সালাতে তিলাওয়াত কৃত আয়াত ও দো‘আসমূহের অর্থের মধ্যে চিন্তা করা এবং তাতে প্রভাবিত হওয়া

আল্লাহ তাআলা কুরআনকে অবতীর্ণ করেছেন চিন্তা-গবেষণার করার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩﴾ [ص : ٢٩]   
“আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে”।[32]
আর চিন্তা করা তখন সম্ভব হবে, যখন কুরআন থেকে যা তিলাওয়াত করছে তার অর্থ জানা থাকবে। তখন সে কুরআনে অর্থের মধ্যে চিন্তা করবে, তার চোখ থেকে অশ্রু নির্গত হবে এবং সে কুরআন দ্বারা প্রভাবিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُواْ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِمۡ لَمۡ يَخِرُّواْ عَلَيۡهَا صُمّٗا وَعُمۡيَانٗا ٧٣﴾ [الفرقان: ٧٣]   
“আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিলে অন্ধ ও বধিরদের মত পড়ে থাকে না”।[33] এতে কুরআনের ব্যাখ্যা জানার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। আল্লামা ইবনে জারির রহ. বলেন, “যে কুরআন পড়ে অথচ কুরআনের ব্যাখ্যা জানে না, তার বিষয়ে আমি অবাক হই, সে কিভাবে কুরআন তিলাওয়াতে মজা পায়।”[34] সুতরাং, একজন তিলাওয়াতকারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সে তিলাওয়াতের সাথে সাথে কুরআনের তাফসীর জানার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেবে। যদি বিস্তারিত সম্ভব না হয়, কম পক্ষে সংক্ষিপ্ত তাফসীরের কিতাবগুলো অধ্যয়ন করবে। যেমন, আল্লামা শাওকানী রহ. এর তাফসীর থেকে গৃহীত আল-আশকারের যুবদাতুত তাফসীর, আল্লামা সা‘দীর ‘তাইসিরুল করীমির রহমান ফী তাফসীরে কালামিল মান্নান’। তাও যদি সম্ভব না হয়, কুরআনে কঠিন শব্দ বিষয়ে আল্লামা আব্দুল আজিজ আস-সাইরওয়ান কিতাব যেমন, ‘আল মু‘জামুল জামে‘ লি গরীবি মুফরাদাতিল কুরআন’। কারণ, তিনি এ কিতাবে, কুরআনের অপরিচিত শব্দ বিষয়ে রচিত চারটি কিতাবকে একত্র করেছেন।
আর কুরআনের আয়াতসমূহে চিন্তা করার বিষয়ে যে জিনিষটি বেশি উপকারী তা হল, কুরআনের একটি আয়াতকে বার বার তিলাওয়াত করা। এটি ফিকির করতে এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অধিক সহায়তা করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন। হাদিসে বর্ণিত যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো রাত এক আয়াতকে বার বার তিলাওয়াত করতে থাকেন।[35] আয়াতটি ছিল,
﴿إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨﴾ [المائ‍دة: ١١٨]   
“যদি তুমি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তোমার বান্দা। আর যদি তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও, তুমি নিশ্চয় মহাপরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময়”[36]
অনুরূপভাবে কুরআনের আয়াতে চিন্তা করার উপর যে জিনিষটি সহায়ক হয়, তা হল, আয়াত পড়ার সাথে সাথে তা বাস্তবায়ন করা। যেমন, হাদিসে বর্ণিত, হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
صليت مع رسول الله ذات ليلة.. يقرأ مسترسلا، إذا مر بآية فيها تسبيح سبح و إذا مر بسؤال سأل و إذا مر بتعوذ تعوذ
“এক রাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করি, তিনি সালাতে খুব থেমে থেমে পড়ছিল, যখন কোন তাসবীহ বিশিষ্ট আয়াতের তিলাওয়াত করতেন, তখন তাসবীহ পড়তেন, কোন চাওয়ার আয়াত তিলাওয়াত করতেন তখন আল্লাহর নিকট চাইতেন এবং আশ্রয়ের আয়াত তিলাওয়াত করলে, আশ্রয় চাইতেন”[37] অপর এক বর্ণনায়, তিনি বলেন, صليت مع رسول الله ليلة ، فكان إذا مر بآية رحمة سأل ، و إذا مر بآية عذاب تعوذ ، و إذا مر بآية فيها تنزيه لله سبح.  
