(১) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল । সে সময় একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল , হে আল্লাহর রাসূল ! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে , পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে । আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন । অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় হস্তদয় উত্তোলন পূর্বক দোয়া করলেন । সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না । (রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খন্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তার মিম্বার থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল । এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তি জুম’আ পর্যন্ত হ’তে থাকল । অতঃপর পরবর্তি জুম’আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে । অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করুন । তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ ! আমাদের পার্শ্ববর্তি এলাকায় বৃষ্টি দাও , আমাদের এখানে নয় । এ সময় তিনি স্বীয় আঙ্গুলী দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করছিলেন । ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল । ( বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১২৭ , হা/৯৩৩ জুম’আর সালাত’ অধ্যায়)
একই বিষয় সম্পর্কিত আরও হাদীস দেখুন – বুখারী প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০২৯ ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায় ।
বৃখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৩৭ ; মুসলিম , প্রথম খন্ড , পৃঃ ২৯৩-২৯৪ ।
মুসলিম , মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইস্তিস্কা’ অনুচ্ছেদ ।
বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০৩১ ; মিশকাত হা/১৪৯৯।
(২) বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ
উপরে এক নম্বরে আলোচিত দলীল সমূহ ।
(৩) চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সময়ঃ
আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) বলেন , আমি রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম । হঠাৎ দেখি সূর্য গ্রহণ লেগেছে । আমি তীর গুলো নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম , আজ সূর্য গ্রহণে রাসূল সাঃ এর অবস্থান লক্ষ্য করব । অতঃপর আমি তাঁর নিকট পৌছলাম । তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি “আল্লাহু আকবার” , “আলহামদু লিল্লাহ” , “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলছিলেন । শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন । (মুসলিম ১ম খন্ড , পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩ , চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত অধ্যায়)
(৪) উম্মাতের জন্য রাসূল সাঃ এর দোয়াঃ
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস রাঃ বলেন , একদা রাসূল সাঃ সূরা ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন , আমার উম্মাত , আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন । তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন , হে জিবরীল ! তুমি আমার মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস কর , কেন তিনি কাঁদেন । অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন । তখন রাসূল সাঃ তাঁকে বললেন , আল্লাহ তায়ালা তা অবগত । অতঃপর আল্লাহ তায়ালা জিবরীলকে বললেন , যাও , মুহাম্মাদকে বল যে , আমি তার উপর এবং তার উম্মাতের উপর সন্তুষ্ট আছি । আমি তার অকল্যাণ কবর না’ (মুসলিম , ১ম খন্ড , পৃ১১৩ , হা/৩৪৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়)
(৫) কবর জিয়ারতের সময়ঃ
আয়েশা রাঃ বলেন , একদা রাতে রাসূল সাঃ আমার নিকটে ছিলেন । শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন । তিনি অল্প সময় এ খেয়ারে থাকলেন যে , আমি ঘুমিয়ে পড়েছি । অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন । তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় তাঁর পিছনে চললাম । তিনি “বাক্বীউল গারক্বাদে” (জান্নাতুল বাক্বী) পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন । অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন । (মুসলিম , ১ম খন্ড , পৃঃ ৩১৩ , হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায় , অনুচ্ছেদ-৩৫)
আয়েশা রাঃ বলেন , কোন এক রাতে রাসূল সাঃ বের হলেন , আমি বারিরা রাঃ কে পাঠালাম , তাঁকে দেখার জন্য যে , তিনি কোথায় যান । তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন । অতঃপর হাত তুলে দোয়া করলেন। তারপর ফিরে আসলেন । বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল । আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম , হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন ? তিনি বললেন জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছিলাম কবর বাসীর জন্য দোয়া করতে । (ইমাম বুখারী , রাফউল ঈয়াদাঈন , পৃঃ ১৭ , হাদীস সহীহ; মুসলিম হা/৯৭৪ (মর্মার্থ))
(৬) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দোয়া:
আউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে আবু আমের স্বীয় ভাতিজা আবু মুসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে , আপনি আমার পক্ষ থেকে রাসূল সাঃ কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন । আবু মুসা আশ’আরী রাঃ রাসূলু্ল্লাহ সাঃ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযু করলেন । এবং হাত তুলে প্রার্থনা করলেন , “হে আল্লাহ ! উবাইদ এবং আবু আমেরকে ক্ষমা করে দাও । (রাবী বলেন) এ সময় আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম ।তিনি বললেন , “হে আল্লাহ ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের উর্ধ্বে করে দিও” ।(বুখারী , ২য় খন্ড , পৃঃ ৯৪৪ , হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু’আ সমূহ’ অধ্যায় )
(৭) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময় :
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাঃ তিনটি জামারায় সাতটি পাথর খন্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন । প্রথম দু’জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দু’আ করতেন । তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না । শেষে বলতেন , আমি রাসূল সাঃ কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি । (বুখারী , ১ম খন্ড , পৃঃ ২৩৬৭ , হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায় )
(৮) যুদ্ধক্ষেত্রে :
ওমর ইবনু খাত্তাব রাঃ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূল সাঃ বদরের যু্দ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার । আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত উনিশ জন । তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করতে লাগলেন । এ সময় তিনি বলছিলেন , ‘হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ । হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামা’আতকে আজ ধ্বংস করে দাও , তাহ’লে এই জমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না । এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলা মুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন । এ সময় তাঁর কাঁধ হতে চাদরখানা পড়ে গেল । আবু বকর রাঃ তখন চাদরখানা কাঁধে তুলে দিয়ে রাসূল সাঃ কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাঃ আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট । নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন । (মুসলিম , ২য় খন্ড , পৃঃ ৯৩ , হা/১৭৬৩ , ‘জিহাদ’ অধ্যায় , অনুচ্ছেদ – ১৮ )
(৯) কোন গোত্রের জন্য দু’আ করা :
আবু হুরায়রা রাঃ বলেন , একদা আবু তুফাইল রাসূল সাঃ এর কাছে গিয়ে বলল , হে আল্লাহর রাসূল ! দাউস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে , আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন । তখন রাসূল সাঃ ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাত তুলে বললেন , হে আল্লাহ ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’। (বুখারী , মুসলিম , ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ , পৃঃ ২০৯ , হা/৬১১ সনদ সহীহ)
(১০) সাফা মারওয়া সায়ী করার সময় :
আবু হুরায়রা রাঃ বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং সাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন । অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলন পুর্বক আল্লাহকে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন । (সহীহ আবু দাউদ , হা/১৮৭২ সনদ সহীহ , মিসকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায় )
(১১) কুনুতে নাযেলার সময় :
আবু উসামা রাঃ হতে বর্ণিত , রাসূল সাঃ কুনুতে নাযেলায় হাত তুলে দু’আ করেছিলেন । (ইমাম বুখারী , রাফউল ঈয়াদাঈন , সনদ সহীহ)