জাকাত বা ওশর প্রসঙ্গ

زكاة জাকাত এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি ও পবিত্র হওয়া। ইসলামি পরিভাষায় জাকাত বলা হয়, শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী স্বীয় মালের একটা নির্ধারিত অংশ তার হকদারদের মাঝে বন্টন করা এবং তার আয় হতে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা। 

عُشْرٌ  ওশর এর অর্থ হচ্ছে উৎপন্ন শস্যের এক দশমাংশ দান করা। অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে ও বিনা সিঞ্চনে উৎপাদিত শস্যের দশ ভাগের এক ভাগ বা বিশ মণে দুই মণ, আর সিঞ্চনের মাধ্যমে উৎপাদিত হলে নিসফ ওশর বা বিশ মণে এক মণ বর্ণিত নিয়মানুসারে দান করে দেয়া। 

উল্লেখ্য, হিজরি ২য় সনে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে জাকাত বিস্তারিত বিবরণসহ ফরজ হয়। 
স্মর্তব্য,  জাকাত আদায়ের মাধ্যমে মাল-সম্পদ বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। আর আদায়কারী (জাকাত দাতা) কৃপণতার দোষ হতে প্রবিত্রতা লাভে ধন্য হয়। সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলাও খুশি হন। বস্তুত: জাকাত হচ্ছে ইসলামের ৩য় স্তম্ভ। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে:
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ .   رواه  البخاري 
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত। এক. সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল। দুই. নামাজ কায়েম করা। তিন. জাকাত প্রদান করা। চার.  হজ্জ সম্পাদন করা। পাঁচ. রমজান মাসে রোজা রাখা। বোখারি। 
এ হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাকাতকে ইসলামরে ৩য় স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করছেন। তাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই তো দেখা যায় পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অনেক বেশি পরিমাণে এর উপকারিতার বর্ণনা এসেছে। প্রায় জায়গাতেই নামাজের পাশাপাশি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়ে নামাজের মতই এর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পার্থক্য এই যে নামজ কায়িম করা প্রাপ্ত বয়স্ক ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক, আর জাকাত আদায় করা কেবল ধনীদের জন্য ফরজ। এছাড়া নামাজের হুকম দৈনিক পাঁচ বার পালনীয়। আর জাকাত প্রতি বছর মাত্র একবার আদায় করা কর্তব্য। বস্তুত: নামজ হচ্ছে ইবাদতে বদনি বা শারীরিক ইবাদত, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দ্বারা সম্পাদন করতে হয়। আর জাকাত হচ্ছে, ইবাদতে মালী বা আর্থিক ইবাদত যা সাধারণত: অর্থ, সম্পদ ব্যয় ও দানের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হয়।

জাকাত প্রদানের নির্দেশ অবশ্য পালনীয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনুল কারিমে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। বিশেষত: নামাজের নির্দেশের পরপরই জাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই জাকাতের গুরুত্বকে কোনোক্রমেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলক দানসমূহের মধ্যে জাকাতই হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাপকদের অভাব পূরণে প্রধানতম সহায়ক দান। তাই এখানে জাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং জাকাত না দেয়ার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। 

নামাজের পাশাপাশি জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন: 
 ‘আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও জাকাত দাও এবং যে নেক আমল তোমরা নিজেদের জন্য আগে প্রেরণ করবে তাই আল্লাহর নিকট পাবে। সূরা বাকারা, ১১০

জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীকে বলেন:
 ‘ তুমি তাদের মাল হতে সদকাহ (জাকাত) গ্রহণ কর। যা দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে। ( সূরা তাওবা : ১০৩)

জাকাত ও ওশর গ্রহণ এবং উত্তম বস্তু ব্যয়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: 
হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্তু, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে এবং নিকৃষ্ট বস্তুর ইচ্ছা করো না যে, তা থেকে তোমরা ব্যয় করবে। অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া যা তোমরা গ্রহণ করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত। (সূরা বাকারা: ২৬৭)

জাকাত ফরজ হওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম. বলেন: 
ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَنَسٍ أَنَّ أَنَسًا حَدَّثَهُ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَتَبَ لَهُ هَذَا الْكِتَابَ لَمَّا وَجَّهَهُ إِلَى الْبَحْرَيْنِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ هَذِهِ فَرِيضَةُ الصَّدَقَةِ الَّتِي فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ وَالَّتِي أَمَرَ اللَّهُ بِهَا رَسُولَهُ فَمَنْ سُئِلَهَا مِنْ الْمُسْلِمِينَ عَلَى وَجْهِهَا فَلْيُعْطِهَا وَمَنْ سُئِلَ فَوْقَهَا فَلَا يُعْطِ . رواه البخاري 
‘ছুমামা বিন আব্দুল্লাহ বিন আনাস বলেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু তাকে বলেছেন যে, তাকে যখন খলিফা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বাহরাইনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠাচ্ছিলন, তখন তাকে এ নির্দেশ নামাটি লিখে দিয়েছিলেন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এটা ফরজ সদকা বা জাকাত যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের প্রতি ফরজ করে দিয়েছেন এবং যার নির্দেশ আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে দিয়েছেন। যে কোনো মুসলমানের নিকট এটা নির্দিষ্ট নিয়মে চাওয়া হবে, সে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যার নিকট এর অধিক চাওয়া হবে সে যেন না দেয়। ........বোখারি। 

একই বিষয়ে অপর এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: 
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ فَإِذَا جِئْتَهُمْ فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ. رواه البخاري
‘ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুয়ায বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়েমের উদ্দেশ্যে পাঠানোর সময় বললেন: তুমি আহলে কিতাবদের নিকট যাচ্ছ। তুমি প্রথমে তাদেরকে এ ঘোষণা বা সাক্ষ্য দিতে আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। অত:পর তারা যদি এটাও মেনে নেয় তখন তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর সদকা (জাকাত) ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হবে। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে সাবধান!  জাকাত গ্রহণের সময় তুমি বেছে বেছে শুধু তাদের উত্তম জিনিসসমূহ নিবে না। আর সতর্ক থাকবে মজলুমের অভিশাপ হতে। কেননা মজলুমের বদদুআ ও আল্লাহর মধ্যে কোন আড়াল নেই। বোখারি। 

জাকাত ফরজ হওয়ার প্রমাণে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস: 
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ{ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ }قَالَ كَبُرَ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَا أُفَرِّجُ عَنْكُمْ فَانْطَلَقَ فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّهُ كَبُرَ عَلَى أَصْحَابِكَ هَذِهِ الْآيَةُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَفْرِضْ الزَّكَاةَ إِلَّا لِيُطَيِّبَ مَا بَقِيَ مِنْ أَمْوَالِكُمْ وَإِنَّمَا فَرَضَ الْمَوَارِيثَ لِتَكُونَ لِمَنْ بَعْدَكُمْ فَكَبَّرَ عُمَرُ ثُمَّ قَالَ لَهُ أَلَا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ  سنن أبي داود 
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হল, ‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌যারা সোনা রুপা জমা করে’ মুসলমানদের নিকট এটা কষ্টসাধ্য বোধ হলো। অত:পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: আমি তোমাদের এ কষ্ট দূর করব। তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট গেলেন এবং বললেন: হে আল্লাহর নবী! এ আয়াতটি আপনার সহচরদের উপর ভারিবোধ হচ্ছে। তখন তিনি বললেন: ‌‌‌‌’ আল্লাহ তাআলা এজন্যই জাকাত ফরজ করেছেন, যাতে তোমাদের অবশিষ্ট মালকে পবিত্র করে নেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মীরাস ফরজ করেছেন। যাতে তা তোমাদের পরবর্তীদের জন্য হয়। এ কথা শুনে উমর রা. ‌’আল্লাহু আকবার’  বলে উঠলেন। অত:পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি কি তোমাকে মানুষ যা সংরক্ষণ করে, তার মধ্যে উত্তম কোনটি সে বিষয়ে বলব না ? সেটি হলো নেককার নারী (স্ত্রী), যখন সে তার দিকে তাকায় সন্তুষ্ট (ও আনন্দিত) করে দেয়। যখন কোনো নির্দেশ দেয় তা পালন করে আর যখন সে তার নিকট হতে দূরে থাকে সে তার হক সংরক্ষণ করে। ( বর্ণনায় আবু দাউদ)

বাধ্যতামূলক দানসমূহের মধ্যে জাকাত ও ওশর প্রদানের হুকুম যে অবশ্য পালনীয়, তার প্রমাণে আল্লাহর পবিত্র কালাম কোরআন মাজিদের পাশাপাশি উপরের তিনটি হাদীসও বিশেষভাবে প্রনিধান যোগ্য। যাতে বিদালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে জাকাতের ফরজিয়ত বা আবশ্যিকতা বিবৃত হয়েছে। ফলে জাকাত ফরজ হওয়ার ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। 

জাকাত অস্বীকারীর পরিণতি 

জাকাত না দেয়ার পরিণতি সম্পর্কে সহিহ মুসলিমে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, 
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ أَنَّ أَبَا صَالِحٍ ذَكْوَانَ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِينُهُ وَظَهْرُهُ كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيدَتْ لَهُ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ 
   
‘যায়েদ বিন আসলাম হতে বর্ণিত, আবু সালেহ যাকওয়ান তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সোনা রুপার মালিক যে এর হক আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত বানানো হবে, অত:পর সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে ছেকা দেয়া হবে। যখনই তা ঠাণ্ডা হয়ে আসবে, পুনরায় গরম করা হবে অর্থাৎ এভাবে তার শাস্তি হতে থাকবে। সেই দিনে, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছেরর সমান। চলতে থাকবে এ আজাব যতক্ষণ না বান্দাদের বিচার শেষ হবে। অত:পর সে তার পথ দেখতে পাবে জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে। 
قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْإِبِلُ قَالَ وَلَا صَاحِبُ إِبِلٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا وَمِنْ حَقِّهَا حَلَبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَتْ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا فَصِيلًا وَاحِدًا تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّهُ بِأَفْوَاهِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّار
‘জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূর ! উট সম্পর্কে কী হুকম ? অর্থাৎ কেউ যদি উটের জাকাত না দেয়, তার কী হবে? তিনি বললেন: উটের মালিক, যে তার জাকাত না দিবে, আর তার হকসমূহ থেকে পানি পানের তারিখে তার দুধ দোহন করাও একটি হক। যখন কিয়ামতের দিন আসবে, নিশ্চয় সেদিন তাকে এক সমতল ধু ধু ময়দানে উপুড় করে ফেলা হবে, আর তার উটের একটি বাচ্চাও সেদিন হারাবে না, আর তাকে তাদের ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে,  এবং মুখ দ্বারা কামড়াতে থাকবে। এভাবে যখন শেষদল অতিক্রম করবে পুন:রায় প্রথমদল এসে পৌছবে। এরূপ করা হবে সেই দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা চূড়ান্ত না হবে। অত:পর সে তার পথ দেখতে পাবে জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে। 
ِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ قَالَ وَلَا صَاحِبُ بَقَرٍ وَلَا غَنَمٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ وَلَا جَلْحَاءُ وَلَا عَضْبَاءُ تَنْطَحُهُ بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ
 ‘জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল ! গরু এবং ছাগলের ক্ষেত্রে কী হবে ? তিনি বললেন; গরু ছাগলের মালিক যে তার হক আদায় করবে না অর্থাৎ জাকাত দিবে না, কিয়ামত দিবসে অবশ্যই তাকে এক ধু-ধু মাঠে উপুড় করে ফেলা হবে আর তার গরু ছাগলগুলির একটিও অনুপস্থিত থাকবে না, এবং তাতে একটিও ল্যাংড়া, শিং বিহীন ও কান কাটা হবে না। সেগুলো তাকে শিং দিয়ে মারতে থাকবে, ও ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে। যখন তাদের প্রথমদল অতিক্রম করবে, শেষদল এসে পৌছবে। এরূপ করা হবে সেদিন যেদিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর বান্দাদের বিচারকার্য শেষ না হবে। অত:পর সে তার পথ দেখতে পাবে জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে। 
قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْخَيْلُ قَالَ الْخَيْلُ ثَلَاثَةٌ هِيَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ فَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْرًا وَنِوَاءً عَلَى أَهْلِ الْإِسْلَامِ فَهِيَ لَهُ وِزْرٌ وَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ سِتْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللَّهِ فِي ظُهُورِهَا وَلَا رِقَابِهَا فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ وَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لِأَهْلِ الْإِسْلَامِ فِي مَرْجٍ وَرَوْضَةٍ فَمَا أَكَلَتْ مِنْ ذَلِكَ الْمَرْجِ أَوْ الرَّوْضَةِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا كُتِبَ لَهُ عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَاتٌ وَكُتِبَ لَهُ عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَاتٌ وَلَا تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ آثَارِهَا وَأَرْوَاثِهَا حَسَنَاتٍ وَلَا مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلَى نَهْرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلَا يُرِيدُ أَنْ يَسْقِيَهَا إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ  قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْحُمُرُ قَالَ مَا أُنْزِلَ عَلَيَّ فِي الْحُمُرِ شَيْءٌ إِلَّا هَذِهِ الْآيَةَ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ { فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ } . صحيح مسلم
 ‘তারপর বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল !  ঘোড়ার হুকুম কী?  তিনি বললেন: ঘোড়া তিন প্রকারের (ক) কারো জন্য গুনাহর কারণ (খ) কারো জন্য ঢাল স্বরূপ (গ) কারো জন্য সাওয়াবের উপকরণ স্বরূপ । যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য গোনাহের কারণ, তা হলো সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে বেধে রেখেছে লোক দেখানো, গর্ববোধ এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতার উদ্দেশ্যে, এ ঘোড়া হলো মালিকের জন্য গুনাহের কারণ। আর যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে ঢাল স্বরূপ, তা হলো সে ব্যক্তির ঘোড়া যে তাকে আল্লাহর রাস্তায় বেধেছে অপ:পর তার ও তার পিঠ সম্পর্কে আল্লাহর হক বি:স্মৃত হয়নি । এ ঘোড়া হলো তার ঢাল স্বরূপ। আর যে ঘোড়া মালিকের পক্ষে সাওয়াবের কারণ, তা হলো সে ব্যক্তির ঘোড়া যে তাকে বেধেছে কোনো চারণ ভূমিতে বা ঘাসের বাগানে শুধু আল্লাহর রাস্তায় মুসলমানের জন্য। তখন তার ঘোড়া চারণভূমি অথবা বাগানের যা কিছু খাবে, সে পরিমাণে তার মালিকের জন্য নেকি লেখা হবে। আরো লেখা হবে তার গোবর ও প্রস্রাব সমপরিমাণ নেকি। আর যদি ঘোড়া তার রশি ছিড়ে একটি কিংবা দুটি মাঠও বিচরণ করে তবে নিশ্চয় তার পদচিহ্ন ও গোবরসমূহ পরিমাণ নেকী মালিকের জন্য লেখা হবে। আর যদি ঘোড়ার মালিক কোন নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম কালে ঘোড়া ঐ নদী থেকে পানি পান করে অথচ মালিকের পান করানো ইচ্ছা ছিল না। তার পরও আল্লাহ তাআলা পানি পানের পরিমাণ তাকে সাওয়াব দান করবেন। 
‘অত:পর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! গাধার ক্ষেত্রে হুকুম কী?  তিনি বললেন: গাধার ব্যাপারে আমার প্রতি কিছু অবর্তীণ হয়নি, ব্যাপক অর্থবোধক এই আয়াতটি ব্যতীত যার অর্থ-যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ ভাল কাজ করবে, সে তা প্রত্যক্ষ করবে আর যে এক অণু পরিমাণ মন্দকাজ করবে, সে তা প্রত্যক্ষ করবে। (অর্থাৎ গাধার জাকাত দিলে তারও সাওয়াব পাওয়া যাবে)  [সহিহ মুসলিম] 

