্তাই থাকে, (৫) যে ব্যক্তি একাকী আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্রন্দন করতে থাকে,
(৬) সেই ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী পদমর্যাদার অধিকারিণী নারী মন্দকাজের জন্য আহ্বান জানায় তখন সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি,
(৭) সেই ব্যক্তি যে নিজে দানখয়রাত এমন গোপনভাবে দেয় যে তার বাম হাত ডান হাতের দানের খবর রাখে না। অর্থাৎ দানের কথা সে গোপন রাখে। (তাফসিরে মাজহারি)।
এর দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে যদি গোপনে সদকা করা হয় তবে তার ফজিলত হয় অধিকতর।
তিরমিজি শরিফ ও মুসনাদে আহমদে সঙ্কলিত একটি হাদিস রয়েছে, আল্লাহ পাক যখন জমিনকে সৃষ্টি করলেন তখন জমিন দুলতে লাগল। কেননা জমিনকে পানির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে। পানির ওপর ভাসমান নৌকা যেমন দুলতে থাকে ঠিক তেমনি জমিন দুলতে থাকল। তখন আল্লাহ পাক বিশাল বিস্তৃত পর্বতমালা সৃষ্টি করে জমিনের ওপর বসিয়ে দিলেন তখন জমিন স্থবির হয়ে গেল। হাদিসের ভাষায় তখন ফেরেশতারা আশ্চর্যান্বিত হলো এবং বলল- হে পরওয়ারদিগার! তোমার সৃষ্টিতে পাহাড়ের চেয়েও শক্তিশালী কিছু আছে কি? আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, আছে আর তা হলো লোহা। ফেরেশতারা পুনরায় জিজ্ঞেস করল- হে পরওয়ারদিগার! তোমার সৃষ্টিতে লোহার চেয়েও শক্তিশালী কোনো কিছু আছে কি? আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, আছে তা হলো অগ্নি। ফেরেশতারা পুনরায় আরজ করল- হে পরওয়ারদিগার! তোমার সৃষ্টি জগতের অগ্নির চেয়েও শক্তিশালী কোনো কিছু আছে কি? আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, আছে পানি। ফেরেশতারা আবার আরজ করল- হে পরওয়ারদিগার! তোমার সৃষ্টির মাঝে পানির চেয়েও শক্তিশালী কোনো কিছু আছে কি? আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন- আছে বাতাস। এরপর ফেরেশতারা আরজ করল- হে পরওয়ারদিগার! তোমার সৃষ্টি জগতের মধ্যে বাতাসের চেয়েও শক্তিশালী কোনো কিছু আছে কি?
আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন- আছে, সেই আদম সন্তান যে আল্লাহর রাহে ডান হাতে ব্যয় করে কিন্তু তার বাম হাত তা জানে না। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের সাথে তার এমন ঘনিষ্ঠতর ও গভীরতম সম্পর্ক যে সে অতি গোপনে তার যথাসর্বস্ব আল্লাহর রাহে বিলীন করতে এতটুকুও কুণ্ঠিত হয় না, এমন ব্যক্তি সৃষ্টি জগতের মাঝে সর্বাধিক শক্তিশালী।

নিম্নে দান-সদকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফযীলত বর্ণনা করা হলো। আশা করি মুসলিম জনসাধারণ এতে নিশ্চয় উদ্বুদ্ধ হবেন। 

১. সর্বদা সদকা-খয়রাত করা মানে এ সংক্রান্ত আল্লাহর নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাস্তবায়ন করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُل لِّعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خِلَٰلٌ ٣١ ﴾ [ابراهيم: ٣١] 
“(হে রাসূল!) তুমি আমার মু’মিন বান্দাহদেরকে বলে দাও, যেন তারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) ব্যয় করে, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন ক্রয়-বিক্রয় এবং বন্ধুত্ব বলতে কিছুই থাকবে না”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ ءَامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَأَنفِقُواْ مِمَّا جَعَلَكُم مُّسۡتَخۡلَفِينَ فِيهِۖ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وأَنفَقُواْ لَهُمۡ أَجۡرٞ كَبِيرٞ ٧ ﴾ [الحديد: ٧] 
“তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন তা থেকে কিছু (তাঁর রাস্তায়) ব্যয় করো। অতএব তোমাদের মধ্য থেকে যারা (আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর) ঈমান এনেছে এবং (তাঁর রাস্তায় নিজেদের ধন-সম্পদ) ব্যয় করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ৭]

২. আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করলে তা বহু গুণে পাওয়া যায়:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ وَٱللَّهُ يَقۡبِضُ وَيَبۡصُۜطُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٢٤٥ ﴾ [البقرة: ٢٤٥] 
“তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দিবে তথা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা বহু বহু গুণে বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলাই কাউকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল করেন এবং তাঁর দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত হতে হবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৪৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنۢبُلَةٖ مِّاْئَةُ حَبَّةٖۗ وَٱللَّهُ يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ لَا يُتۡبِعُونَ مَآ أَنفَقُواْ مَنّٗا وَلَآ أَذٗى لَّهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٢٦٢ ﴾ [البقرة: ٢٦١،  ٢٦٢] 
“যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্য বীজ। যা থেকে উৎপন্ন হয়েছে সাতটি শীষ। প্রত্যেক শীষে রয়েছে শত শস্য। আর আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য ইচ্ছে করবেন তাকে আরো বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন মহান দাতা ও মহাজ্ঞানী। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে এবং সে জন্য কাউকে খোঁটাও দেয় না, না দেয় কষ্ট। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার। বস্তুতঃ তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কখনো চিন্তাগ্রস্তও হবে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬১-২৬২]
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِن تُقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعِفۡهُ لَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ ١٧ ﴾ [التغابن: ١٧] 
“তোমরা যদি আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দান করো তথা তাঁর পথে সদকা-খয়রাত করো তা হলে তিনি তোমাদেরকে তা বহু গুণে বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা মহা গুণগ্রাহী ও অত্যন্ত সহনশীল”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُصَّدِّقِينَ وَٱلۡمُصَّدِّقَٰتِ وَأَقۡرَضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعَفُ لَهُمۡ وَلَهُمۡ أَجۡرٞ كَرِيمٞ ١٨ ﴾ [الحديد: ١٨] 
“নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীলা নারী এবং যারা আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেওয়া হবে বহুগুণ বেশী সাওয়াব এবং তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত সম্মানজনক মহা পুরস্কার”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১৮]
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَمۡحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰاْ وَيُرۡبِي ٱلصَّدَقَٰتِۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ ٢٧٦ ﴾ [البقرة: ٢٧٦] 
“আল্লাহ তা‘আলা সুদের বরকত উঠিয়ে নেন এবং সদকা বর্ধিত করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা অতি কৃতঘ্ন তথা কাফির পাপাচারীদেরকে ভালোবাসেন না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৬]
কোনো সদকায় সাতটি গুণ পাওয়া গেলে তা বহুগুণে বেড়ে যায়। যা নিম্নরূপঃ
ক. সদকা হালাল হওয়া।
খ. নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সদকা করা।
গ. দ্রুত সদকা করা।
ঘ. পছন্দনীয় বস্তু সদকা করা।
ঙ. লুকিয়ে সদকা করা।
চ. সদকা দিয়ে তুলনা না দেওয়া।
ছ. সদকাগ্রহীতাকে কোনোভাবে কষ্ট না দেওয়া।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ»
“যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর সমপরিমাণ সদকা করবে (আর আল্লাহ তা‘আলা তো একমাত্র হালাল বস্তুই গ্রহণ করে থাকেন) আল্লাহ তা‘আলা তা ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তা তার কল্যাণেই বর্ধিত করবেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ একটি ঘোড়ার বাচ্চাকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করে বর্ধিত করে। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা পরিশেষে সে খেজুর সমপরিমাণ বস্তুটিকে একটি পাহাড় সমপরিমাণ বানিয়ে দেন”।[1]

