দান করার পূর্বে যাচাই করা

দানের দ্বারা দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ে যেন উপকৃত হতে পারে সে জন্য প্রকৃত হকদারের নিকট দান সদকা পৌছানো জরুরি। প্রকৃত অভাবী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত না করা গেলে, দান প্রকারান্তরে দাতার ইচ্ছা বহির্ভূত হয়ে যায়। তাই আল্লাহ তাআলা দানের পূর্বে প্রকৃত অভাবীকে অনুসন্ধানের গুরুত্ব দিয়ে বলেন-
(সদকা) সেসব দরিদ্রের জন্য যারা আল্লাহর রাস্তায় আটকে গিয়েছে, তারা জমিনে চলতে পারে না। না চাওয়ার কারণে অনবগত ব্যক্তি তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাকেরকে চিনতে পারবে তাদের চিহ্ন দ্বারা। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না। আর তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, অবশ্যই আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। (সূরা বাকারা : ২৭৩)

মহান আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন,

নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। আর আল্লাহ মহা জ্ঞানী। ( সূরা তাওবা : ৬০) 

বাধ্যতামূলক দান আদায় না করলে গুনাহ হবে। কারণ ঐ সব দান আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন কারণে ফরজ করেছেন। যার বর্ণনা কোরআন এবং হাদীসে সবিস্তারে এসেছে। এই পুস্তিকায়ও আংশিক বর্ণিত হয়েছে। এ সকল দান আদায় করার পর আল্লাহ তাআলা কোনো সাওয়াব যদি বরাদ্দ না দিতেন তাতে বে-ইনসাফি হতো না । কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপন করুণায় এসব ফরজ দানেও বান্দাকে সাওয়াব দিয়ে থাকেন। 

দানের ফজিলত সম্পর্কে আরো কয়েকটি হাদিস: 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ اللَّهُ أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ.  صحيح البخاري 
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন,  ব্যয় কর হে আদম সন্তান! তোমার উপরও ব্যয় করা হবে। (সহিহ বোখারি) 
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ بَعْضَ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْنَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّنَا أَسْرَعُ بِكَ لُحُوقًا قَالَ أَطْوَلُكُنَّ يَدًا فَأَخَذُوا قَصَبَةً يَذْرَعُونَهَا فَكَانَتْ سَوْدَةُ أَطْوَلَهُنَّ يَدًا فَعَلِمْنَا بَعْدُ أَنَّمَا كَانَتْ طُولَ يَدِهَا الصَّدَقَةُ وَكَانَتْ أَسْرَعَنَا لُحُوقًا بِهِ وَكَانَتْ تُحِبُّ الصَّدَقَةَ  . صحيح البخاري
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীদের কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের মধ্যে সর্ব প্রথম কে আপনার সাথে মিলিত হবে। তিনি বললেন,  তোমাদের মধ্যে যার হাত লম্বা সে। তারপর তারা এক টুকরা কাঠ নিয়ে নিজেদের হাত মাপতে লাগলেন। দেখা গেল সাওদা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাত অধিক লম্বা ছিল। পরে আমরা বুঝলাম যে, তার লম্বা হাত দ্বারা সদকায় তার অগ্রসরমানতাকে বুঝানো হয়েছে। আর আমাদের মধ্যে সওদাই প্রথমে তার সাথে মিলিত হয়েছেন। তিনি দান-সদকাকে বেশি ভালোবাসতেন। ( সহিহ বোখারি) 
عَنْ عُقْبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْه قَالَ صَلَّيْتُ وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ الْعَصْرَ فَسَلَّمَ ثُمَّ قَامَ مُسْرِعًا فَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ إِلَى بَعْضِ حُجَرِ نِسَائِهِ فَفَزِعَ النَّاسُ مِنْ سُرْعَتِهِ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ فَرَأَى أَنَّهُمْ عَجِبُوا مِنْ سُرْعَتِهِ فَقَالَ ذَكَرْتُ شَيْئًا مِنْ تِبْرٍ عِنْدَنَا فَكَرِهْتُ أَنْ يَحْبِسَنِي فَأَمَرْتُ بِقِسْمَتِهِ  . صحيح البخاري 
উকবা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আমি মদিনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে আসরের নামজ আদায় করলাম। তিনি সালাম ফিরালেন অত:পর দ্রুত উঠে দাড়ালেন এবং মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে তার কোনো এক স্ত্রীর কামরায় গেলেন। তাঁর তাড়াহুড়ো দেখে লোকজন আতঙ্কিত হলো। অত:পর তিনি আবার ফিরে এলেন এবং বুঝতে পারলেন যে লোকজন তার তাড়াহুড়ো দেখে বিস্মিত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, আমাদের কাছে রক্ষিত কিছু স্বর্ণের কথা আমার স্মরণ হয়েছে। তাই আমি অপছন্দ করলাম যে, এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে যেন আমার অন্তরায় হয়। ফলে আমি তা বন্টন করে দেয়ার জন্য আদেশ করে এলাম। ( সহিহ বোখারি)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلَّا عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللَّهُ  . صحيح مسلم 
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সদকা সম্পদ হ্রাস করে না। কাউকে ক্ষমা করলে এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধিই করে থাকেন। এবং যে কেউ আল্লাহর জন্য বিনম্র হয়, আল্লাহ তার মর্যদা বাড়িয়েই দেন। (সহিহ মুসলিম)
সম্মানিত পাঠক, সম্পদ মহান আল্লাহর দান। যার পূর্ণ ও প্রকৃত মালিকানা তাঁরই। আমাদের কেবলমাত্র নির্দিষ্ট মেয়াদে ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন। মৃত্যুর পর এই সম্পদই অন্যের হয়ে যাবে। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো সময় থাকতেই পরকালের জন্য এ সম্পদ থেকে প্রেরণ করে সেই জীবনের রাস্তা সুগম করা এবং দান-সদকার মাধ্যমে গরিব-দুখি-অনাথদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় ও ভ্রাতৃত্বের হক পূরণে সচেষ্ট থাকা। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য তা সহজ করে দিন। আমিন।