“এক রাত আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করি, যখন কোনো রহমতের আয়াত পড়তেন, আল্লাহর কাছে রহমত চাইতেন, আর যখন আযাবের আয়াত পড়তেন তখন আযাব থেকে মুক্তি চাইতেন। আর যখন এমন কোনো আয়াত পড়তেন, যাতে আল্লাহর পবিত্রতা রয়েছে তখন তিনি তাসবীহ পড়তেন”[38] তবে বর্ণনাটি এসেছে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নফল সালাতে দণ্ডায়মান হওয়ার সময়ে  
وقام أحد الصحابة ــ وهو قتادة بن النعمان رضي الله عنه ــ الليل لايقرأ إلا (قل هو الله أحد) يرددها لا يزيد عليها
একজন সাহাবী- ক্বাতাদাহ ইবন নু‘মান রাদিয়াল্লাহু আনহু- সারা রাত সালাতে শুধু সূরা এখলাস পাঠ করেন। এ সূরা ছাড়া আর কোনো সূরা তিনি পড়েন নি।[39]
আর সা‘ঈদ ইবন উবাইদ আত-তাঈ রহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবন জুবাইরকে রমাদানে ইমামতি করতে দেখেছি, তিনি শুধু নিম্নোক্ত আয়াতটি বারবার তেলাওয়াত করলেন,  
﴿ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِٱلۡكِتَٰبِ وَبِمَآ أَرۡسَلۡنَا بِهِۦ رُسُلَنَاۖ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُونَ ٧٠ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ فِي ٱلۡحَمِيمِ ثُمَّ فِي ٱلنَّارِ يُسۡجَرُونَ ٧٢﴾ [غافر: ٧٠،  ٧٢]   -
“যারা কিতাব এবং আমার রাসূলগণকে যা দিয়ে আমি প্রেরণ করেছি, তা অস্বীকার করে, অতএব তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলদেশ বেড়ী ও শিকল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, ফুটন্ত পানিতে, অত:পর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হবে।”[40]
কাসেম রহ. বলেন, আমি সা‘ঈদ ইবন জুবাইর রহ. কে এক রাত সালাত আদায় করতে দেখেছি, তিনি নিম্নোক্ত আয়াতটি প‍ঁচিশ বার তেলাওয়াত করেন,
﴿وَٱتَّقُواْ يَوۡمٗا تُرۡجَعُونَ فِيهِ إِلَى ٱللَّهِۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفۡسٖ مَّا كَسَبَتۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ٢٨١﴾ [البقرة: ٢٨١]   -
“আর তোমরা সেদিনের ভয় কর, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা উপার্জন করেছে, তা পুরোপুরি দেয়া হবে। আর তাদের জুলুম করা হবে না।”[41]
কাইস নামক এক ব্যক্তি যার উপাধি আবু আব্দুল্লাহ, তিনি বলেন, একরাত আমি হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট রাত যাপন করি, তিনি রাতে সালাত আদায় করার জন্য দণ্ডায়মান হন এবং ভোর পর্যন্ত এ আয়াত- ﴿وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَا ١٨﴾ [النحل: ١٨] “যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ গণনা করতে থাক, তবে গণনা করে শেষ করতে পারবে না”[42] বার বার পড়তে থাকেন। তারপর যখন সকাল হল, আমরা বললাম, হে আবু সা‘ঈদ! আপনি সারা রাত এ আয়াত কেন তিলাওয়াত করলেন? তিনি বললেন, এ আয়াতে আমি উপদেশ পাই। আমি যেদিকে চোখ তুলি ও চোখ ফিরাই সে দিকে কোনো না কোনো নেয়ামত দেখতে পাই। আর আল্লাহর যে নেয়ামত জানা যায় না, তার পরিমাণ অসংখ্য।[43]
হারূন ইবন রুবাব আল উসাইদি রহ. রাতে যখন তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়াতেন, তখন কখনও কখনও তিনি সকাল পর্যন্ত এ আয়াত-
﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ وُقِفُواْ عَلَى ٱلنَّارِ فَقَالُواْ يَٰلَيۡتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢٧﴾ [الانعام: ٢٧]   
“আর যদি তুমি দেখতে, যখন তাদেরকে আগুনের উপর আটকানো হবে, তখন তারা বলবে, হায়! যদি আমাদেরকে ফেরত পাঠানো হত। আর আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহ অস্বীকার না করতাম এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!”।[44] বার বার তিলাওয়াত করতেন এবং সকাল পর্যন্ত কান্না-কাটি করতেন। 
এ ছাড়াও কুরআন হেফয করা, বিভিন্ন রুকনে পড়ার দোআসমূহ হেফয করা ও পড়ার সময় চিন্তা-ফিকির করা বিষয়ে সহায়তা করে। 
আর এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, চিন্তা করা, ফিকির করা, বার বার তিলাওয়াত করা ও বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি খুশুকে বৃদ্ধি করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩﴾ [الاسراء: ١٠٩]   
“আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে[45]
নিম্নে একটি প্রভাবময় ঘটনা উল্লেখ করা হচ্ছে, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চিন্তা-ফিকির করা ও সালাতে খুশু অবলম্বন করার বর্ণনা আরও স্পষ্ট হয়- আতা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
دخلت أنا وعبيد بن عمير على عائشة رضي الله عنها فقال ابن عمير : حدّثينا بأعجب شيء رأيتيه من رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فبكت وقالت : قام ليلة من الليالي فقال: يا عائشة ذريني أتعبّد لربي ، قالت : قلت : والله إني لأحبّ قربك ، وأحب ما يسرّك ، قالت : فقام فتطهر ثم قام يصلي ، فلم يزل يبكي حتى بلّ حجره ، ثم بكى فلم يزل يبكي حتى بلّ الأرض ، وجاء بلال يؤذنه بالصلاة ، فلما رآه يبكي قال: يا رسول الله، تبكي وقد غفر الله لك ما تقدّم من ذنبك وما تأخّر ؟ قال  «أفلا أكون عبدا شكورا ؟ لقد نزلت عليّ الليلة آيات ويل لمن قرأها ولم يتفكّر ما فيها» : (إن في خلق السموات والأرض... الآية
আমি ও উবাইদ ইবন উমাইর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট প্রবেশ করিইবনু উমাইর রহ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললআপনি আমাদেরকে একটি আশ্চর্য বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিন যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আপনি দেখেছেন। এ কথা বললে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কেঁদে দেন এবং বলেনএক রাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়ান এবং বলেনহে আয়েশা তুমি আমাকে ছাড়আমি আমার রবের ইবাদত করি। আয়েশা বলেনআমি বললামআল্লাহর কসম আমি আপনার নৈকট্যকে পছন্দ করি এবং আপনাকে যে জিনিষ খুশি করে আমি তাই চাই। তিনি বলেনতারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজু করলেনতারপর সালাতে দাঁড়ালেনআর কাঁদতে লাগলেন এমনকি চোখের পানিতে তার কোল ভিজে গেল। তারপর আবারও কাঁদলেনকাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিতে মাটিও ভিজে গেল। এমতাবস্থায় বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে সালাতের খবর দিল। অতঃপর যখন দেখতে পেল তিনি কাঁদছেনতখন বললহে আল্লাহর রাসূল আপনি কাঁদছেন অথচ আল্লাহ তাআলা আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসূল বললেন, “আমি কি শুকর গুজার বান্দা হব নাআজ রাত আমার উপর এমন কতক আয়াত নাযিল হয়েছেযে আয়াতগুলো তিলাওয়াত করার পর যদি কোনো ব্যক্তি তাতে চিন্তা-ফিকির না করেতার জন্য রয়েছে ধ্বংস।”
﴿إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ لَأٓيَٰتٖ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٠﴾ .... [ال عمران: ١٩٠]
“নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত দিনের পরিবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নির্দশন”....[46]
আয়াত তিলাওয়াতের সাথে সাথে সাড়া দেওয়ার একটি উদাহরণ হচ্ছে, সূরা ফাতেহার পর আমীন বলা। এতে রয়েছে অনেক সাওয়াব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন 
«إذا أمَّنَ الإمام فأمِّنُوا فإنه مَن وافق تأمِينُهُ تأمين الملائكة غُفر له ما تقدم من ذنبه»  
“যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলবে, যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে, তার অতীত জীবনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে”।[47]
অনুরূপভাবে ইমামের সাথে উত্তর দেয়া। যেমন, ইমাম যখন سمع الله لمن حمده বলবে, তখন মুক্তাদিরা বলবে,ربنا ولك الحمد এতে রয়েছে অনেক সাওয়াব। যেমন, রিফা‘আ ইবন রাফে‘ আয-যুরাকী বলেন,
كنا يوما نصلي وراء النبي صلى الله عليه وسلم فلما رفع رأسه من الركعة قال: سمع الله لمن حمده ، قال رجل وراءه : ربنا ولك الحمد حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه، فلما انصرف قال «من المتكلم » قال : أنا ، قال : « رأيت بضعة وثلاثين ملكا يبتدرونها أيهم يكتبها أولُ.»
“একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করছিলাম, যখন তিনি রুকু হতে মাথা উঠান তখন বলেন, سمع الله لمن حمده ، ‘আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তার প্রশংসা করে’ এ কথা শোনে পেছন থেকে একলোক বলল, ربنا ولك الحمد حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه ‘হে রব, তোমার জন্যই অধিক প্রশংসা যা পবিত্র ও বরকতময়’। অতঃপর খন রাসূল সালাত শেষ করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথাটির কথক কে? লোকটি বলল, আমি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ত্রিশের অধিক ফেরেশতাকে আমি দেখছি, তারা কে প্রথমে সাওয়াব লিখবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে”[48]

সেজদার দিক দৃষ্টি রাখা:

কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
 (كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا صلى طأطأ رأسه و رمى ببصره نحو الأرض)  
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথা ঝুঁকাতেন এবং চোখ দ্বারা যমিনের দিক দৃষ্টি দিতেন”[66]
অপর এক হাদিসে বর্ণিত,
 (و لما دخل الكعبة ما خلف بصره موضع سجوده حتى خرج عنها).  
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা‘বা ঘরে প্রবেশ করেন, বের না হওয়া পর্যন্ত তার দৃষ্টি সেজদার স্থান হতে অন্য দিকে ফেরান নি”[67]
আর যখন তাশাহ্‌হুদ পড়ার জন্য বসবেন, তখন ইশারার আঙ্গুল যেটি নাড়া-চাড়া করছেন, তার দিকে তাকাবেন। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,
(أنه كان إذا جلس للتشهد يشير بأصبعه التي تلي الإبهام إلى القبلة ويرمي ببصره إليها)
“যখন তিনি তাশাহ্‌হুদের জন্য বসতেন, তখন তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের- সাথে মিলিত আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং চোখ দ্বারা তার দিক দৃষ্টি দিতেন”[68]
মাসআলা:
এখানে একটি প্রশ্ন কতক মুসল্লির অন্তরে ঘুরপাক খাচ্ছে, আর তা হল, সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ রাখার বিধান কি, বিশেষ করে, যখন কোনো মানুষ চোখ বন্ধ করে রাখে, তখন সে সালাতে অধিক খুশু ও মনোযোগ অনুভব করে তখন চোখ বন্ধ করে রাখা যাবে কিনা?