৩. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য সদকা-খয়রাত করলে তা কখনোই বৃথা যায় না:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمُ ٱبۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ ٱللَّهِ وَتَثۡبِيتٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ كَمَثَلِ جَنَّةِۢ بِرَبۡوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٞ فَ‍َٔاتَتۡ أُكُلَهَا ضِعۡفَيۡنِ فَإِن لَّمۡ يُصِبۡهَا وَابِلٞ فَطَلّٞۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ ٢٦٥ ﴾ [البقرة: ٢٦٥] 
“যারা পরকালের প্রতিদানে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তাঁর পথে দান করে তাদের উপমা যেমন উঁচু জমিনে অবস্থিত একটি উদ্যান। তাতে প্রবল বৃষ্টি হলে ফসল হয় দ্বিগুণ। আর তা না হলে শিশিরই সে জমিনের জন্য যথেষ্ট। তোমরা যাই করছো আল্লাহ তা‘আলা তা সবই দেখছেন”। [আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ ۞لَّيۡسَ عَلَيۡكَ هُدَىٰهُمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَهۡدِي مَن يَشَآءُۗ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَلِأَنفُسِكُمۡۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ ٱللَّهِۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ يُوَفَّ إِلَيۡكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تُظۡلَمُونَ ٢٧٢ ﴾ [البقرة: ٢٧٢] 
“তোমরা যে ধন-সম্পদগুলো আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করো তা তো তোমাদের নিজেদের জন্যই। তবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করো না। যা কিছুই তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করবে তা তোমাদেরকে পূর্ণভাবেই দেওয়া হবে। এতটুকুও তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭২]
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا يُنفِقُونَ نَفَقَةٗ صَغِيرَةٗ وَلَا كَبِيرَةٗ وَلَا يَقۡطَعُونَ وَادِيًا إِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٢١ ﴾ [التوبة: ١٢١] 
“তেমনিভাবে তারা ছোট-বড় যা কিছুই (আল্লাহ তা‘আলার পথে) ব্যয় করুক না কেন এবং যে প্রান্তরই তারা অতিক্রম করুক না কেন তা সবই তাদের নামে লেখা হবে যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কৃতকর্ম সমূহের অতি উত্তম বিনিময় দিতে পারেন”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩] 
“তোমরা যা কিছু দান করবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিদান অবশ্যই দিবেন। তিনি তো হলেন উত্তম রিযিকদাতা”। [সূরা সাবা, আয়াত: ৩৯]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ أَنْفِقْ أُنْفِقْ عَلَيْكَ» ب: 4684، م: 399
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে বনী আদম! তুমি দান করো। আমিও তোমাকে দান করবো”।[2]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

৪. সর্বদা সদকা-খয়রাত আল্লাহ তা‘আলার সাথে এমন এক ব্যবসা যার কোনো ক্ষয়-ক্ষতি নেই:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ ﴾ [فاطر: ٢٩،  ٣٠] 
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) ব্যয় করে, বস্তুতঃ তারাই আশা করছে এমন এক ব্যবসার যার কোনো ক্ষয়-ক্ষতি নেই। যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিজ কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেন। এমনকি তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশী করে দিবেন। তিনি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল সুকৃতজ্ঞ”। [সূরা ফাত্বির, আয়াত: ২৯-৩০]

৫. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাতকারীর কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ فَلَهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٢٧٤ ﴾ [البقرة: ٢٧٤] 
“যারা নিজেদের ধন-সম্পদগুলো আল্লাহ তা‘আলার পথেই রাত-দিন প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে দান করবে তাদের প্রতিদান সমূহ তাদের প্রভুর নিকটই রক্ষিত থাকবে। কিয়ামতের দিন তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না এবং তারা কখনো চিন্তাগ্রস্তও হবে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৪)

৬. আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজের পছন্দনীয় বস্তু সদকা করা মানে সমূহ কল্যাণের নাগাল পাওয়া:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ٩٢ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
“তোমরা কখনোই কল্যাণের নাগাল পাবে না যতক্ষণ না তোমরা নিজের পছন্দনীয় বস্তু সদকা করো। তোমরা যা কিছুই আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করো তা সবই তিনি ভালোভাবে জানেন”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯২]

৭. শুধু সদকা করার মধ্যেই নয় বরং কাউকে সদকা দেওয়ার আদেশের মধ্যেও মহা কল্যাণ এবং উত্তম প্রতিদান রয়েছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ ٱبۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ ٱللَّهِ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا ١١٤ ﴾ [النساء: ١١٤] 
“তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে যে ব্যক্তি সদকা-খয়রাত, সৎ কাজ ও মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় তাতে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় যে ব্যক্তি এমন করবে তাকে আমি অচিরেই মহা পুরস্কার দেবো”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৪]

৮. আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত তাঁর ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম এবং তা একজন আল্লাহভীরুর বিশেষ বৈশিষ্ট্যও বটে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٣٤ ﴾ [ال عمران: ١٣٣،  ١٣٤] 
“তোমরা নিজ প্রভুর ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতি দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রসারতা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সদৃশ। যা তৈরি করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য। যারা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছলাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ١٩ ﴾ [الذاريات: ١٥،  ١٩]
“সে দিন মুত্তাকীরা থাকবেন প্রস্রবণ বিশিষ্ট জান্নাতে। তাঁরা সেখানে উপভোগ করবেন যা তাঁদের প্রভু তখন তাঁদেরকে দিবেন। কারণ, তাঁরা ছিলেন ইতোপূর্বে দুনিয়ার বুকে সৎকর্মপরায়ণ। তাঁরা রাত্রি বেলায় কম ঘুমাতো এবং শেষ রাতে আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতো। তাদের সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের অধিকার”। [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৫-১৯]

৯. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত করেন তাঁরা প্রকৃত ঈমানদার:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ ٤ ﴾ [الانفال: ٢،  ٤]
“সত্যিকারের মু’মিন ওরাই যাদের সামনে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করা হলে তাদের অন্তরগুলো ভয়ে কেঁপে উঠে, তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বেড়ে যায়, উপরন্তু তারা সর্বদা নিজ প্রভুর উপর নির্ভরশীল থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং তাঁর দেওয়া সম্পদ থেকে তাঁর পথে সদকা করে। তারাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদার। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর নিকট সুউচ্চ আসন, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২-৪]

১০. আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সকল প্রকারের গুনাহ্ ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٠٣ أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٣،  ١٠٤] 
“(হে নবী!) তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা-খয়রাত নিয়ে তাদেরকে পাক ও পবিত্র করো এবং তাদের জন্য দো‘আ করো। নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য শান্তিস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা তো সবই শোনেন এবং সবই জানেন। তারা কি এ ব্যাপারে অবগত নয় যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবা কবুলকারী অতীব দয়ালু”। সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১০৩-১০৪]
জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’ব ইবন ‘উজরাহ্ রা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ»
“সদকা-খয়রাত গুনাহসমূহ মুছিয়ে দেয় যেমনিভাবে নিভিয়ে দেয় পানি আগুনকে”।[6]

১১. আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত সদকাকারীর সঠিক বিচার-বুদ্ধির পরিচয় বহন করে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞أَفَمَن يَعۡلَمُ أَنَّمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ ٱلۡحَقُّ كَمَنۡ هُوَ أَعۡمَىٰٓۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩ ٱلَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ وَلَا يَنقُضُونَ ٱلۡمِيثَٰقَ ٢٠ وَٱلَّذِينَ يَصِلُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ وَيَخَافُونَ سُوٓءَ ٱلۡحِسَابِ ٢١ وَٱلَّذِينَ صَبَرُواْ ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِمۡ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ وَيَدۡرَءُونَ بِٱلۡحَسَنَةِ ٱلسَّيِّئَةَ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٢ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤ ﴾ [الرعد: ١٩،  ٢٤]
“তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে বিশ্বাস করে সে আর অন্ধ কি সমান? বস্তুতঃ সত্যিকার বিবেকবানরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। যারা আল্লাহ তা‘আলাকে দেওয়া অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং কোনো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না। যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখে এবং তাঁকে ভয় পায়। আরো ভয় পায় কিয়ামতের কঠিন হিসাবকে। যারা তাদের প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ধৈর্য ধারণ করে, সালাত কায়েম করে, তাঁর দেওয়া সম্পদ তাঁরই পথে গোপনে ও প্রকাশ্যে অকাতরে ব্যয় করে এবং ভালো দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে। তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম স্থায়ী জান্নাত। যাতে তারা, তাদের সৎকর্মশীল পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততি প্রবেশ করবে। ফিরিশতাগণ হাজির হবে তাদের সম্মানার্থে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। তারা বলবে, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। কারণ, তোমরা (দুনিয়াতে বহু) ধৈর্য ধারণ করেছিলে। কতোই না চমৎকার এ শুভ পরিণাম”। [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১৯-২৪]

