ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ডহীন কোনো প্রাণী যেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। তবে এ শিক্ষা হতে হবে অবশ্যই সুশিক্ষা, এ প্রসঙ্গে দার্শনিক মিল্টন বলেছেন Education is the harmonious development both soul, body and mind.. সত্যিকারার্থে এ কথার পূর্ণতা মেলে ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে।
তাহলে জানা প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা কী? ধর্মীয় শিক্ষা বলতে সাধারণত আমরা বুঝি ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করা। যা পরকালীন সফলতা, শাস্তি থেকে পরিত্রাণবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করে। ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারলে পরকালে সফলতা পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি ধর্মের মূল কথা হচ্ছে, সত্য ও ন্যায়কে ধারণ করা। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ যে ধর্মের লোকই হোক যখন সত্য ও ন্যায়কে আঁকড়ে ধরবে তখন তার আত্মা হবে পরিশুদ্ধ। সে মানুষ কখনোই কোনো অন্যায় কাজে জড়িত হতে পারে না।
ধর্ম মানুষকে সব অন্যায়, অবিচার, বিশৃঙ্খলা থেকে বিরত রাখে। ধরা যাক একজন মানুষ ঘুষখোর। যখন তাকে ধর্মীয় জ্ঞান দিয়ে আত্মশুদ্ধ মানুষ করে গড়া যাবে, তখন দুনিয়ার কোনো শাস্তির ভয়ে নয়, শুধু স্রষ্টার ভয়ে সে ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দেবে। ধর্মীয় জ্ঞানে উজ্জীবিত তার বিবেকই তাকে বাধা দেবে। আইনবিজ্ঞানের ভাষায়Ñ জৈবিক বৃত্তি, বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেকÑ এই তিন সমন্বয়ে প্রকৃত মানুষ হয়। জৈবিক বৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি যেকোনো প্রাণীর মধ্যেই আছে, কিন্তু বিবেক শুধু মানুষেরই থাকে। ধর্মীয় জ্ঞান বিবেককে বিকশিত করে। আর সেই বিবেকবান মানুষ কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত হতে পারে না। তার বিবেকই তাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
পক্ষান্তরে বিবেকহীন মানুষ যেকোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। তাই তো বলা হয়ে থাকে বিবেকহীন মানুষ পশুর সমান। বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের মতো মানুষরূপী পশু হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে শুধু বিবেকহীনতার কারণেই। বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় দু’টি ধারা বিদ্যমান, একটি সাধারণ শিক্ষা অপরটি ধর্মীয় শিক্ষা। সাধারণ শিক্ষায় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, আন্তর্জাতিক নীতি, প্রকৌশলী, ডাক্তারিসহ বিভিন্ন শিক্ষা দেয়া হয়। সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়ার ধনসম্পদ অর্জনের যোগ্যতা সৃষ্টি হয় বটে, কিন্তু পরকালীন সফলতায় বিশ্বাসী আত্মশুদ্ধ মানুষ গড়া সম্ভব হয় না।
ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম ও শিক্ষকমণ্ডলী শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সে জন্য ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি সমূলে উচ্ছেদ করতে হলে সব ধর্মের লোকদের সন্তানকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। তারা যে পেশায়ই থাকুন আইনের শাস্তির ভয়ে নয়, বরং পরকালীন সফলতার জন্য দুনিয়ার বিলাসবহুল জীবনকে বিসর্জন দিয়ে সর্বপ্রকার দুর্নীতি থেকে বিরত থাকবেন।
সমাজের এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। তখন সচিবগণ ঘুষ খাবেন না। ডাক্তারগণকে রোগীর জীবন নিয়ে ডাকাতের ভূমিকায় দেখা যাবে না। পুলিশ হবে সাধারণ মানুষের সাহায্যকারী প্রকৃত বন্ধু। এ দেশে সাধারণত রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন ধর্মীয় জ্ঞান সম্পর্কে উদাসীন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ও নিরক্ষর ব্যক্তিরা। সামান্য একটু স্বার্থের জন্য যেকোনো অন্যায় করতে তাদের হাত বিন্দুমাত্র কেঁপে ওঠে না। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে তাদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবেন আত্মশুদ্ধ খাঁটি মানুষ এবং তাদের দ্বারাই সম্ভব হবে দুর্নীতিমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার।