জিন কি মানুষকে আছর করে?

, অবশ্যই জিন মানুষকে আছর করতে পারে। স্পর্শ দ্বারা পাগল করতে পারে। মানুষের উপর ভর করতে পারে। তাকে নিয়ন্ত্র করতে পারে। তার জীবনের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ব্যাহত করতে পারে
এটা বিশ্বাস করতে হয়। তবে এ বিষয়টি কেহ অবিশ্বাস করলে তাকে কাফের বলা যাবে না। সে ভুল করেছে, এটা বলা হবে
জিন যে মানুষকে আছর করে তার কিছু প্রমাণ:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় দাড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয় (সূরা আল বাকারা : ২৭৫)
এ আয়াত দ্বারা যে সকল বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়:
এক. যারা সূদ খায় তাদের শাস্তির ধরণ সম্পর্কে ধারণা
দুই. শয়তান বা জিন মানুষকে স্পর্শ দ্বারা পাগলের মত করতে পারে। 
তিন. মানুষের উপর শয়তান বা জিনের স্পর্শ একটি সত্য বিষয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই
চার. জিন-শয়তানের এ স্পর্শ দ্বারা মানুষ যেমন আধ্যাত্নিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি শারীরিক দিক দিয়েও অস্বাভাবিক হয়ে যায়
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ
আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী (সূরা যুখরুফ : ৩৬)
এ আয়াত দ্বারা যা স্পষ্ট হল : মহান রাহমান ও রহীম আল্লাহ তাআলার জিকির থেকে বিরত থাকা জিন শয়তানের স্পর্শ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটি কারণ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ
আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে (সূরা সাদ : ৪১)
এ আয়াত দ্বারা আমরা স্পষ্টভাবে বুঝলাম:
এক. শয়তান নবী আইউব আলাহিস সালামকে স্পর্শ করে শাররিক রোগ-কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল
দুই. তিনি শয়তানের স্পর্শ থেকে বাচার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছেই প্রার্থনা করেছিলেন
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ
নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায় (সূরা আল আরাফ : ২০১)
এ আয়াত থেকে যা বুঝে আসে তা হল:
এক. যারা মুত্তাকী বা আল্লাহ ভীরু তাদেরকেও জিন বা শয়তান স্পর্শ করতে পারে। তারা মুত্তাকী হয়েও জিন বা শয়তানের আছরে নিপতিত হতে পারে
দুই. যারা মুত্তাকী তাদের শয়তান বা জিন স্পর্শ করলে তারা আল্লাহ-কেই স্মরণ করে। অন্য কোন কিছুর দ্বারস্থ হয় না
তিন. মুত্তাকীগণ জিন বা শয়তান দ্বারা স্পর্শ হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে তাদের সত্যিকার দৃষ্টি খুলে যায়
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা আল আরাফ : ২০০)
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল:
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও জিন-শয়তান আছর করতে পারে
দুই. জিন আছর করলে বা শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে
তিন. সূরা আল ফালাক ও সূরা আন-নাছ হল জিন শয়তানের আছর থেকে আশ্রয় প্রার্থনার অতি মুল্যবান বাক্য। এ আয়াতের তাফসীর দ্বারা এটা প্রমাণিত
হাদীসে এসেছে -
عن عائشة -رضي الله عنها- أنها قالت: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: إن الشيطان يجري من ابن آدم مجرى الدم.  رواه البخاريُّ ومسلم.
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই শয়তান মানুষের রক্তের শিরা উপশিরায় চলতে সক্ষম (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বললেন,
إن عفريتا من الجن تفلت علي البارحة ليقطع علي الصلاة فأمكنني الله منه
গত রাতে একটি শক্তিশালী জিন আমার উপর চড়াও হতে চেয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল আমার নামাজ নষ্ট করা। আল্লাহ তার বিরুদ্ধে আমাকে শক্তি দিলেন (বর্ণনায় : বুখারী, সালাত অধ্যায়)
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত নাসায়ীর বর্ণনায় আরো এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তাকে ধরে ফেললামআছার দিলাম ও গলা চেপে ধরলাম। এমনকি তার মুখের আদ্রতা আমার হাতে অনুভব করলাম
এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম :
এক. জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও আছর করতে চেয়েছিল
দুই. জিনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ নষ্ট করার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল
তিন. ইফরীত শব্দের বাংলা অর্থ হল ভূত। জিনদের মধ্যে যারা দুষ্ট ও মাস্তান প্রকৃতির তাদের ইফরীত বলা হয়
চার. জিন দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন ভয় পাননি। তিনি তার সাথে লড়াই করে পরাস্ত করেছেন
পাঁচ. জিনদের শরীর বা কাঠামো আছে যদিও তা সাধারণত আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না