জাকাত আদায় না করার শাস্তি 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ ﯲ   ﯳ  ﯴ  ﯵ  ﯶ    ﯷ  ﯸ  ﯹ  ﯺ  ﰊ   إِلَى آخِرِ الْآيَةِ  )صحيح البخاري(
‘আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে তার জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার জন্য তার সম্পদকে বিষধর (অজগর) সাপের রূপ ধারণ করানো হবে-যার দুই চোখের উপর দুটি কালো দাগ থাকবে । অত:পর তার গলার বেড়ী হয়ে তার মুখের দুদিক তাকে দংশন করতে থাকবে। এবং বলতে থাকবে আমি তোমার মাল, আমি তোমার সংরক্ষিত সম্পদ। অত:পর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন: 
ﯲ   ﯳ  ﯴ  ﯵ  ﯶ    ﯷ  ﯸ  ﯹ  ﯺ  
[বর্ণনায় সহিহ বোখারি, জাকাত অধ্যায় ]

উল্লেখিত বিষয়ে আল্লাহর নবী আরো বলেন: 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُونُ كَنْزُ أَحَدِكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ يَفِرُّ مِنْهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يَطْلُبُهُ حَتَّى يُلْقِمَهُ أَصَابِعَهُ . مسند أحمد
‘আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো কারো সংরক্ষিত মাল কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপ হবে, তা থেকে তার মালিক পলায়ন করতে চাইবে। কিন্তু উক্ত সাপ তাকে অনুসন্ধান করতে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার নিজ আঙ্গুলসমূহ সাপের মুখে পুরে না দিবে। [মুসনাদে আহমদ]

জাকাত অস্বীকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنْ الْعَرَبِ فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَيْفَ نقَاتِلُ النَّاسَ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَمَنْ قَالَهَا فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللَّهِ فَقَالَ وَاللَّهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ وَاللَّهِ لَوْ مَنَعُونِي عَنَاقًا كَانُوا يُؤَدُّونَهَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهَا قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَوَاللَّهِ مَا هُوَ إِلَّا أَنْ قَدْ شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ صحيح البخاري
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন।(আমাদের মাঝে তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত খলিফা) ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। এবং আরবদের অনেকেই কাফের হয়ে গেল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমারা কিভাবে মানুষের সাথে যুদ্ধ করব? অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমি মানুষের সাথে যুদ্ধের আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যতক্ষণ না তারা বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যখনই কেউ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, সে আমার থেকে তার জান মাল রক্ষা করল। তবে ইসলামের অপরাপর বিধানের কারণে এবং তার হিসাব আল্লাহর উপর। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম ! যে জাকাত এবং নামাজের মাঝে পার্থক্য করবে নিশ্চয়ই আমি তার সাথে যুদ্ধ করব। কেননা জাকাত হচ্ছে সম্পদের হক। আল্লাহর শপথ তারা যদি ছাগলের একটি বাচ্চা আমাকে দিতে অস্বীকার করে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদান করতো। তবও আমি তা না দেয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,  অত:পর আমি বুঝতে পারলাম আল্লাহ তাআলা (প্রকৃত সত্য উপলদ্ধি করার জন্য) আবু বকরের বক্ষ উন্মোচিত করে (তাওফিক) দিয়েছেন। এবং বুঝলাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সিদ্ধান্তই সঠিক। 

বিভিন্ন সম্পদের নিসাবের পরিমান বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنْ التَّمْرِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنْ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ مِنْ الْإِبِلِ صَدَقَةٌ  صحيح البخاري 
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম খেজুরে জাকাত নেই। পাঁচ উকিয়া এর কম রূপাতে জাকাত নেই, পাঁচ যাউদ এর কম উটে জাকাত নেই। (বোখারি, মুসলিম)

(১)  ৬০ সা- এ এক ওয়াসাক হয়। আর এক সা সমান দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম সে হিসাব অনুযায়ী মোটামুটি ৫ ওয়াসাক সমান ২০ মণ। অর্থাৎ উৎপাদিত খেজুর ২০ মণ হলে তার উপর জাকাত ফরজ হয় এর কম হলে জাকাত ফরজ হবে না। 

