শাসকের মধ্যে সুস্পষ্ট কুফরী দেখা গেলে করণীয় সম্পর্কে সালাফে সালেহীনের ইজমা
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলেনঃ
دَعَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ فَكَانَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ قَالَ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنْ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ
অর্থাৎ, “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা তাকে বাইয়াত দিলাম। তিনি তখন আমাদের থেকে যে বাইয়াত নেন, তার মধ্যে ছিল – ‘আমরা শুনবোও মানবো, আমাদের অনুরাগে ও বিরাগে, আমাদের সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের উপরঅন্যকে প্রাধান্য দিলেও যোগ্য ব্যক্তির সাথে আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল করবো না।’ তিনি বলেন,যতক্ষণ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তারবিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দলীল থাকবে।’” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
সলফে সালেহীনগণ, মুজতাহিদ ইমামগণ ও পরবর্তী যুগের ইমামগণের মধ্যে এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, কোন মুসলিম এলাকার শাসকের মধ্যে এই রকম সুষ্পষ্ট কুফরী বা কুফরুন বাওয়াহ দেখা গেলে, তাকে হটিয়ে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক (যিনি এসব কুফরী করবেন না বরং ইসলামী শরীয়াত অনুযায়ী শাসন করবেন) নিয়োগ দেয়া ঐ এলাকার সামর্থ্যবানদের উপর ফরজে আইন। আর সেই শাসকের সমর্থনে যদি কোন বাহিনী থাকে তবে ঐ বাহিনীসহ ঐ শাসককে হটানো হচ্ছে ফরজে আইন।
এ ব্যাপারে ইজমা উল্লেখ করে ইমাম নববী (রঃ) বলেছেন,
قال القاضي عياض أجمع العلماء على أن الإمامة لا تنعقد لكافر وعلى أنه لو طرأ عليه الكفر انعزل قال وكذا لو ترك إقامة الصلوات والدعاء إليها قال وكذلك عند جمهورهم البدعة قال وقال بعض البصريين تنعقد له وتستدام له لأنه متأول قال القاضي فلو طرأ عليه كفر وتغيير للشرع أو بدعة خرج عن حكم الولاية وسقطت طاعته ووجب على المسلمين القيام عليه وخلعه ونصب أمام عادل أن أمكنهم ذلك فإن لم يقع ذلك الا لطائفة وجب عليهم القيام بخلع الكافر ولا يجب في المبتدع إلا إذا ظنوا القدرة عليه فإن تحققوا العجز لم يجب القيام وليهاجر المسلم عن أرضه إلى غيرها ويفر بدينه
“কাযী ইয়াজ (রঃ) বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে যে, কাফিরের হাতে নেতৃত্ব দেয়াযাবে না; সুতরাং তার থেকে যদি কুফরী প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে অপসারণ করতে হবে।’”……… কাযী ইয়াজ (রঃ) আরো বলেন, “সুতরাং তার থেকে কোন কুফরী বা শরীয়াহ পরিবর্তনবা বিদয়াত প্রকাশ পেলে, সে তার দায়িত্ব থেকে খারিজ হয়ে গেল এবং তার আনুগত্যের অধিকার সেহারালো; আর এ অবস্থায় মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব যে, তারা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, তাকেঅপসারণ করবে এবং একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক নিয়োগ করবে যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। আরযদি একদল মানুষ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এটি সম্ভব না হয় তবে ঐ দলটিকে রুখে দাঁড়াতে হবেএবং ঐ কাফিরকে অপসারণ করতে হবে। তবে বিদ’আতীর ক্ষেত্রে সক্ষমতার প্রবল ধারণা হলেইএটি আবশ্যক। অতএব যদি সত্যিই অক্ষমতা বিরাজ করে তাহলে বিদ্রোহ করা আবশ্যক নয়, তবেমুসলমানদেরকে ঐ এলাকা থেকে অন্য কোথাও তাদের দ্বীন নিয়ে হিজরত করতে হবে।” (সহীহ মুসলিম বি শারহুন নববী, কিতাবুল ইমারাহ ১২/২২৮)
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেছেনঃ
وقال الداودي الذي عليه العلماء في أمراء الجور أنه إن قدر على خلعه بغير فتنة ولا ظلم وجب وإلا فالواجب الصبر وعن بعضهم لا يجوز عقد الولاية لفاسق ابتداء فإن أحدث جورا بعد أن كان عدلا اختلفوا في جواز الخروج عليه والصحيح المنع إلا أن يكفر فيجب الخروج عليه
