স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার



আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ ﴾ [النساء: ٣٤] 
অর্থাৎ “পুরুষ নারীর কর্তা। কারণআল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ (তাদের জন্য) ধন ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণীআল্লার হিফাযতে (আদেশ ও তওফীকে) তারা তা হিফাযত করে।” (সূরা নিসা ৩৪ আয়াত)

হাদীসসমূহ:

1/286. وَعَن عَمرِو بنِ الأحوَصِ الجُشَمِي رضي الله عنه : أنَّهُ سَمِعَ النَّبيّ ﷺ في حَجَّةِ الوَدَاعِ يَقُولُ بَعْدَ أنْ حَمِدَ الله تَعَالَى، وَأثْنَى عَلَيهِ وَذَكَّرَ وَوَعظَ، ثُمَّ قَالَ: «ألا وَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ خَيْراً، فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ عِنْدَكُمْ لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئاً غَيْرَ ذلِكَ إلاَّ أنْ يَأتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ، فَإنْ فَعَلْنَ فَاهْجُرُوهُنَّ في المَضَاجِع، وَاضْرِبُوهُنَّ ضَرباً غَيْرَ مُبَرِّحٍ، فإنْ أطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيهنَّ سَبيلاً ؛ ألاَ إنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقّاً، وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ حَقّاً ؛ فَحَقُّكُمْ عَلَيهِنَّ أنْ لا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ مَنْ تَكْرَهُونَ، وَلا يَأْذَنَّ في بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُونَ ؛ ألاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ في كِسْوَتِهنَّ وَطَعَامِهنَّ»رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
১/২৮৬ ‘আমর ইবনে আহ্ওয়াস জুশামী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিততিনি বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনতিনি সর্বপ্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন এবং উপদেশ দান ও নসীহত করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘শোনো! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। কেননাতারা তোমাদের নিকট কয়েদী। তোমরা তাদের নিকটে এ (শয্যা-সঙ্গিনী হওয়ানিজের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং তোমাদের মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি) ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের অধিকার রাখ না। হ্যাঁসে যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতার কাজ করে (তাহলে তোমরা তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাখ)। সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করেতবে তাদেরকে বিছানায় আলাদা ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে মার। কিন্তু সে মার যেন যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়ে যায়তবে তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। মনে রেখতোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছেঅনুরূপ তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। তোমাদের অধিকার হলতারা যেন তোমাদের বিছানায় ঐ সব লোককে আসতে না দেয়যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন ঐ সব লোককে তোমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি না দেয়যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। আর শোনো! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যেতাদেরকে ভালোরূপে খেতে-পরতে দেবে।’’ (তিরমিযীহাসান সূত্রে; তিরমিযী ১১৬৩ইবনু মাজাহ ১৮৫১)  
* কয়েদী অর্থাৎ বন্দিনী। স্বামীর হুকুম পালনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীকে বন্দিনীর সাথে তুলনা করেছেন।
* যন্ত্রণাদায়ক না হয়ঃ অর্থাৎ তাতে কেটে-ফুটে না যায় এবং কঠিন ব্যথা না হয়।
* অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো নাঃ অর্থাৎ এমন পথ অনুসন্ধান করো নাযাতে তাদেরকে নাজেহাল করে কষ্ট দাও। (অথবা তালাক ইত্যাদি দেওয়ার কথা ভেবো না।)
2/287. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امرَأتَهُ إِلَى فرَاشِهِ فَلَمْ تَأتِهِ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا المَلائِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ لَهُمَا: «إِذَا بَاتَتِ المَرأةُ هَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ».
وَفي رِوَايَةٍ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «والَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأتَهُ إِلَى فِرَاشهِ فَتَأبَى عَلَيهِ إلاَّ كَانَ الَّذِي في السَّمَاء سَاخطاً عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنها».
২/২৮৭। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসেঅতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়তাহলে ফিরিশ্তাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন।’’ (বুখারীমুসলিম)  [1]
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘যখন স্ত্রী নিজ স্বামীর বিছানা ত্যাগ করে (অন্যত্র) রাত্রিযাপন করেতখন ফিরিশ্তাবর্গ সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন।’’
