অহঙ্কার পতন ডেকে আনে

অহঙ্কার জীবনবিধ্বংসী ভয়ঙ্কর এক ব্যাধি। অহঙ্কার মানুষের আমলগুলোকে নষ্ট করে দেয়। অহঙ্কারী ব্যক্তি আল্লাহর ভীষণ অপছন্দ। অহঙ্কার কোনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। অহঙ্কার মানুষকে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য প্রতিবন্ধক। অহঙ্কার শব্দের আরবি হলো ‘কিবির’ বা ‘তাকাব্বুর’। বাংলা ভাষায় অহঙ্কার, অহমিকা, গর্ব ইত্যাদি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উত্তম গুণাবলির েেত্র নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় বা মর্যাদাবান মনে করা এবং অপরকে ছোট বা তুচ্ছ মনে করার নামই অহঙ্কার। একবার রাসূল সা:-এর দরবারে সাহাবায়ে কেরামের একটি জামাত উপস্থিত ছিল, তারা রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! অহঙ্কার কী? রাসূল সা: উত্তরে বললেন, ‘অহঙ্কার এমন এক বস্তু, যার প্রভাবে মানুষ আল্লাহর সামনে মস্তক অবনত করতে অমতা প্রকাশ করে এবং অপরাপর লোকদের ঘৃণার চোখে দেখে’ (তিরমিজি)।
অহঙ্কার সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের ভালোবাসি না, যারা নিজেদের বড় মনে করে এবং অহঙ্কার প্রকাশ করে’ (সূরা হাদিদ : ২৩)।
রাসূল সা: ইরশাদ করেন,‘যার অন্তরে এক বিন্দু সরিষা পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না’ (মিশকাত)।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন অহঙ্কারী ব্যক্তিদের পিপীলিকার মতো ছোট করে দেয়া হবে, আর মানুষ তাদের পদদলিত করবে’ (বুখারি ও মুসলিম)।
হজরত ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ তাৎণিক এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! প্রত্যেক মানুষই চায় তার উন্নত বাড়ি হোক, পোশাক উন্নত হোক, ভালো জুতা হোক, তবে এটাও কি অহঙ্কার? উত্তরে নবীজী বললেন, ‘আল্লাহ নিজেই সুন্দর এবং সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। কিন্তু প্রকৃত অহঙ্কার হলো সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে নিজের চেয়ে তুচ্ছ ও ছোট মনে করা’ (মুসলিম)।
নবী করিম সা: বলেন, ‘জনৈক ব্যক্তি দু’টি চাদর পরে নিজেকে বড় মনে করে অহঙ্কারের সাথে গমন করছিল আল্লাহ তাকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দিলেন। কিয়ামত পর্যন্ত সে নিচের দিকেই যেতে থাকবে’ (তিরমিজি)।
রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের পাপ মা করবেন না এবং তাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করবেন না বরং কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করবেন; তারা হলো- ১. বিবাহিত ব্যভিচারী, ২. মিথ্যুক শাসক, ৩. অহঙ্কার ভিুক’ (মুসলিম)।
রাসূল সা: ইরশাদ করেন, হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘অহঙ্কার আমার চাদর, আর শ্রেষ্ঠত্ব আমার পরিধেয় বস্তুর মতো। সুতরাং, এ দু’টির কোনো একটি যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে আমি তাকে লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামের আগুনে প্রবিষ্ট করবো’ (মুসলিম)।
অহঙ্কার এক দিকে কুফর থেকে জঘন্য। কেননা কুফর মূলত অহঙ্কার থেকেই সৃষ্টি হয়। ফেরেশতাদের সরদার অহঙ্কার করার কারণে ইবলিসও কাফের-শয়তানে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কুরআনে অহঙ্কারী ভাব প্রদর্শন করে পৃথিবীতে চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে। অহঙ্কারী ব্যক্তি যত আমল করুক না কেন, তার কোনো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অহঙ্কারী ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। সামাজিকভাবে অহঙ্কারী ব্যক্তি অনৈক্য ও দ্বন্দ্বের কারণে পরিণত হয়। ফলে সমাজের সবাই তাকে ঘৃণা করে এবং সে সমাজে লাঞ্ছিত হয়। অহঙ্কারী ব্যক্তি তার ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি, জ্ঞানবুদ্ধি, চলন-বলন, সৌন্দর্য ইত্যাদিতে নিজেকে বড় মনে করে থাকে। অথচ ইসলামে এসব বিষয়ে অহঙ্কার করতে নিষেধ করা রয়েছে। মুখে অহঙ্কার প্রকাশ বা অহঙ্কারের ভাব প্রকাশও ইসলামে নিষিদ্ধ। অহঙ্কার বর্জন প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।