অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে আমাদের পরিণতি হবে বনি ইসরাইলের মতো

বর্তমানে বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে একটি গণপ্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এটি কি হঠাত্ কোনো আন্দোলন নাকি এর পেছনে কোনো পটভূমি কাজ করছে? আপনি বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
বর্তমানে বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বে নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে যে গণজাগরণ শুরু হয়েছে তা হঠাত্ করে গজিয়ে ওঠা একটি আন্দোলন মনে হলেও এর পেছনে একটি পটভূমি রয়েছে।
এ সব নাস্তিক ব্লগার শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তারা ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর বিভিন্ন অবস্থান থেকে দীর্ঘ ৫/৭ বছর ধরে একটি অভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এর মূলত নাস্তিক বা ধর্মে অবিশ্বাসী হলেও এদের মূল টার্গেট কিন্তু ইসলাম। এরা (ওংষধস-ঢ়যড়নরধ) বা ইসলাম আতঙ্ক রোগে আক্রান্ত। আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.), মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ঈমান, আক্বিদা, আমল-আখলাক ও ইসলামি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এরা খড়গহস্ত।
শাহবাগ আন্দোলনের নামে জড়ো হওয়া এসব ব্লগারের মধ্যে রাজীব নামক এক ব্লগার নিহত হওয়ার পর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের কল্যাণে বেরিয়ে আসে ইসলামের বিরুদ্ধে তার ঘৃণ্য মনোভাব ও বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া লিংকগুলোর এক জঘন্য চিত্র এবং তার সঙ্গে যারা এসব ঘৃণ্য কাজে সম্পৃক্ত তাদের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন। ইসলামের বিরুদ্ধে এদের লেখাগুলোকে এক প্রচণ্ড আগ্নেয়গিরির সঙ্গে তুলনা করা যায়। রাজীব হত্যার পর যেন এর বিস্ফোরণ ঘটে এবং এভাবে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত আপামর বাংলদেশি মুসলিমদের দৃষ্টিগোচর হয় এসব নাস্তিকের ঘৃণ্য অপরাধের বিষয়। এ কারণেই ঈমানের তাগিদে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এ প্রতিবাদ সূচিত হয়েছে বলে আমি মনে করি।
ইসলামবিরোধীদের উগ্র তত্পরতা ও প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলমানরা যদি সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে না তুলে তাহলে এর পরিণাম কী হতে পারে? অতীতকালে বাতিলদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় মুসলমানদের ধ্বংস হওয়ার কোনো নজির আছে কি? ইতিহাসের আলোকে মুসলমানদের ভবিষ্যত্ পরিণতি সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
আল-কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহকে শ্রেষ্ঠ উম্মাহর খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে এবং শ্রেষ্ঠতর মর্যাদা অব্যাহত রাখার জন্য তাদের দায়িত্ব হিসেবে তিনটি কাজকে চিহ্নিত করা হয়েছে : এক. সত্ কর্মের আদেশ দান দুই. অন্যায় ও অপকর্মের বাধা দান এবং তিন. উপরোক্ত দুটি কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা যে, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবেই।
আল্লাহর রাসুলের একটি প্রসিদ্ধ হাদিস : তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো অন্যায় কাজ দেখলে তা শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে মুখের ভাষায় এর বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করতে হবে (এর মধ্যে কলমও অন্তর্ভুক্ত) আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অন্তরে ঘৃণা পোষণের মাধ্যমে হলেও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। আর তা হলো ঈমানের দুর্বলতম অবস্থান। যদি আমরা এ তিন স্তরের মধ্যে কোনো স্তরেও অবস্থান করতে না পারি তাহলে আমাদের অবস্থা হবে বনি ইসরাঈলের মতো, যাদেরও আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠ উম্মাহর উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, কিন্তু তারা এ দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ার কারণে তাদের অভিশপ্ত জাতির খেতাব দেয়া হয়।
মুসলিম উম্মাহ যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার এ দ্বীনি দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো অবহেলা করে তাহলে তাদেরও বনি ইসরাঈলের মতো ভাগ্যবরণ করতে হবে।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম কি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে? নাকি এর মধ্যে কোনো ত্রুটি আছে, যার প্রভাব পড়ছে নবপ্রজন্মের ওপর? বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
যেহেতু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, তাই এটাই আশা করা গিয়েছিল, এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ঈমান-আক্বিদা, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ সচেতনভাবে এ দেশের জনগোষ্ঠীকে তাদের আক্বিদা-বিশ্বাস, ধর্মীয় চেতনা ও ইসলামি সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন একটি ধর্মবিবর্জিত ও ইহজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্বলিত প্রজন্মে পরিণত করার লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থার একটি জগাখিচুড়ি সংস্করণ চালু করেছে। এ শিক্ষাব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে আমাদের সন্তানরা আগামী প্রজন্মে নৈতিকভাবে দেউলিয়া একটি প্রজন্মে পরিণত হতে বাধ্য।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম, চেতনা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সঙ্গে মিল রেখে এদেশের অধিকাংশ মিডিয়া কি সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করছে? নাকি তারা ভিনদেশী সংস্কৃতি কিংবা এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মিডিয়ার আচরণ কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বর্তমানে আমাদের দেশে মিডিয়া জগতের (প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া) ভূমিকা দেখে সত্যই হতভম্ব হতে হয়। মিডিয়ার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা হওয়া উচিত কোনো ঘটনা যেভাবে ঘটেছে সে ঘটনাকে ঠিক সেভাবে উপস্থাপন করা। কোনো বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে অথবা প্রশাসনের আনুকূল্য লাভের উদ্দেশ্যে যখন মিডিয়া প্রকৃত ঘটনাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করে তখন সে মিডিয়ার মৌলিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য। মিডিয়া যখন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বাধ্য হয় কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করে তখন তাকে আখ্যায়িত করা হয় হলুদ সাংবাদিকতা বলে। এই হলুদ সাংবাদিকতার পাশাপাশি বেশিরভাগ মিডিয়া বিভিন্ন মতামত, ফিচার ও অনুষ্ঠান-প্রতিবেদনের মাধ্যমেও ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি এক ধরনের উন্নাসিকতা ও বৈরিতা উস্কে দিচ্ছে অথবা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তারা কাজ করলে অনেক ভুল-ভ্রান্তি থেকে জাতি রক্ষা পেত।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোর অধিকাংশই এ দোষে দুষ্ট হয়ে পড়েছে। তাদের এ আচরণ গোটা জাতিকে হতাশ করেছে। এহেন পরিস্থিতিতে যে দু’একটি সংবাদ মাধ্যম ঝুঁকির মুখেও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের সাহস দেখিয়েছে, তাদের আমরা অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই।