ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে প্রার্থনা

ধৈর্য মনুষ্যত্বের অন্যতম পরিচায়ক। ভালো গুণাবলির অন্যতম। আরবিতে এর প্রতিশব্দ সবর, যার অর্থ সংযম অবলম্বন করা, নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করা। কুরআনুল কারিমে বারবার আল্লাহ তায়াল ধৈর্যের আদেশ দিয়েছেন। দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন। ধৈর্যের মাধ্যমে। ঘোষণা হচ্ছেÑ তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করো। ধৈর্য এবং নামাজের মাধ্যমে। (সূরা বাকারা আয়াত : ১৫৩)। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো আয়াতে সাহায্য কামনার জন্য ধৈর্য আর নামাজকে মাধ্যম বানিয়েছেন। শুধু এতটুকু হয় আয়াতে নামাজের আগে ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসের পরিভাষায় ধৈর্যের তিনটি শাখা রয়েছে, আত্মা বা নিজকে হারাম ও নাজায়েজ বিষয় থেকে বাঁচিয়ে রাখা, ইবাদত ও আনুগত্যে নিজকে বাধ্য করা বা ডুবিয়ে রাখা এবং যেকোনো বিপদ-আপদ বালা-মুসিবত, দুঃখ-দুর্দশা সঙ্কটে ধৈর্য ধারণ করা। অর্থাৎ যেসব বিপদ-আপদ বালা-মুসিবত এসে উপস্থিত হয় তা আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া এবং বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা করা। অবশ্য কষ্টে কাতর হয়ে যদি মুখ থেকে কোনো কাতর শব্দ উচ্চারিত হয় বা অন্যের কাছে প্রকাশ করে, তবে তা ধৈর্যের পরিপন্থী।
ধৈর্যের উপরিউক্ত তিন শাখাই ধৈর্য ধারণ করা মুসলমানের কর্তব্য। আমরা অনেকেই মনে করি, তৃতীয় প্রকারে শুধু ধৈর্য। অন্যগুলো ধৈর্য বলে আমরা জানিই না। সুতরাং আমাদের কর্তব্য এবং দায়িত্ব ধৈর্যের তিন শাখায় আমল করা। ধৈর্য ধারণ করা।
কুরআনে ধৈর্যের আয়াত
‘তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে।’ (সূরা বাকারা : ১৫৩)। প্রতিশোধ গ্রহণের আলোচনায় আল্লাহ বলেন, ‘যদি প্রতিশোধ নিতে চাও তবে ততটুকু নাও যে পরিমাণ তারা তোমাদের ক্ষতি করেছে। আর যদি ধৈর্য ধারণ করো, তবে (জেনে রাখো) তা ধৈর্যধারণকারীদের জন্য উত্তম। আপনি ধৈর্যধারণ করুন, আপনার ধৈর্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়।’ (সূরা নাহল : ১২৬, ১২৭)।
এক স্থানে আল্লাহ কালের শপথ করে ঘোষণা করেন, চার শ্রেণীর লোক ব্যতীত সব মানুষ ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত। ওই চার শ্রেণীর এক শ্রেণী হলো ধৈর্যধারণকারী, সূরা আসর।
আল্লাহ রাসূল সা:কে শত্রুর সাথে উত্তম কৌশল জবাব দেয়ার আদেশ দিয়েছেন; ‘ভালো-মন্দ সমান নয়। জবাব উত্তমটা বলুন। তখন দেখবেন যে ব্যক্তির সাথে আপনার শত্রুতা রয়েছে সে আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু। আর (এমন ব্যবহার) এটা তারাই পাবে যারা ধৈর্যধারণকারী।’ (সূরা সিজদাহ : ৩৪, ৩৫)।
তায়েফবাসীর আক্রমণে নবীজী সা: যখন রক্তাক্ত দিশেহারা ব্যাকুলচিত্তে পাহাড়ের পাদদেশে অসহায় অবস্থায় বসেছিলেন, তখন হজরত জিব্রাইল আ: আয়াত নিয়ে এসেছিলেন, ‘ধৈর্য ধরুন, চরম ধৈর্য।’
আয়াতের আলোকে বলা যায়, ধৈর্য মুমিনজীবনের অপরিহার্য গুণ।