১২. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত করেন সত্যিকারার্থে তাঁরাই কুরআনুল কারীম ও আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا يُؤۡمِنُ بِ‍َٔايَٰتِنَا ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُواْ بِهَا خَرُّواْۤ سُجَّدٗاۤ وَسَبَّحُواْ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَهُمۡ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ۩ ١٥ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾ [السجدة: ١٥،  ١٦] 
“শুধুমাত্র তারাই আমার আয়াত ও নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস করে যাদেরকে এ ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে। উপরন্তু তারা এ ব্যাপারে এতটুকুও অহংকার দেখায় না। তারা (রাত্রিবেলায়) আরামের শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রভুকে ডাকে আশা ও আশঙ্কায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে আমার পথে সদকা-খয়রাত করে”। [সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৫-১৬]

১৩. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত করেন তাঁরা সত্যিকারার্থেই বিনয়ী:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ فَلَهُۥٓ أَسۡلِمُواْۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُخۡبِتِينَ ٣٤ ﴾ [الحج: ٣٤]  
“(হে রাসূল!) তুমি সুসংবাদ দাও বিনয়ীদেরকে। যাদের সামনে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে ও সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমি যা রিয্ক দিয়েছি তা থেকে (তাঁর পথে) ব্যয় করে”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৩৪-৩৫]

১৪. সর্বদা সদকা-খয়রাত পুণ্য তথা জান্নাতের পথ এবং কার্পণ্য অনিষ্ট তথা জাহান্নামের পথকে সহজ করে দেয়:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ وَأَمَّا مَنۢ بَخِلَ وَٱسۡتَغۡنَىٰ ٨ وَكَذَّبَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٩ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡعُسۡرَىٰ ١٠ ﴾ [الليل: ٥،  ١٠] 
“সুতরাং যে ব্যক্তি (একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) দান করলো, আল্লাহভীরু হলো এবং পুণ্যের প্রতিদান তথা জান্নাতকে সত্য বলে জ্ঞান করলো অচিরেই আমি তার জন্য পুণ্য তথা জান্নাতের পথকে সহজ করে দেবো। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কার্পণ্য করলো ও নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলো এবং পুণ্যের প্রতিদান তথা জান্নাতকে মিথ্যা বলে জ্ঞান করলো অচিরেই আমি তার জন্য কঠিন পরিণাম তথা জাহান্নামের পথকে সহজ করে দেবো”। [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ৫-১০]

১৫. কার্পণ্যকে ঝেড়ে-মুছে সর্বদা সদকা-খয়রাত করতে থাকা সফলতারই সোপান:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞۚ وَٱللَّهُ عِندَهُۥٓ أَجۡرٌ عَظِيمٞ ١٥ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ وَٱسۡمَعُواْ وَأَطِيعُواْ وَأَنفِقُواْ خَيۡرٗا لِّأَنفُسِكُمۡۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٦ ﴾ [التغابن: ١٥،  ١٦] 
“তোমার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য একটি পরীক্ষার বিষয়। তবে (এ পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে) তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার নিকট মহা পুরস্কার। তাই তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে যথাসাধ্য ভয় করো, তাঁর কথা শুনো, তাঁর আনুগত্য করো এবং তাঁরই পথে ব্যয় করো যা তোমাদের জন্য সত্যিই কল্যাণকর। বস্তুতঃ যারা হৃদয়ের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত ১৫-১৬]