উত্তর: একটু আগেই অতিবাহিত হয়েছে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নিয়মপদ্ধতির পরিপন্থী। কারণ, চোখ বন্ধ করা দ্বারা সেজদা স্থান ও আঙ্গুলের দিক তাকানোর সুন্নাত ছুটে যায়। তবে এখানে বিষয়টিতে বিশ্লেষণ আছে। আমরা ময়দানকে অশ্বারোহীর জন্য ছেড়ে দিলাম। আবু আব্দুল্লাহ ইবনুল কাইউম রহ. বিষয়টি বর্ণনা করেন এবং স্পষ্ট করেন, তিনি বলেন, “সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত বা আদর্শ নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহ্‌হুদ পড়ার সময় দোআতে চোখ দ্বারা আঙ্গুলের দিক দৃষ্টি দিতেন। তার দৃষ্টি তার ইশারার বাইরে যেত না। এছাড়াও সালাতুল কুছুফে (সূর্যগ্রহণের সালাতে) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত দেখেন, তখন তিনি আঙ্গুরের থোকা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ান। অনুরূপভাবে জাহান্নাম দেখা, জাহান্নামে বিড়ালকে কষ্টদানকারীকে দেখা এবং বাঁকা লাঠিধারীকে দেখা (যে লাঠির মাধ্যমে মানুষের সম্পদ নিয়ে নিত)। অনুরূপভাবে, রাসূল কর্তৃক তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জন্তুকে অতিক্রম করা থেকে বাধা প্রদান, অনুরূপভাবে ছেলে শিশু মেয়ে শিশুকে সামনে দিয়ে গমন করতে বাধা প্রদান। দু’ কন্যা সন্তানের মাঝে বাধা দেওয়া। অনুরূপভাবে, সালাতের মধ্যে থাকা অবস্থায় এক লোক তাকে সালাম দিলে, ইশারা করে, তার সালামের উত্তর দেয়া। কারণ, তিনি তো শুধু যাকে দেখেন তার প্রতিই ইশারা করেন। অনুরূপভাবে, সালাতের মধ্যে শয়তান সামনে এলে, তিনি তাকে ধরে গলা টিপে দেন। আর এটি তো ছিল তখনই, যখন তিনি তাকে চোখে দেখেন। এ সব উল্লেখিত হাদিস এবং এ ছাড়াও আরও অন্যান্য হাদিসসমূহ প্রমাণ করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে রাখতেন না।
তবে সালাতে চক্ষুদ্বয় বন্ধ রাখা মাকরূহ হওয়ার বিষয়ে ফিকাহ-বিদদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইমাম আহমদ ও তার সঙ্গীরা বলেন, মাকরূহ। তারা বলেন, এটি ইয়াহূদীদের কর্ম। অপর এক জামাত আলেম এটিকে মুবাহ বলেন, মাকরুহ বলেন না। তবে বিশুদ্ধ কথা হল, যদি চোখ খোলা রাখা দ্বারা সালাতে খুশুর বিঘ্ন না ঘটে তাহলে, চোখ খোলা রাখা উত্তম। আর যদি কিবলার দিক সাজ-সজ্জা, চাক-চিক্ক ও সৌন্দর্য ইত্যাদি থাকে, যা তার অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করে, আর তা থাকার কারণে, সালাতে খুশু অবলম্বন করার বিঘ্ন ঘটে, তাহলে চোখ বন্ধ রাখা কখনোই মাকরূহ হবে না। আর এ অবস্থার আলোকে চোখ বন্ধ রাখাকে মাকরুহ না বলে, মোস্তাহাব বলা, শরীয়তের মূলনীতি ও উদ্দেশ্যসমূহের অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহই ভালো জানেন।[69]
এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, সুন্নত হল, চোখ বন্ধ না রাখা। তবে যদি প্রয়োজন পড়ে অর্থাৎ খুশুতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজকে প্রতিহত করতে চোখ বন্ধ রাখে, তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই

সালাতে কুরআনের সূরা, আয়াত, যিকির ও দো‘আ ইত্যাদিতে ভিন্নতা আনা

একজন মুসল্লিকে যখন সালাতে বিভিন্ন বিষয়বিভিন্ন ধরনের যিকির ও দোআ পাঠ করবেতখন এটি তার মধ্যে নতুন নতুন অনুভূতির যোগান দেবে এবং তার মধ্যে নতুনত্ব আনয়নে সহায়ক হবে তবে যারা সীমিত কয়েকটি সূরা বিশেষ করে শুধু ছোট সূরাগুলো মুখস্থ করে বা দু একটি দোআ মুখস্থ করেএটি তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। মোটকথা, (সূরাআয়াতযিকিরদোআ ইত্যাদিতেভিন্নতা অবলম্বন করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত এবং সালাতে খুশুর পরিপূরক। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় সালাতে যা তিলাওয়াত করতেন এবং যিকির করতেন সেগুলো নিয়ে গবেষণা করলে, আমরা এ ভিন্নতা দেখতে পাব। যেমন,
সালাত শুরু করার পর যে দোআটি পাঠ করা হয়, সে দোআ বিষয়ে আমরা একাধিক বর্ণনা দেখতে পাই। যেমন, একটি বর্ণনায় এ দোআটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে-
  «اللهم باعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب ، اللهم نقني من خطاياي كما يُنقّى الثوب الأبيض من الدّنس ، اللهم اغسلني من خطاياي بالماء والثلج والبرَد »
 “হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গুনাহসমূহের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমনটি করেছেন আসমান ও যমিনের মাঝে। হে আল্লাহ আপনি আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেমনিভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে পানি, শিশির ও বরফ দ্বারা ধুয়ে দিন
আবার একটি বর্ণনায় এ দোআটি পড়ার কথা বলা হয়েছে:
« وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرض حنيفا وما أنا من المشركين ، إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين ، لا شريك له وبذلك أمِرتُ وأنا أول المسلمين »
“আমি আমার চেহারাকে একনিষ্ঠভাবে সে সত্তার জন্য নিবিষ্ট করছি, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার সালাত, আমার নুসুক (ইবাদাত ও কুরবানী) আমার জীবন ও আমার মরণ সবই সৃষ্টিকুলের রব্ব আল্লাহর জন্যই, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি এরই প্রতি আদিষ্ট হয়েছি, আর আমিই প্রথম মুসলিম, (আত্মসমর্পনকারী)
আবার এ দোআটিও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত:
« سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جَدُّك ولا إله غيرك »
অর্থ, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা-মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম অতি বরকতপূর্ণ, আপনার শান সমুচ্চ এবং আপনি ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই”
ইত্যাদি দোআ যিকিরগুলো সম্পর্কে বিধান হল, একজন মুসল্লি এক এক সময় এক একটি দোআ পড়বে। 
আর ফজরের সালাতের সূরা পড়া সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভিন্ন ভিন্ন অনেক বরকতময় কর্ম আমরা পেয়ে থাকি। যেমন, তিনি কখনো ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ তথা ওয়াকি‘আ, তূর, ক্বাফ ইত্যাদি পড়তেন। আবার কখনো ‘কিসারুল মুফাসসাল তথা, আস-সামছ, কুওয়িরাত, যিলযাল, ও ফালাক- নাস পড়তেন। আবার কখনো কখনো, সূরা রূম, ইয়াছিন ও সাফফাতও পড়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে। আর জুমার দিন ফজরের সালাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা সেজদা ও ইনসান পড়তেন।
যোহরের সালাতে দুই রাকাতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন। এছাড়াও তিনি যোহরের সালাতে সূরা তারেক, বুরুজ ও লাইল পড়তেন।
আছরের সালাতে দুই রাকাতে পনের আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন। এছাড়াও তিনি আছরের সালাতে যোহরের সালাতে বর্ণিত সূরাগুলোও (অর্থাৎ সূরা তারেক, বরুজ, লাইল) পড়তেন।
মাগরিবের সালাতে তিনি কিসারুল মুফাসসাল থেকে পড়তেন, যেমন, সূরা আত-তীন তিলাওয়াত করতেন। এছাড়াও তিনি মাগরিবের সালাতে সূরা তূর, মুরসালাত ইত্যাদি পড়তেন।
এশারের সালাতে ‘ওয়াসাতুল মুফাসসাল’ তথা সূরা- আশ-শামস, ইনশিক্কাক ইত্যাদি সূরা তিলাওয়াত করতেন। আর মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সূরা আ‘লা, কলম ও লাইল পড়ার নির্দেশ দেন
তাহাজ্জুদের সালাতে তিনি ‘তিওয়ালাস সূওয়ার’ তথা লম্বা লম্বা সূরাগুলো তিলাওয়াত করতেন। তাহাজ্জুদের সালাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তিলাওয়াতের সুন্নত সম্পর্কে বর্ণিত যে, তিনি দুইশ ও দেড়শ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আবার কখনো কখনো কেরাআত ছোটও করতেন।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর তাসবীহ সব সময় একটি পড়তেন না, এক এক সময় এক একটি পড়তেন। যেমন, কখনো তিনি পড়তেন-
(سبحان ربي العظيم)
কখনো পড়তেন-
(سبحان ربي العظيم وبحمده)
কখনো পড়তেন,
(سُبّوح قُدّوس رب الملائكة والروح)
কখনো পড়তেন,
(اللهم لك ركعت وبك آمنت ولك أسلمت وعليك توكلت أنت ربي ، خشع سمعي وبصري ودمي ولحمي وعظمي وعصبي لله رب العالمين).