(২) ৪০ দিরহামে হয় এক উকিয়া। ৫ উকিয়া সমান ২০০ দিরহাম। ২০০ দিরহাম সমান সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এর কম পরিমাণ রূপায় জাকাত ফরজ হয় না। 

(৩) যাউদ, তিন হতে দশ পর্যন্ত উটের পালকে যাউদ বলে। এখানে হাদীসের মর্ম এই যে, 5 উটের কমে জাকাত ফরজ হয় না। যা অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন গরু ৩০ টির কম, ছাগল ভেড়া ৪০ টির কমে জাকাত ফরজ হয় না। 

জাকাত- ওশর আদায়ে সর্তকতা

عَنْ عَدِيِّ بْنِ عَمِيرَةَ الْكِنْدِيِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلٍ فَكَتَمَنَا مِخْيَطًا فَمَا فَوْقَهُ كَانَ غُلُولًا يَأْتِي بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ  صحيح مسلم 
আদী ইবনে আমীরাহ আল কিনদী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে থেকে আমি যাকে কোনো কর্মে নিযুক্ত করি,  আর সে আমাদের নিকট হতে একটি সুচ অথবা তদপেক্ষা ছোট কিছু গোপন করে, তবে তা হবে খিয়ানত, যা নিয়ে সে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। সহিহ মুসলিম,

জাকাত ফরজ হওয়ার সময় ও নিয়ম

عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكَاةَ عَلَيْهِ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ سنن الترمذي
‘ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কারো অর্জিত সম্পদে জাকাত নেই যতক্ষণ না তার উপর এক বছর অতিবাহিত হয়। (তিরমিজি)

একই প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরো একটি হাদীস,
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَإِذَا كَانَتْ لَكَ مِائَتَا دِرْهَمٍ وَحَالَ عَلَيْهَا الْحَوْلُ فَفِيهَا خَمْسَةُ دَرَاهِمَ وَلَيْسَ عَلَيْكَ شَيْءٌ يَعْنِي فِي الذَّهَبِ حَتَّى يَكُونَ لَكَ عِشْرُونَ دِينَارًا فَإِذَا كَانَ لَكَ عِشْرُونَ دِينَارًا وَحَالَ عَلَيْهَا الْحَوْلُ فَفِيهَا نِصْفُ دِينَارٍ فَمَا زَادَ فَبِحِسَابِ ذَلِكَ قَالَ فَلَا أَدْرِي أَعَلِيٌّ يَقُولُ فَبِحِسَابِ ذَلِكَ أَوْ رَفَعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَيْسَ فِي مَالٍ زَكَاةٌ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ إِلَّا أَنَّ جَرِيرًا قَالَ ابْنُ وَهْبٍ يَزِيدُ فِي الْحَدِيثِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ فِي مَالٍ زَكَاةٌ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ.  سنن أبي داود 
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। যখন তোমার নিকট দু‌’শত দিরহাম ( সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা) জমা হয় এবং একটি বছর তার উপর পূর্ণ হবে, তখন তাতে ৫ দিরহাম জাকাত দিতে হবে। আর তোমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত জাকাত দিতে হবে না যতক্ষণ না তোমার নিকট ২০টি দীনার (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ)  জমা হওয়ার পর এক বছর পূর্ণ হবে। এতে তোমাকে দিতে হবে (৪০ ভাগের এক ভাগ) অর্ধ দীনার। আর এর অধিক হলে, ঐ অনুপাতে হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। বর্ণনাকারী বলেন: আমার জানা নেই ‘ঐ অনুপাতে হিসাব করে জাকাত দিতে হবে’ বাক্যটি আলী নিজে থেকে বলেছেন নাকি রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেছে। আর জমাকৃত কোনো সম্পদে এক বছর অতিবাহিত না হলে জাকাত দিতে হবে না। ( সুনান আবু দাউদ)

ওশর আদায় প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম:
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِيمَا سَقَتْ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ. صحيح البخاري
إذا كانَ بَعْلًا الْعُشْرُ وَفِيمَا سُقِيَ بِالسَّوَانِي أَوْ النَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ. سنن أبي داود 
‘সালেম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা হতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে জমি আসমানের পানি এবং নদী খাল বিল প্রভৃতির পানি দ্বারা সিক্ত হয়েছে অথবা যে জমির মাটি খুব উর্বর ও রসালো, সে জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক দশমাংশ ওশর দিতে হবে। আর যে জমিতে পানি সিঞ্চন করতে হয় তা হতে উৎপাদিত ফসলের বিশভাগের এক ভাগ অর্থাৎ অর্ধওশর দিতে হবে। 
সুনান আবু দাউদে আরো একটু ব্যাখ্যা আছে, তাহলো জমির মাটি রসালো হলে দশ ভাগের একভাগ আর পশুর সাহায্যে অথবা অন্য কোনোভাবে সিঞ্চিত পানি দ্বারা উৎপাদিত ফসলের বিশভাগের একভাগ দিতে হবে। 

অগ্রিম জাকাত প্রদান প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: 
عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ الْعَبَّاسَ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي تَعْجِيلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ أَنْ تَحِلَّ فَرَخَّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ.  سنن الترمذي 
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বছর পূর্ণ হওয়ার আগে অগ্রিম জাকাত প্রদান প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছেন। ( সুনান তিরমিজি)

কৃপণতা করে যারা জাকাত ও ওশর প্রদান করে না তাদের শাস্তি 

মহান আল্লাহ বলেন:
আর যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে অথচ তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না। তাদের যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দিন। যেদিন সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অত:পর তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ এবং তাদের পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে। ( এবং বলা হবে) এ হলো যা তোমরা তোমাদের জন্য সঞ্চয় করেছিলে, এখন তার স্বাদ গ্রহণ করো যা তোমরা সঞ্চয় করেছিলে। (সূরা তাওবা:৩৪-৩৫)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,    
আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহ থেকে যাদের দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন এরূপ মনে না করে যে তারা ভালো করেছে। বরং তা তাদের জন্য অমঙ্গলজনক। কিয়ামত দিবসে যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছে তা দিয়ে বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১৮০)

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, 
যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর গোপন করে তা, যা আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন। আর আমি প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাকর আজাব। ( সূরা নিসা : ৩৭)

আরো ইরশাদ হচ্ছে
নিশ্চয় আমি এদেরকে পরীক্ষা করেছি,  যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদের। যখন তারা কসম করেছিল যে, অবশ্যই তারা সকাল বেলা বাগানের ফল আহরণ করবে। আর তারা ইনশা আল্লাহ বলেনি। অত:পর তোমার রবের পক্ষ থেকে এক প্রদক্ষিণকারী (আগুন) বাগানের ওপর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে গেল,  আর তারা ছিল ঘুমন্ত। ফলে তা (পুড়ে) কালো বর্ণের হয়ে গেল। তারপর সকাল বেলা তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও তাহলে বাগানে যাও। তারপর তারা চলল, নিম্নস্বরে একথা বলতে বলতে যে, আজ সেখানে তোমাদের কাছে কোনো অভাবী যেন প্রবেশ করতে না পারে। আর তারা ভোর বেলা দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি নিয়ে সক্ষম অবস্থায় (বাগানে) গেল। তারপর তারা যখন বাগানটি দেখল, তখন তারা বলল, অবশ্যই আমরা পথভ্রষ্ট। বরং আমরা বঞ্চিত। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ব্যক্তিটি বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, তোমরা কেন (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠ করছ না ?  তারা বলল, আমরা আমাদের রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমরা যালিম ছিলাম। তারপর তারা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল। তারা বলল, হায় আমাদের ধবংস! নিশ্চয় আমরা সীমা লঙ্ঘনকারী ছিলাম। সম্ভবত: আমাদের রব আমাদেরক এর চেয়েও উৎকৃষ্টতর বিনিময় দেবেন। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের প্রতি আগ্রহী। এভাবেই হয় আজাব। আর পরকালের আজাব অবশ্যই আরো বড়, যদি তারা জানত। ( সূরা কলম: ১৭-৩৩)

মূলত: আয়াগুলোতে ঐতিহাসিক একটি ঘটনা আমাদেরকে অবগত করানোর জন্য অবর্তীণ হয়েছে। যা ঈসা আ: কে আসমানে উঠিয়ে নেয়ার কিছুকাল পরে সংঘটিত হয়। ইয়েমেনের রাজধানী সানআ শহর থেকে ৬ মাইল দূরে আয়াতে বর্ণিত বাগানটি অবস্থিত ছিল। বাগানের মালিক আসমানি কিতাবে বিশ্বাসী ছিল। বাগানের মালিক বাগান থেকে যে ফলমূল আহরণ করতেন তা থেকে একটি বৃহৎ অংশ গরিব মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করতেন। এ কারণে ফল আহরণের সময় বিপুল সংখ্যক গরিব -মিসকিন সেখানে জমা হতো। এভাবে মিসকিনদের সাহায্য করা, বাগানের মালিকের চিরাচরিত অভ্যাসে পরিণত হলো। এ নেক কাজের বরকতে বাগানে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রচুর ফলন হতো। বাগানের মালিকের ইন্তেকালের পর তার ওয়ারিসগণ পিতার দানের সিলসিলাকে তাদের সুখের অন্তরায় মনে করল। বলল: আমাদের পিতা হলো আহমক। দান খয়রাত না করলে আমাদের সম্পদ অনেক জমা হতো। দান খয়রাত আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ফসল কাটার সময় হলে তারা পরামর্শ করে অতি সঙ্গোপনে খুব ভোরে ফসল কাটার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করে নিল। যাতে ফকির মিসকিন জানতে না পারে। তারা দান না করার জন্য এতোই বেসামাল হয়ে পড়েছিল যে, ভোরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ইনশা আল্লাহ বলাও ভুলে গিয়েছিল। তাদের এই দূরভিসন্ধির কারণে সে রাতেই তারা ঘুমে থাকতেই বাগানে আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন আজাব আপতিত হলো যে, নিমিষের মধ্যেই সব পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। পরামর্শ মত ভোরে যখন তারা সেখানে পৌছলো, বাগানের ধবংসলীলা দেখে প্রথমে তারা ভাবলো আমরা রাস্তা ভুল করে এখানে এসে পড়েছি। পরক্ষণে বাগানের পাশের অন্যান্য চিহ্ন দেখে বুঝতে পারলো যে, রাস্তা ভুল হয়নি বরং এটা গরিবের হক নষ্ট করার মত কু-চিন্তার ফল । যদিও তারা পরক্ষণে আপনাপন ভুল বুঝতে পেরে তওবা করেছিল। তাফসিরে ইবনে কাসিরসহ অনেক তাফসির গ্রন্থে এ ঘটনার বর্ণনা এসেছে। 

বনী ইসরাঈলের শিক্ষণীয় একটি ঘটনা 

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حَدَّثَهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ ثَلَاثَةً فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ أَبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى بَدَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَبْتَلِيَهُمْ فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ مَلَكًا فَأَتَى الْأَبْرَصَ فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ لَوْنٌ حَسَنٌ وَجِلْدٌ حَسَنٌ قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ قَالَ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ فَأُعْطِيَ لَوْنًا حَسَنًا وَجِلْدًا حَسَنًا فَقَالَ أَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْإِبِلُ أَوْ قَالَ الْبَقَرُ هُوَ شَكَّ فِي ذَلِكَ إِنَّ الْأَبْرَصَ وَالْأَقْرَعَ قَالَ أَحَدُهُمَا الْإِبِلُ وَقَالَ الْآخَرُ الْبَقَرُ فَأُعْطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ فَقَالَ يُبَارَكُ لَكَ فِيهَا  وَأَتَى الْأَقْرَعَ فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ شَعَرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَنِّي هَذَا قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ قَالَ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ وَأُعْطِيَ شَعَرًا حَسَنًا قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْبَقَرُ قَالَ فَأَعْطَاهُ بَقَرَةً حَامِلًا وَقَالَ يُبَارَكُ لَكَ فِيهَا وَأَتَى الْأَعْمَى فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ يَرُدُّ اللَّهُ إِلَيَّ بَصَرِي فَأُبْصِرُ بِهِ النَّاسَ قَالَ فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللَّهُ إِلَيْهِ بَصَرَهُ قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْغَنَمُ فَأَعْطَاهُ شَاةً وَالِدًا فَأُنْتِجَ هَذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا فَكَانَ لِهَذَا وَادٍ مِنْ إِبِلٍ وَلِهَذَا وَادٍ مِنْ بَقَرٍ وَلِهَذَا وَادٍ مِنْ غَنَمٍ ثُمَّ إِنَّهُ أَتَى الْأَبْرَصَ فِي صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينٌ تَقَطَّعَتْ بِيَ الْحِبَالُ فِي سَفَرِي فَلَا بَلَاغَ الْيَوْمَ إِلَّا بِاللَّهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِي أَعْطَاكَ اللَّوْنَ الْحَسَنَ وَالْجِلْدَ الْحَسَنَ وَالْمَالَ بَعِيرًا أَتَبَلَّغُ عَلَيْهِ فِي سَفَرِي فَقَالَ لَهُ إِنَّ الْحُقُوقَ كَثِيرَةٌ فَقَالَ لَهُ كَأَنِّي أَعْرِفُكَ أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ فَقِيرًا فَأَعْطَاكَ اللَّهُ فَقَالَ لَقَدْ وَرِثْتُ لِكَابِرٍ عَنْ كَابِرٍ فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللَّهُ إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الْأَقْرَعَ فِي صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذَا فَرَدَّ عَلَيْهِ مِثْلَ مَا رَدَّ عَلَيْهِ هَذَا فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللَّهُ إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الْأَعْمَى فِي صُورَتِهِ فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينٌ وَابْنُ سَبِيلٍ وَتَقَطَّعَتْ بِيَ الْحِبَالُ فِي سَفَرِي فَلَا بَلَاغَ الْيَوْمَ إِلَّا بِاللَّهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِي رَدَّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا فِي سَفَرِي فَقَالَ قَدْ كُنْتُ أَعْمَى فَرَدَّ اللَّهُ بَصَرِي وَفَقِيرًا فَقَدْ أَغْنَانِي فَخُذْ مَا شِئْتَ فَوَاللَّهِ لَا أَجْهَدُكَ الْيَوْمَ بِشَيْءٍ أَخَذْتَهُ لِلَّهِ فَقَالَ أَمْسِكْ مَالَكَ فَإِنَّمَا ابْتُلِيتُمْ فَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنْكَ وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيْكَ صحيح البخاري
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন। বনী ইসরাইলের মধ্যে তিন জন রুগ্ন ব্যক্তি ছিল, একজন শ্বেতকুষ্ঠ রোগী, একজন টেকো ব্যক্তি এবং অপরজন অন্ধ । আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন, তাই তাদের নিকট একজন ফেরেশতা পাঠালেন।ফেরেশতা প্রথমে শ্বেতকুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন: তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কী ? সে বলল উত্তম রং ও উত্তম চামড়া,  লোকজন আমাকে ঘৃণা করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অত:পর ফেরেশতা তার শরীরে হাত বুলিয়ে নিলেন। ফলে তার ঘৃণার বস্তু দূর হয়ে গেল এবং তাকে উত্তম রং ও উত্তম চামড়া দান করা হলো। তারপর ফেরেশতা তাকে বলল: কোন সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয় সে বলল:  উট অথবা গরু (বর্ণনাকারীর সন্দেহ ) বর্ণনাকারী ইসহাক সন্দেহ করে বলেন যে, কুষ্ঠরোগী, অথবা মাথায় টাকপড়া ব্যক্তি এ দু’জনের একজন উট অপরজন গরু চেয়েছিলেন। অত:পর তাকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী মাদী উট দেয়া হল এবং ফেরেশতা দুআ করে বললেন: এতে তোমার বরকত হোক। 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অত:পর ফেরেশতা টেকো ব্যক্তির নিকট এসে বললেন:  তোমার নিকট প্রিয় বস্তু কী ? সে বললো, উত্তম চুল ; যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে, তা আমার থেকে চলে যাওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ফেরেশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার টাক দূর হয়ে গেল, তিনি বললেন: এবং তাকে উত্তম চুল দান করা হলো। ফেরেশতা বললেন:  তোমার নিকট কোন সম্পদ অধিক প্রিয় ?  সে বলল:  গরু। অত:পর তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দান করা হলো। ফেরেশতা বললেন : তোমার এতে বরকত হোক। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: অত:পর ফেরেশতা অন্ধ লোকটির কাছে এসে বললেন: তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কী? সে বললো, আল্লাহ যেন আমার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন, যা দ্বারা আমি লোকজন দেখতে পাই। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:  ফেরেশতা তার চোখের উপর হাত ফিরালেন, ফলে আল্লাহ তাআলা তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কোন সম্পদ অধিক প্রিয়? লোকটি বলল, ছাগল। সুতরাং তাকে প্রসব সম্ভবা ছাগল প্রদান করা হল। 
অত:পর প্রথমোক্ত দুজনের উট, গরু বাচ্চা জন্ম দিতে থাকলো, এবং শেষোক্ত জনের ছাগল ছানা প্রসব করতে থাকলো। এমনকি প্রত্যেকের এক উপত্যকা ভরা উট, এক উপত্যকা ভরা গরু এবং এক উপত্যকা ভরা ছাগল হয়ে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তারপর সেই ফেরেশতা (লোকদেরকে পরীক্ষা করার জন্য) পূর্ব অবয়বে প্রথমোক্ত শ্বেতকুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন: আমি একজন মিসকিন ব্যক্তি, মুসাফির, সফরে আমার সব সামর্থ্য শেষ হয়ে গেছে। এখন আল্লাহর দয়া ছাড়া নিজ ঘরে পৌঁছার কোনো উপায় নেই, অত:পর আপনার সাহায্য। আমি ঐ আল্লাহর নামে আপনার নিকট একটি উট কামনা করছি, যিনি আপনাকে এহেন সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া এবং অধিক পরিমাণ উট দান করেছেন, যাতে আমি আমার বাড়ি পৌছেতে পারি। লোকটি বলল: আপনার দাবী অনেক বড়। ফেরেশতা বললেন: মনে হয় যেন আমি আপনাকে চিনি। আপনি কি দরিদ্র, কুষ্ঠ রোগী ছিলেন না ? যাতে লোকজন আপনাকে ঘৃণা করতো। এবং দরিদ্র ছিলেন অত:পর আল্লাহ আপনাকে সম্পদশালী করেছেন। তখন লোকটি বলল: এসব ধন-সম্পদ আমি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছি। ফেরেশতা বলল: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ তোমাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিন।
তারপর ফেরেশতা আপন ছুরতে টেকো ব্যক্তির কাছে এসে তাই বলল যা প্রথম ব্যক্তিকে বলল। উত্তরে টেকো ব্যক্তিও তাই বলল, যা প্রথম ব্যক্তি বলেছিল। অত:পর ফেরেশতা বলল: যদি তুমিমিথ্যাবাদী হও তবে আল্লাহ তোমাকে আগের মত বানিয়ে দিন।  
ফেরেশতা পূর্ব অবয়বে পূর্ব বেশে অন্ধ ব্যক্তির নিকট এসে বললেন, আমি একজন দারিদ্র মুসাফির। সফরে আমার সব অর্থ শেষ হয়ে গেছে, বাড়ি পৌঁছার আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপায় নেই, অত:পর আপনার সাহায্য। যে আল্লাহ আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন, তার নামে আমি আপনার কাছে একটা ছাগল ভিক্ষা চাইছি, যা দ্বারা আমি আমার বাড়ি পৌছতে পারি। তখন সে বলল: আমি অন্ধ ছিলাম অত:পর আল্লাহ দয়া করে আমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপনি যা ইচ্ছা নিয়ে যান আল্লাহর জন্য আপনি যা নিবেন তাতে আমি কোনো বাধা দিব না। তখন ফেরেশতা বলল: আপনার সম্পদ আপনার কাছেই থাক। মূলত আল্লাহ আপনাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। আল্লাহ আপনার উপর রাজি হয়েছেন আর আপনার দুইসাথীর উপর অসন্তষ্ট হয়েছেন। (সহিহ বোখারি)