আর এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘সেই আল্লাহর কসমযাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে আহ্বান করার পর সে আসতে অস্বীকার করলে যিনি আকাশে আছেন তিনি (আল্লাহ) তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেনযে পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়।’’
3/288. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أيضاً : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأةٍ أنْ تَصُومَ وزَوْجُهَا شَاهدٌ إلاَّ بإذْنِهِ، وَلاَ تَأذَنَ في بَيْتِهِ إلاَّ بِإذنِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وهذا لفظ البخاري
৩/২৮৮। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোনো নারীর জন্য নফল রোযা রাখা বৈধ নয় এবং স্বামীর সম্মতি ব্যতিরেকে তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়াও তার জন্য বৈধ নয়।’’ (বুখারী ও মুসলিমশব্দগুলি বুখারীর) [2]
4/289. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عنهما، عَن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «كُلُّكُم رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ: وَالأمِيرُ رَاعٍ، والرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أهْلِ بَيتِهِ، وَالمَرْأةُ رَاعِيةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجها وَوَلَدهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৮৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীলসুতরাং প্রত্যেকেই অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীলসে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীলঅতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামী ও সন্তানের দায়িত্বশীলকাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’(বুখারী ও মুসলিম)[3]
5/290. وَعَنْ أَبِي عَلِيِّ طَلْقِ بنِ عَلِيِّ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «إِذَا دَعَا الرَّجُلُ زَوْجَتهُ لحَاجَتِهِ فَلْتَأتِهِ وَإنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُور». رواه الترمذي والنسائي، وَقالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح»
৫/২৯০। আবূ আলী ত্বাল্‌ক ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার প্রয়োজনে আহ্বান করবেতখন সে যেন (তৎক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে উনানের কাছে (রুটি ইত্যাদি পাকানোর কাজে ব্যস্ত) থাকে।’’ (তিরমিযী হাসান সূত্রে)  [4]
6/291. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «لَوْ كُنْتُ آمِراً أحَداً أنْ يَسْجُدَ لأحَدٍ لأمَرْتُ المَرأةَ أنْ تَسْجُدَ لزَوجِهَا». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
৬/২৯১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদাহ করার আদেশ করতামতাহলে নারীকে আদেশ করতামসে যেন তার স্বামীকে সিজদাহ করে।’’ (তিরমিযী হাসান সূত্রে)[5]
7/292. وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «أَيُّمَا اِمْرأَةٍ مَاتَتْ وَزُوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ»رواه الترمذي وقال  حديث حسن .
৭/২৯২। উম্মু সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্ত্রীর প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট ও খুশি থাকা অবস্থায় কোনো স্ত্রীলোক মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি ইমাম তিরমিযি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটা হাসান হাদীস।[6]
8/293. وَعَن مُعَاذِ بنِ جَبَلٍ رضي الله عنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لاَ تُؤْذِي امْرَأةٌ زَوْجَهَا في الدُّنْيَا إلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الحُورِ العِينِ لاَ تُؤذِيهِ قَاتَلكِ اللهُ ‍! فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن»
৮/২৯৩। মুআয ইবন জাবাল কর্তৃক বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই কোনো মহিলা দুনিয়াতে নিজ স্বামীকে কষ্ট দেয়তখনই তার সুনয়না হূর (জান্নাতী) স্ত্রী (অদৃশ্যভাবে) ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে বলে, ‘আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন। ওকে কষ্ট দিস্ না। ও তো তোর নিকট সাময়িক মেহমান মাত্র। অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের কাছে এসে যাবে।’’(তিরমিযী) [7]
9/294. وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً هِيَ أضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّساء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৯/২৯৪। উসামাহ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি আমার পর পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বেশী ক্ষতিকারক অন্য কোন ফিতনা ছাড়লাম না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)  [8]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার


আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৮৭।)

স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের পোশাকের মতো। পোশাক যেমন আমাদের ইজ্জত-আব্রু হেফাজত করে ও আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকাও তেমনি। আমাদের কারো পোশাক যদি কখনো ময়লা হয়ে সেটা যেমন আমরা একেবারে ফেলে না দিয়ে যত্ন করে পরিষ্কার করি, ঠিক তেমনি স্বামী বা স্ত্রীর কারো কোন ত্রুটি থাকলে সেই কারনে তার পুরোটাই খারাপ, তার সাথে আর ভালো ব্যবহার করা যাবে না, এমন না। বরং, স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হবে, একজন আরেকজনকে নেকীর কাজে সাহায্য করবে – তাহলেই সম্ভব একটা সুখী পরিবার গড়ে তোলা।

 স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা – এটা যেমন সুখী পরিবার গঠনের অপরিহার্য শর্ত, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, এটা একটা সৃষ্টিকর্তার আদেশ – যা মানতে আমরা সকলেই বাধ্য!

• “তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর, যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন।” (সুরা আন-নিসাঃ ১৯।)

• “পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু, নারীরদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২২৮।)

পুরুষদের মাঝে অনেকেই আছে – নামায রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের ব্যপারে তারা অগ্রগামী, বাইরের লোকদের সাথে খুব সাধু, মানুষের মাঝে নিজদের সুনাম ধরে রাখার জন্য, নিজের নাম ভালো রাখার জন্য সদা ততপর – কিন্তু ঘরে আসলে তাদের মুখোশ খুলে ‘আসল চেহারা’ বেরিয়ে আসে! পুরুষদের অনেকেই নিজ ঘরের মানুষদের সাথেই ভালো আচরণ করেনা, তাদের হক্ক ঠিকমতো আদায় করেনা – যদিও বাইরের মানুষেরা তাকে ভালো, সদাচরণকারী ও পরোপকারী বলেই জানে। আশচর্যের ব্যপার হচ্ছে, বাইরের মানুষের কাছে যেই লোকটি সবচেয়ে ভালো, তার নিজের স্ত্রীর কাছে সেই লোকটি সবচাইতে খারাপ। বিবাহিত ভাইদের অনেকে নিজদের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথেও ভালো আচরণ করেন না, অনেকে নিজদের স্ত্রীদেরকে মানুষই মনে করেন না, তাদের একটু ভুল-ত্রুটি দেখতে পেলেই বাঘের মতো চার্জ করে বসেন। নিঃসন্দেহে এইটা মারাত্বক রকমের ভুল ও চরিত্রের সাংঘাতিক ত্রুটি যা একজন অনেক ইবাদতকারী বান্দাকেও খুব সহজেই জাহান্নামের অতল গহবরে প্রবেশ করিয়ে দেবে – আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।

• আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করেন, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাচতে চান, তাহলে জেনে রাখুনঃ

স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তাদের হক্ক নষ্ট করে, তাদের সাথে অন্যায় ও জুলুম অত্যাচার করে আপনি জাহান্নামে যাবেন। স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ ও জুলুম করার কারণে কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে খারাপ বলে মনে করে, তাহলে আপনি যতই ইবাদত করে থাকেন না কেনো, আল্লাহর কাছেও আপনি খারাপ বলে গণ্য হবেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

“পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” (তিরমিযীঃ ১১৬২; হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহঃ ২৮৪।)

অন্য হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

“স্বামীকে খুশী রেখে যে স্ত্রীলোক মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতে যাবে।” (ইবনে মাযাহ, তিরমিযী ও হাকেম।)

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, জান্নাতী হওয়ার জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য উভয়ের ভালো হওয়ার সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন আছে!

স্ত্রীদের প্রতি দয়া ও কোমলতা প্রদর্শন করা এবং হিংস্রতা থেকে দূরে থাকা

দুনিয়ার কোন মানুষই ভুল-ত্রুটির উর্ধে নয়। আপনার স্ত্রীও একজন মানুষ, তারা কোন রোবট নয় সুতরাং আপনি যেমন ভুল করতে পারেন, আপনার স্ত্রীও ভুল করতে পারে। আপনি নিজে চিন্তা করুন, আপনি দিনে-রাতে উঠতে বসতে কত ভুল করছেন কিন্তু আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করছেন ও সুযোগ দিচ্ছেন – তাহলে আপনি কেনো অন্য আরেকজনের সূক্ষ্ম ভুলকে পাহাড় সমান বানাচ্ছেন? স্ত্রীদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করতে শিখুন, তাদেরকে উত্তম ভাষায় উপদেশ দিন, নিজে ভালো হয়ে তার সামনে সুন্দর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরুন। এতে করে যেমন আপনি নিজে মানসিকভাবে শান্তি পাবেন, স্ত্রী আপনার কটু কথার অত্যাচার থেকে রেহাই পাবে – এবং এইরকম ভালো আচরণ ও কোমলতার অভ্যাসের বিনিময়ে আশা করা যায় আপনার স্ত্রীর কোন ভুল থাকলে সে সংশোধন করতে আগ্রহী হবে।

