খুন গুম সন্ত্রাস বন্ধে ঈমানি কর্মসূচি

আল্লাহ, হজরত মুহাম্মদ সা:সহ যত নবী দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, দেশ ও জাতির কঠিন দুর্দিনেই পাঠিয়েছেন। তাদের জীবনের মিশন ছিল শিরক নির্মূল করে মানুষকে মানুষের গোলামি ও প্রভুত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর গোলাম বানানো। তাঁরা এসে জাতিকে জুলুম, নির্যাতন, খুন ও গুমসহ সব ধরনের আনাচার, অপকর্ম থেকে মুক্ত করেছেন। মজলুমকে মুক্ত করেছেন জালিমের হাত থেকে। মানুষকে মুক্ত করেছেন মানুষের প্রভুত্ব আর গোলামি থেকে। কর্মসূচি ছিল এক ঈমান। এই ঈমানি কর্মসূচির ভিত্তিতেই আমাদের প্রিয়নবী, আল্লাহর আখেরি রাসূল সা: আরবের বর্বর মানুষগুলোকে সোনার মানুষে পরিণত করেছিলেন। আমাদের পীর মাশায়েখ, আলেম ওলামা, খতিব, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের লোকেরা যদি দেশকে সোনার বাংলা এবং জনগণকে সোনার মানুষ বানাতে চান, তাদেরও ঈমানকেই প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। ঈমানের পথ ছাড়া খুন, গুম, সন্ত্রাস ও লুটপাট বন্ধ করা অসম্ভব।
খুন গুম সন্ত্রাস : খুন, গুম, সন্ত্রাস এখন বাংলাদেশের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। মিডিয়ায় যা প্রচার পায়, ঘটনার তুলনায় তা অনেক কম। কেউ কেউ বলে খুন, গুম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি শহুরে জীবনে যা ঘটে, তার চেয়ে গ্রামাঞ্চলে আরো বেশি। যৌতুকের জন্য খুন, টাকার জন্য খুন, জমির জন্য খুন, প্রেমের জন্য খুন, পদের জন্য খুন, ক্ষমতার জন্য খুন, রাজনীতির জন্য খুনÑ এসব এখন বাংলাদেশে নিত্যদিনের ঘটনা। নিজ দলে খুনাখুনি। প্রতিপক্ষ দলের সাথে খুনাখুনি। সরকারি-বিরোধী দলে খুনাখুনি। আর কত রকমের খুন, গুম, সন্ত্রাস বাংলাদেশে আছে তার হিসাব কে করবে? খুন, গুম আর সন্ত্রাসের আতঙ্কে যেন ঘুম হারাম। খুন, গুম, সন্ত্রাস, অনাচার, পাপাচার, মিথ্যাচার, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের জন্য বাংলাদেশই শুধু বাংলাদেশের উদাহরণ। এ যেন আইয়ামে জাহেলিয়াতের আধুনিক সংস্করণ।
বাংলাদেশে সবই আছে : বাংলাদেশে আছে আলেম-ওলামা। কুফর-নেফাক, তাগুত-শিরকের সাথে হুজুরদের দহরম মহরমও আছে। আছে পীর মাশায়েখ, ইমাম-খতিব, মুহাদ্দিস মুফাচ্ছির। মুফতিও আছে। আছে মসজিদ মাদরাসা। খানকাহ দরবার, পীর মুরিদ, তাফসির মাহফিল, জিকির ও সিরাত মাহফিল। শানে রেসালাত মাহফিল, মিলাদ মাহফিল, এজতেমার মাহফিল, দোয়া মাহফিল। আর লম্বা মুনাজাতের মাহফিলও আছে। জুমার নামাজের বয়ান আর মসজিদভর্তি মুসল্লিও আছে। সাথে আছে ঈমান, ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল, কুরআন-সুন্নাহ এবং আলেম ওলামাবিরোধী সব কর্মতৎপরতা, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার। দেশবিরোধী, মাবনতাবিরোধী কাজের কোনো কমতি নেই। বাংলাদেশে মদ-মাদকদ্রব্য