দাউদী (রঃ) বলেছেন, আলেমরা এ ব্যাপারে একমত যে, শাসক জালেম হলে যদি সামর্থ থাকে ফিতনা ও জুলুম ছাড়া তাকে অপসারণ করার তাহলে তা ওয়াজিব। তা না হলে ধৈর্য্য ধরা ওয়াজিব। অন্যরা বলেছেন, ফাসিক ও বিদয়াতীর কাছে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না। যদি সে প্রথমে ন্যায়পরায়ণ থাকে এবং পরে বিদয়াত ও জুলুম করে তবে তার অপসারণ ও বিরুদ্ধাচারণের ব্যাপারে মতভেদ হয়েছে। সঠিক মত হচ্ছে, তা না করা যতক্ষণ না সে কুফরী করে। কুফরী করলে তাকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধাচারণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ফিতান, ৩০/১১০)
একই ইজমা ইবনে হাজার (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ এ ব্যাপারে ইবনে বাত্তাল (রঃ), ইবনে তীন (রঃ), দাউদী (রঃ) প্রমুখও ইজমা উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাজার (রঃ) বলেনঃ
وملخصه أنه ينعزل بالكفر إجماعا ” فيجب على كل مسلم القيام في ذلك، فمن قوي على ذلك فله الثواب، ومن داهن فعليه الإثم، ومن عجز وجبت عليه الهجرة من تلك الأرض
“আর এ ব্যাপারে ইজমার সারমর্ম হলো তাকে তার কুফরীর কারণে অপসারণ করতে হবে।সুতরাং প্রতিটি মুসলমানকে এই উদ্দেশ্যে রুখে দাঁড়াতে হবে, যার এই কাজ করার শক্তি আছে তার জন্য রয়েছে সওয়াব, যে এটা অবহেলা করবে সে গুনাহগার হবে, আর যে এতে অসমর্থ তার জন্য ওয়াজিব হবে ঐ এলাকা থেকে হিজরত করা।” (ফাতহুল বারী, কিতাবুল ফিতান, ১৩/১২৩)
===========
আমাদের পরিস্থিতিঃ
অন্যান্য বেশীরভাগ মুসলিম দেশের মতোই বাংলাদেশের মুসলিম নামধারী শাসকরাঃ
- যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের উপর মানবরচিত কুফরী-শিরকী আইন চাপিয়ে রেখেছে।
- আল্লাহ মদ হারাম করেছেন আর এই শাসকগুলো মদের লাইসেন্স দিচ্ছে, মদ বিক্রির অনুমতি দিচ্ছে।
- আল্লাহ জ্বিনা হারাম করেছেন আর এরা পতিতাবৃত্তির জন্য লাইসেন্স দিচ্ছে।
- আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন, সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন আর এরা সুদের ভিত্তিতে পুরো অর্থনীতি পরিচালনা করছে। সুদের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালনার লাইসেন্স দিচ্ছে।
- এরা মানবরচিত কুফরী আইনকে বলছে ‘যুগ উপযোগী আইন’ আর ইসলামী শরীয়াতকে বলছে ‘মধ্যযুগীয় শাসন’।
- এরা পর্দা, দাঁড়ি, টুপিসহ পুরো দ্বীন ইসলামকে নিয়ে প্রতিনিয়ত হাসি-তামাশা করছে।
- এরা নাস্তিক-মুর্তাদ সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, ব্লগারদেরকে ‘বাক-স্বাধীনতার’ নামে আল্লাহ, তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে যা ইচ্ছা বলার সুযোগ দিচ্ছে। এদেরকে রক্ষা করে এদের কুফরীতে সাহায্য করছে।
- এরা যুদ্ধরত কাফিরদেরকে সমুদ্রপথ, আকাশ সীমা, বিমান বন্দর ইত্যাদি ব্যবহার করতে দিয়ে, গোয়েন্দাবৃত্তি করে মুসলমান-মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করছে। (২০০১ সালে আগ্রাসী আমেরিকাকে আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে এদেশের আকাশ-সীমা ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে)
- এরা সংসদ ভবনে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিত্য নতুন কুফরী আইন প্রণয়ণ করছে।
- এরা মহিলাদের হিজাব করতে বাধ্য করা যাবে না – এ আইন করেছে।
- এরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে নারী ও পুরুষদের সমান গণ্য করতে চাপ দিচ্ছে।
- এরা যে কোন ইসলামী বইকে বলছে ‘জংগী বই’।
- এরা ইসলামের গুরুত্বপূর্ন ফরজ বিধান জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ’ বলে নিষিদ্ধ করে জিহাদের বিরোধিতা করছে।
- এরা মুরতাদের শাস্তি হত্যাকে তাদের কুফরী মতবাদ ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী বলে এর বিপরীতে অবস্থান গ্রহন করেছে।
- এরা আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত হুদূদ এর বিধানকে নিজেদের উদ্ভাবিত আইন-বিধান দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে যেন আল্লাহ তায়ালার চেয়ে অধিক উপযোগী আইন-বিধান দাতা হিসেবে নিজেদেরকে তারা জাহির করতে চাচ্ছে।
এভাবে তারা আরো অনেক সুস্পষ্ট কুফরী (কুফরুন বাওয়াহ) প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে।