নতুন বছর এলেই দেখা যায় পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা অন্যান্য মিডিয়ায় জ্যোতিষীদের বক্তব্য, জ্যোতিষীদের চোখে বছরটি কেমন যাবে তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় রাশিফলের আকর্ষণীয় বর্ণনা। অনেকেই এসব রাশিফল আগ্রহ নিয়ে পড়েন। অনেকে আরও আগ বাড়িয়ে একেবারে জ্যোতিষীর কাছে সরাসরি চলে যান ভাগ্য গণনা করাতে। অথচ ইসলামের দর্শন হলো অদৃশ্য বা গায়েব সম্পর্কে একমাত্র আল্লহাই সম্যক জ্ঞানী। আল্লাহ ছাড়া গায়েব বা ভবিষ্যত্ সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারে না, বলতে পারে না।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যা অদৃশ্য ও যা দৃশ্যমান তিনি (আল্লাহ) তা অবগত, তিনি মহান, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।’ (সুরা রা’দ, আয়াত নং ৯/১২:৯) অদৃশ্য বা গায়েব সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ কোনো জ্ঞান রাখে না; সুতরাং অন্তরে এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে স্থাপন করতে হবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই অদৃশ্য বা গায়েব সম্পর্কে জানতে পারে না—কোনো ওলি বুজুর্গও নন, এমনকি নবীরাও নন। আল্লাহ তায়ালা মহানবী (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘আপনি বলুন, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভালো-মন্দের ওপরও আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম, তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা বৈ আর কিছু নই। ( সুরা আরাফ আয়াত নং১৮৮/৭:১৮৮)
হাদিস শরিফেও জ্যোতিষীর কাছে গমন ও তার ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ভবিষ্যদ্বক্তা জ্যোতিষীর কাছে গমন করল, তার কথা বিশ্বাস করল, সে কোরআনে কারিমেকে মিথ্যারোপ করল। পণ্ডিত জ্যোতিষী, ভণ্ড পীর বা ম্যাজিশিয়ান—সবাই উল্লিখিত বিধানের অন্তর্ভুক্ত। জ্যোতিষীর বক্তব্য রাশিফল বা হাত দেখানো ইত্যাদি পুরোপুরি শিরকি ব্যাপার। মজা করেও এগুলো পড়া উচিত নয়। এসব নিয়ে আড্ডা-গল্পে আলোচনা করাও অনুচিত।
পার্থিব ঘটনার পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ অথবা ওহির সমর্থন, এর বাইরে অন্য কোনো উপায়ে ভবিষ্যত্ বা গায়েব সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করা শিরকি এবং অযৌক্তিকও। এখানে ওহি দ্বারা কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসের কোনো বর্ণনাকে বোঝানো হচ্ছে। পক্ষান্তরে ঘটনার পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ বলতে কোনো ঘটনার লক্ষণ বিশ্লেষণ, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি বা পর্যবেক্ষণ, প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ইত্যাদি বোঝানো হচ্ছে।
ঘটনার লক্ষণ বিশ্লেষণ, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি বা পর্যবেক্ষণ অথবা বৈজ্ঞানিক সূত্রের ওপর ভিত্তি করে কোনো ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলা আপাতদৃষ্টিতে ভবিষ্যদ্বাণী মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো ভবিষ্যদ্বাণী নয়; বরং এক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ঘটনা অথবা যে ঘটনার প্রয়োজনীয় লক্ষণ ঘটে গেছে, সে সম্পর্কে বলা হচ্ছে, কোনো অদৃশ্য বা গায়েবের বিষয় নিয়ে নয়। যেমন আবহাওয়ার পূর্বাভাষ, পরিসংখ্যানভিত্তিক ভবিষ্যদ্বাণী (যেমন ধরা যাক, আগামী দশ বছর পর বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর হার হবে ১০%), সন্তান জন্মের কিছু দিন আগে আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে শিশুর লিঙ্গ সম্পর্কে জানা ইত্যাদি বিষয় আপাতত অদৃশ্য বা ভবিষ্যত্ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো কোনো গায়েবের বিষয় নয়।
এ ধরনের বিষয় ছাড়া অন্য যে কোনো অদৃশ্য বা ভবিষ্যতের ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বাস করতে হলে অবশ্যই সে সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসের সমর্থন লাগবে। সুতরাং অদৃশ্য বা ভবিষ্যতের যে ঘটনা বা বিষয় লক্ষণ বিশ্লেষণে প্রমাণিত নয়, আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, সেটি সঠিক বৈজ্ঞানিক সূত্র দ্বারাও সমর্থিত নয় এবং সে সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসেও কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না, সে সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের প্রশ্নে যেমন শিরকি, যুক্তির বিচারেও তা নির্বুদ্ধিতা।