ইসলাম ও মানবজীবন

যে সমাজ মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা:-এর সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয় সেই সমাজকেই কেবল প্রকৃত ইসলামী সমাজ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ সমাজের মানুষের চিন্তা-চেতনা, শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, আইনকানুন তথা সব কাজের মধ্য দিয়েই যারা প্রমাণ করে যে, তারাই একমাত্র আল্লাহর গোলামি করে যাচ্ছেÑ এমন সমাজই ইসলামী সমাজ। আর কালেমা শাহাদাত এ ধরনের আল্লাহর দাসত্বমূলক জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করে নেয়ার মৌখিক স্বীকৃতি দেয় এবং বাস্তব জীবনে তা পালনের পদ্ধতি নির্ধারণ করে।
আল কুরআনে সূরা আন নাহলের ৫১ ও ৫২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ কোরো না, উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় করো। যা কিছু নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে আছে তা সবই তাঁর জন্য নিবেদিত। (এর পরও) তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে?’ 
ঠিক তেমনিভাবে কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর শক্তি-মতা ছাড়া অন্য কারো শক্তি-মতা, রাজনৈতিক প্রতিপত্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে কিংবা কোনো ধরনের জাহেলি আদর্শের সাথে আপস করে, তাহলে সে নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর গোলামি স্বীকার করে নেয়নি। কেননা আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি বলো : আমার নামাজ, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।’ (সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩)
এরপর যদি কোনো ব্যক্তি তার জীবনের কিছু অংশ মানুষের বানানো আইন অনুসারে পরিচালনা করে তাহলে সে-ও আল্লাহর দাসত্ব থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে। যেমন বর্তমান সমাজের মানুষের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, বিয়ে-তালাকের েেত্র আল্লাহর আইনকানুনের কিছু মানলেও তাদের সমাজনীতি, রাষ্ট্রীয় আইনকানুন, কোর্ট-কাচারি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ অন্যান্য সব েেত্রই নির্বাচিত কিছু লোকদের রচিত আইনকানুন মেনে চলছে, যা প্রচ্ছন্ন শিরক। তারা এসব নির্বাচিত ব্যক্তিদের আইন রচনার মতায় সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করেছে। এদের ল্য করে আল্লাহ তায়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন- ‘তাদের কি এমন শরিক আছে, যারা এদের জন্য এমন কোনো জীবনবিধান প্রণয়ন করে দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ তায়ালা দেননি?’ (সূরা শুরা : ২১)
‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সূরা হাশর : ৭)
এই মূলনীতি থেকে ইসলামী সমাজের সদস্যরা জীবন চলার নীতি নির্ধারণ করবে এবং সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর দাসত্বের প্রতিফলন ঘটাবে। আকিদা-বিশ্বাস, আইনকানুন, রীতিনীতি, শিল্প-সংস্কৃতির কোনো একটি অধ্যায়ও যদি আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে ওই সমাজের ইসলাম থেকে বিচ্যুতি ঘটে। কারণ এর প্রত্যেকটি অধ্যায়ের সাথে কালেমা শাহাদাতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এ সম্পর্কের মাঝে সামান্য কোনো ফাটল সৃষ্টি হলেও তা চরম পরিণতি বয়ে আনে। সমাজের সর্বস্তরে এ কালেমার শর্তহীন ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন ছাড়া ইসলামী সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়।
তাই এসব সমাজের গতানুগতিক সদস্য হয়ে এবং মুখে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে মানুষকে বোকা বানানো যেতে পারে; কিন্তু যিনি সব দেখেন, সব শোনেন, তাঁর কাছে এগুলো কোনো মূল্য বহন করে না।
যারা নিজেদের মন ও জীবনকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তির আনুগত্য থেকে পুরোপুরি মুক্ত ও পবিত্র করেছে তাদেরকে নিয়ে একটি উম্মাহ গড়ে তুলতে হবে এবং তারাই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় সদস্য হওয়ার যোগ্য। তাদের সমাজই কেবল ইসলামী সমাজ হতে পারে, যাদের জীবন হবে কালেমার বাস্তব চিত্র, তারাই হবে এই সংগ্রামী কাফেলার অগ্রনায়ক।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নেতৃতেই প্রথম ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভবিষ্যতেও উল্লিখিত প্রক্রিয়াতেই মুসলিম কমিউনিটিতে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার এটাই শাশ্বত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ইসলামী সমাজ গঠন হতে পারে না। তাই সামষ্টিকভাবে সমাজের মানুষেরা সব অপশক্তির আনুগত্য থেকে মুক্ত হতে পারলেই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
চলমান সমাজে সর্বপ্রকার অন্যায় অপরাধ ব্যভিচার জুলুম নির্যাতন ও প্রাকৃতিক আজাব-গজব থেকে পরিবার, সমাজ তথা দেশকে মুক্ত রাখতে চাইলে মহান আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য ছ্ড়াা বিকল্প কোনো পথ নেই।