আছে। তার লাইসেন্সও আছে। আবার লাখ লাখ টাকা খরচ করে মাদকতাবিরোধী র‌্যালিও আছে। যৌতুক আছে। যৌতুকবিরোধী আইনও আছে। অশ্লীল নাচগান আছে। অশ্লীল নাচগানবিরোধী আইনও আছে। জেনা ব্যভিচার বেশ্যাবৃত্তি আছে। জেনা ব্যভিচার বেশ্যাবৃত্তিবিরোধী আইন আছে। বেশ্যাবৃত্তির লাইসেন্স দেয়ার বিধানও আছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই অপহরণ আছে। চুরি, ডাকাতি, অপহরণবিরোধী আইনও আছে। মজুদদারি চোরাকারবারি আছে। স্বর্ণ পাচার, সীমান্ত পাচার আছে। এসবের বিরুদ্ধে আইনও আছে। জনগণকে শাস্তি দেবার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় আছে। আবার সব ধরনের জুলুম নির্যাতনও বাংলাদেশে আছে। এ সবের প্রতিবাদ আর প্রতিকার করতে গিয়ে বিপদে পড়ার ভূরি ভূরি নজিরও আছে। সব ধরনের অপরাধ আছে। অপরাধী আছে। অপরাধীর আশ্রয়-প্রশ্রয় আছে। নেই শুধু সততা, মানবতা, দেশপ্রেম। নেই জনগণের মনের শান্তি ও নিরাপত্তা। নেই অপরাধের যথাযথ ত্বরিত বিচার। বড় ছোট কারো সঠিক ঈমান নেই। দেশপ্রেমিক সাহসী ঈমানদার নেতা নেই। ঈমানদার ও কার্যকর দেশপ্রেমিক কোনো দলও নেই। যারা আছেন, তারা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। এ কারণেই মানুষ বলেÑ আজব দেশ বাংলাদেশ।
আল্লাহ বলেন, ‘জনপদের লোকেরা যদি ঠিকভাবে ঈমান আনে এবং আল্লাহকে ভয় ও মান্য করে চলে, আমরা তাদের জন্য আসমান জমিনের বরকতের সব দরজা খুলে দেব’ (সূরা আরাফ: ৯৬)।
প্রিয়নবী সা:-এর ঈমানি কর্মসূচি পর্যলোচনা করে বোঝা যায়, যারা ঈমানি জীবন গ্রহণ করে দুনিয়ার জীবনকে কাজে লাগিয়ে আখিরাতের জন্য পুণ্য ও নেক আমলের চাষ করবে, তারা হবে সৎ, চরিত্রবান, ন্যায়বিচারক, আল্লাহভীরু, মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক, দুর্নীতি, অন্যায় ও পাপাচার নির্মূলকারী এবং সুনাগরিক। পরিণতিতে জান্নাতের অধিবাসী। যারা দুর্নীতি, লুটপাট, জুলুম-অত্যাচার, খুন, গুম, সুদ, ঘুষ, নাচ-গান, ব্যভিচার, ধোঁকা, প্রতারণাসহ নানা পাপ ও অপকর্মে লিপ্ত তারা আখিরাতের প্রতি এবং আল্লাহর বিধিবিধানের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। এদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। এরা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ ও জনগণের জন্য বিপদ এবং আল্লাহর গজব।
একমাত্র প্রিয়নবী সা:-এর ঈমানি কর্মসূচি জাতিকে এ গজব ও বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রিয়নবী সা:-এর ঈমানি কর্মসূচি গ্রহণ না করলে, আইনের পর আইন রচনা করা যাবে, শবেবরাত, শবেকদর, রমজান সবই পালন করা যাবে বটে; খুন, গুম, সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, জেনা, ব্যভিচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জুলুম, অত্যাচার ও লুটপাট আর গরিবের ধনে (দুর্নীতিবাজ নেতা কর্তা ও বড় লোকদের) পোদ্দারি বন্ধ করা যাবে না।