১৬. আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত তাঁর নৈকট্য লাভের বিরাট একটি মাধ্যম:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ مَغۡرَمٗا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ ٱلدَّوَآئِرَۚ عَلَيۡهِمۡ دَآئِرَةُ ٱلسَّوۡءِۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٩٨ وَمِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مَن يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَٰتٍ عِندَ ٱللَّهِ وَصَلَوَٰتِ ٱلرَّسُولِۚ أَلَآ إِنَّهَا قُرۡبَةٞ لَّهُمۡۚ سَيُدۡخِلُهُمُ ٱللَّهُ فِي رَحۡمَتِهِۦٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٩٩ ﴾ [التوبة: ٩٨،  ٩٩]
“মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা (আল্লাহ তা‘আলার পথে) ব্যয় করাকে জরিমানা মনে করে এবং তোমাদের প্রতি কালের আবর্তন তথা বিপদাপদের অপেক্ষায় থাকে। বস্তুতঃ কালের অশুভ আবর্তন তথা বিপদাপদ তাদের উপরই বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা তো সবই শোনেন এবং সবই জানেন। পক্ষান্তরে মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের প্রতি পূর্ণ ঈমান রাখে এবং তারা (আল্লাহ তা‘আলার পথে) ব্যয় করাকে তাঁর সান্নিধ্য ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দো‘আ লাভের উপকরণ বলে মনে করে। জেনে রাখো, তাদের উক্ত ব্যয় নিঃসন্দেহে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের বিরাট একটি কারণ। অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিজ রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৯৮-৯৯]

১৭. আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার বিরাট একটি মাধ্যম:
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম।
‘আদি’ ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اتَّقُوْا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ»
“তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো। এমনকি একটি খেজুরের একাংশ সদকা করে হলেও”।[7]
‘আদি ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يَطُوْفَ أَحَدُكُمْ بِصَدَقَتِهِ، لاَ يَجِـدُ مَنْ يَّقْبَلُهَا مِنْهُ، ثُمَّ لَيَقِفَنَّ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيِ اللهِ، لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ حِجَابٌ، وَلاَ تَرْجُمَانٌ يُتَرْجِمُ لَهُ، ثُمَّ لَيَقُوْلَنَّ لَهُ: أَلَمْ أُؤْْتِكَ مَالاً ؟ فَلَيَقُوْلَنَّ: بَلَى، ثُمَّ لَيَقُوْلَنَّ: أَلَمْ أُرْسِلْ إِلَيْكَ رَسُوْلاً ؟ فَلَيَقُوْلَنَّ: بَلَى، فَيَنْظُرُ عَنْ يَمِيْنِهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ، ثُمَّ يَنْظُرُ عَنْ شِمَالِهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ، فَلْيَتَّقِيَنَّ أَحَدُكُمْ النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ»
“কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষণ না তোমাদের কেউ সদকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। সে এমন লোক খুঁজে পাবে না যে তা গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যেককেই কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হতে হবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা ও তার মাঝে কোনো পর্দা থাকবে না। না থাকবে কোনো অনুবাদক। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে সম্পদ দেইনি? তখন সে বলবে, অবশ্যই দিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরো বলবেন, আমি কি তোমার নিকট কোনো রাসূলুল্লাহ পাঠাইনি? তখন সে বলবে, অবশ্যই পাঠিয়েছেন। তখন সে তার ডানে তাকাবে এবং আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। অতঃপর সে তার বামে তাকাবে এবং আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেরই জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চেষ্টা করা অবশ্যই কর্তব্য। এমনকি একটি খেজুরের অর্ধাংশ সদকা করে হলেও। আর যদি তা না পাও তা হলে একটি সুন্দর উপদেশ মূলক কথা বলে হয়েও”।[8]
’হারিস আশ্‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ أَوْحَى إِلَى يَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهِنَّ، وَيَأْمُرَ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ أَنْ يَعْمَلُوْا بِهِنَّ – فَذَكَرَ الْـحَدِيْثَ إِلَى أَنْ قَالَ فِيْهِ -: وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ، وَمَثَلُ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ، فَأَوْثَقُوْا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ، وَقَرَّبُـوْهُ لِيَضْرِبُوْا عُنُقَهُ، فَجَعَلَ يَقُوْلُ: هَلْ لَكُمْ أَنْ أَفْدِيَ نَفْسِيْ مِنْكُمْ؟ وَجَعَلَ يُعْطِيْ الْقَلِيْلَ وَالْكَثِيْرَ حَتَّى فَدَى نَفْسَهُ»
“আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের নিকট পাঁচটি বাক্য প্রত্যাদেশ হিসেবে পাঠান; যাতে তিনি সেগুলোর উপর আমল করেন এবং সকল বনী ইস্রাঈলকে আদেশ করেন সেগুলোর উপর আমল করার জন্য। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে সদকার আদেশ করছি। সদকার দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির ন্যায় যাকে শত্রু পক্ষ বন্দী করেছে। এমনকি তারা তার হাত-পা শক্ত করে বেঁধে তাকে হত্যা করার জন্য যথাস্থানে উপস্থিত করেছে। তখন সে বললো, তোমরা কি আমাকে সম্পদের বিনিময়ে ছেড়ে দেবে? এ বলে সে কম-বেশি যা পেরেছে দিয়ে তাদের হাত থেকে নিজকে মুক্ত করেছে”।[9]