রুকু থেকে উঠার পর তিনি বলতেন,
(سمع الله لمن حمده) : (ربنا ولك الحمد)
আবার কখনো বলতেন,
(ربنا لك الحمد)
কখনো বলতেন,
(اللهم ربنا (ولك الحمد)
আবার কখনো আরও বাড়িয়ে বলতেন,
(ملء السموات وملء الأرض وملء ما شئت من شيء بعد)
আবার কখনো এ কথা বাড়িয়ে বলতেন,
(أهل الثناء والمجد ، اللهم لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ، ولا ينفع ذا الجدّ منك الجدّ 
ইত্যাদি। 
সেজদার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(سبحان ربي الأعلى)
বলার সাথে কখনও কখনও এর সাথে বাড়িয়ে আরও বলতেন,
(سبحان ربي الأعلى وبحمده)
এছাড়াও তিনি বলতেন,
(سُبّوح قدوس رب الملائكة والروح 
আরও বলতেন,
(سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي)
এবং
 (اللهم لك سجدت وبك آمنت ولك أسلمت، سجد وجهي للذي خلقه وصوّره وشقّ سمعه وبصره ، تبارك الله أحسن الخالقين)
 ইত্যাদি।
দুই সেজদার মাঝখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
 (رب اغفر لي رب اغفر لي)
এ কথাটি বলতেন।
আবার কখনো আরও বাড়িয়ে বলতেন,
(اللهم اغفر لي وارحمني واجبرني وارفعني واهدني وعافني وارزقني)
অনুরূপভাবে তাশাহ্‌হুদ বিষয়ে হাদিসে একাধিক বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন একটি বর্ণনায় এসেছে,
(التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا و علي عباد الله الصالحين أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে,
(التحيات المباركات الصلوات الطيبات لله، السلام عليك أيها النبي... الخ)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে,
(التحيات الطيبات الصلوات لله ، السلام عليك أيها النبي... الخ).  
ইত্যাদি।
সুতরাং একজন মুসল্লি শুধু একটি পড়বে না বরং কখনো এটি আবার কখনো অপরটি পড়বে।
সালাতে দরূদ পড়া সম্পর্কে ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একাধিক দরূদ বর্ণিত। যেমন-
(اللهم صلّ عل محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعل آل إبراهيم إنك حميد مجيد ، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد).
অপর বর্ণনায় এসেছে,
(اللهم صلّ على محمد وعلى أهل بيته وعلى أزواجه وذريته كما صليت على آل إبراهيم إنك حميد مجيد وبارك على محمد وعلى آل بيته وعلى أزواجه وذريته كما باركت على آل إبراهيم إنك حميد مجيد).   
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
 (اللهم صلّ على محمد النبي الأمي وعلى آل محمد كما صليت على آل إبراهيم وبارك على محمد النبي الأمي وعلى آل محمد كما باركت على آل إبراهيم في العالمين إنك حميد مجيد).
এভাবে আরও বিভিন্ন প্রকারের দরূদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। সুতরাংএসব ক্ষেত্রে সুন্নাত হল, বিভিন্ন সময় বিভিন্নটি পড়া। আর মজবুত দলীল দ্বারা প্রমাণিত হওয়া বা বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাবসমূহে প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে অথবা সাহাবীগণ সালাতের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি যদি কোনো সুনির্দিষ্ট দোআ শেখান, অন্যটি না শেখান,  তবে এসব কারণে যে কোনো একটিকে সব সময় পড়াতে কোনো অসুবিধা নেই। উপরে যে সব দলীল ও দোআ ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো সবই আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. এর লিখিত ‘সিফাতু সালাতির রাসূল’ বা ‘রাসূলল্লাহর সালাত আদায় পদ্ধতি’ নামক কিতাব হতে সংগৃহীত যেগুলোকে হাদিসের বিশুদ্ধ কিতবসমূহ থেকে তিনি একত্র করেছেন।