১৮. সদকাকারীর জন্য প্রতিদিন একজন ফিরিশতা বরকতের দো‘আ করেন:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيْهِ إِلاَّ مَلَكَانُ يَنْزِلاَنِ، فَيَقُوْلُ أَحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُوْلُ الْآخَرُ: اللَّهُمْ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا»
“প্রতিদিন সকাল বেলায় দু’ জন ফিরিশতা অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি দানকারীর সম্পদ আরো বাড়িয়ে দিন। অন্য জন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি কৃপণের সম্পদ ধ্বংস করে দিন”।[10]

১৯. লুকিয়ে সদকা-খয়রাত করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার আরশের নিচে ছায়া পাওয়া যাবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ تَعَالَى فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ: إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ الـْمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ: إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ»
“সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আরশের নিচে ছায়া দিবেন যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। প্রথম শ্রেণী হচ্ছে এমন রাষ্ট্রপতি যিনি সর্বদা ইনসাফের উপরই প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে এমন যুবক যে ছোট থেকেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উপর বেড়ে উঠেছে। তৃতীয় শ্রেণী হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো। চতুর্থ শ্রেণী হচ্ছে এমন দু’ ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবেসেছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তারা পরস্পর একত্রিত হয় এবং তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। পঞ্চম শ্রেণী হচ্ছে এমন পুরুষ যাকে কোনো প্রভাবশালী সুন্দরী মহিলা ব্যভিচারের জন্য ডাকছে; অথচ সে বলছেঃ আমি তা করতে পারবো না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় পাচ্ছি। ষষ্ঠ শ্রেণী হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে এরূপ লুকিয়ে সদকা করেছে যে, তার বাম হাত জানছে না তার ডান হাত কি সদকা করছে। সপ্তম শ্রেণী হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে একাকীভাবে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করে দু’ চোখের পানি প্রবাহিত করছে”।[11]

২০. লুকায়িত সদকা আল্লাহ তা‘আলার রাগ ও ক্রোধ নিঃশেষ করে দেয়:
মু‘আবিয়া ইবন হায়দাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ صَدَقَةَ السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى»
“লুকায়িত সদকা আল্লাহ তা‘আলার রাগ নিঃশেষ করে দেয়”।[12]

২১. সদকা-খায়রাতের হাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ হাত:
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে বলেন,
«الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى، فَالْيَدُ الْعُلْيَا هِيَ الْـمُنْفِقَةُ وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَـةُ»
“উপরের হাত অনেক ভালো নিচের হাতের চাইতে। বর্ণনাকারী বলেন, উপরের হাত বলতে দানের হাতকেই বুঝানো হচ্ছে এবং নিচের হাত বলতে ভিক্ষুকের হাত”।[13]

২২. সদকা-খয়রাত রুগ্ন ব্যক্তির জন্য এক মহৌষধঃ
হাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«دَاوُوْا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ»
“তোমরা রুগ্নদের চিকিৎসা করো সদকা দিয়ে”।[14]

২৩. সদকা-খয়রাত কিয়ামতের দিন সদকাকারীকে সূর্যের ভীষণ তাপ থেকে ছায়া দিবে:
উকবাহ্ ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ امْرِئٍ فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ»
“প্রত্যেক ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তার সদকার ছায়ার নিচেই অবস্থান করবে যতক্ষণ না সকল মানুষের মাঝে ফায়সালা করা হয়”।[15]

২৪. সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে:
‘উকবাহ্ ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُوْرِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْـمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ»
“নিশ্চয় সদকা সদকাকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে এবং নিশ্চয় কিয়ামতের দিন একজন মু’মিন তার সদকার ছায়ার নিচেই অবস্থান করবে”।[16]

২৫. সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সমূহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে:
আবু উমামাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَنَائِعُ الـْمَعْرُوْفِ تَقِيْ مَصَارِعَ السُّوْءِ»
“ভালো কাজ তথা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সমূহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে”।[17]

২৬. দীর্ঘস্থায়ী সদকার সাওয়াব মৃত্যুর পরেও পাওয়া যায়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ»
“কোনো মানুষ মারা গেলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল তার মৃত্যুর পরও চালু থাকে, দীর্ঘস্থায়ী সদকা, এমন জ্ঞান যা দিয়ে মানুষ তার মৃত্যুর পরও লাভবান হয়, এমন নেককার সন্তান যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দো‘আ করে”।[18]

২৭. সদকা-খয়রাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল:
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ذُكِرَ لِيْ: أَنَّ الْأَعْمَالَ تَبَاهَى، فَتَقُوْلُ الصَّدَقَةُ: أَنَا أَفْضَلُكُمْ»
“আমাকে বলা হয়েছে যে, আমলগুলো পরস্পর গর্ব করবে। তখন সদকা বলবে, আমি তোমাদের সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ”।[19]

২৮. সদকা-খায়রাতের পাল্লা হচ্ছে সবচাইতে বেশি ভারীঃ
আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«إِنَّ رَاهِبًا عَبَدَ اللهَ فِيْ صَوْمَعَتِهِ سِتِّيْنَ سَنَةً، فَجَاءَتْ امْرَأَةٌ فَنَزَلَتْ إِلَى جَنْبِهِ، فَنَزَلَ إِلَيْهَا، فَوَاقَعَهَا سِتَّ لَيَالٍ، ثُمَّ سُقِطَ فِيْ يَدِهِ، فَهَرَبَ، فَأَتَى مَسْجِدًا فَأَوَى فِيْهِ ثَلاَثًا، لاَ يَطْعَمُ فِيْهِ شَيْئًا، فَأُتِيَ بِرَغِيْفٍ، فَكَسَرَهُ، فَأَعْطَى رَجُـلاً عَنْ يَمِيْنِهِ نِصْفَهُ، وَأَعْطَى آخَرَ عَنْ يَسَارِهِ نِصْفَهُ، فَبَعَثَ اللهُ إِلَيْهِ مَلَكَ الْمَوْتِ، فَقَبَضَ رُوْحَـهُ، فَوُضِعَتِ السِّتُّـوْنَ فِيْ كِفَّةٍ، وَوُضِعَتِ السِّتُّ فِيْ كِفَّةٍ، فَرَجَحَتِ السِّتُّ، ثُمَّ وُضِعَ الرَّغِيْفُ، فَرَجَحَ الرَّغِيْفُ»
“জনৈক খ্রিস্টান ধর্মযাজক ষাট বছর যাবত কোনো এক গির্জায় আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করছিলো। ইতোমধ্যে জনৈকা মহিলা তার পাশেই অবস্থান নিচ্ছিলো। এ সুযোগে সে তার সাথে ছয় রাত্রি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর তার হুঁশ ফিরে আসলে সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরিশেষে এক মসজিদে সে তিন দিনের জন্য অবস্থান নেয়। এ তিন দিন যাবত সে কিছুই খায়নি। ইতোমধ্যে তাকে একটি রুটি দেওয়া হলে সে তা দু’ ভাগ করে এক ভাগ তার ডান পার্শ্বের লোকটিকে এবং আরেকটি টুকরো তার বাম পার্শ্বের লোকটিকে দেয়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে মৃত্যুর ফিরিশতা পাঠিয়ে তার মৃত্যু ঘটান। এরপর তার ষাট বছরের আমল এক পাল্লায় রাখা হয় এবং অন্য পাল্লায় রাখা হয় তার সে ছয় রাত্রির বদ্ আমল। এতে তার বদ্ আমলের পাল্লা ভারী হয়ে যায়। অতঃপর অন্য পাল্লায় তার সদকার রুটিটি রাখা হলে তা ভারী হয়ে যায়”।[20]