পক্ষান্তরে আপনি যদি কোমলতা না দেখান, সামান্য ব্যপার নিয়ে স্ত্রীর সাথে বাধাবাধি করেন তাহলে জেনে রাখুন – এতে হিতে বিপরীত হবে। বেশি সমালোচনা দুনিয়ার সবচাইতে ভালো মানুষটাকেও খারাপ বানিয়ে দেয়, এতে তার মাঝে খারাপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়, ফলে সে নিজের ভুল সংশোধন না করে উলটো বেকে বসে। এইজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে খুব বেশি নসীহত করেছেন তাঁর উম্মতদেরকে, তারা যাতে করে তাদের স্ত্রীদের জন্য কল্যানকামী হয়, তাদের সাথে ভালো আচরণ করে।

আ’মর ইবনুল আহ্ওয়াস থেকে বর্ণিত। তিনি বিদায় হাজ্জে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করেন এবং ওয়াজ-নসীহত করেন। এরপর তিনি বলেনঃ 

তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও। কেননা তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ আছে। এর অধিক তাদের উপর তোমাদের কর্তৃত্ব নাই যে, তারা যদি প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়, সত্যিই যদি তারা তাই (প্রকাশ্য অশ্লীলতা) করে, তবে তোমরা তাদেরকে পৃথক বিছানায় রাখবে এবং আহত হয় না এরূপ হাল্কা মারধর করবে। অতঃপর তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের উপর আর বাড়াবাড়ি করো না। স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপরও তাদের অধিকার আছে। তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা তোমাদের শয্যা তোমাদের অপছন্দনীয় লোকদের দ্বারা মাড়াবে না এবং তোমাদের অপছন্দনীয় লোকেদেরকে তোমাদের ঘরে প্রবেশানুমতি দিবে না। সাবধান! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদের ভরণপোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি শোভনীয় আচরণ করবে।” (সুনানু ইবনে মাজাহ্, নিকাহ বা বিবাহ অধ্যায়ঃ ১৮৫১, তিরমিযী ১১৬৩, হাদীসটি হাসান সহীহ, ইরওয়াহ ১৯৯৭-২০২০।)

আপনি নিজে আল্লাহকে মানেন না, আপনার চরিত্র যদি ফেরাউনের মতো হয় তাহলে আপনি কি করে আশা করেন আপনার স্ত্রী আসিয়ার (আঃ) এর মতো উত্তম হবে? আপনি মুহা’ম্মাদ সাঃ এর আদর্শকে অনুসরণ করুন – তাহলে আপনি আশা করতে পারেন আপনার স্ত্রী খাদিজাহ (রাঃ), আয়িশাহ (রাঃ) এর মতো হবে।

আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কোনদিন নিজের স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলেনি নি, তাদেরকে গালি দেন নি – অন্যায়ভাবে কটু কথা বলে তাদেরকে কষ্ট দেন নি। বরং, তিনি কোমলতা প্রদর্শনের জন্য কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন।

হাদীসগুলো দেখুনঃ

• আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব তুমি যদি সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখ তবে বাঁকা হতেই থাকবে। অতএব, নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীনঃ ২৭৩।)

• আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ দয়ালু, তিনি কোমলতাকে পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার বিপরীতে দেন যা তিনি সহিংসতার বিপরীতে দেন না, কোমলতা ব্যতীত অন্য কিছুর বিপরীতে দেন না।” (সহীহ মুসলিম।)

• আয়েশা (রাযি:) থেকে আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ কোমলতাপূর্ণ, তিনি সকল বিষয়ে কোমলতাকে পছন্দ করেন।” (বুখারি ও মুসলিম।)

• জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযি:) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “যাকে কোমলতা থেকে বঞ্চিত করা হল তাকে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত করা হল।” (সহীহ মুসলিম।)

• ইমাম আহমদ আয়েশা (রাযি:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাকে খেতাব করে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি কোমলতা অবলম্বন করো; কেননা আল্লাহ তাআলা যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান তখন তাদেরকে কোমলতার পথ দেখান, অন্য এক বর্ণনা মতে- আল্লাহ যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তিনি তাদের মধ্যে কোমলতার প্রবেশ ঘটান।” (মুসনাদে আহমদ।)

দুনিয়াবাসীর মাঝে আপনার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনই আপনার কোমলতা পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবীদার।

সর্বশেষ, আপনি যদি আপনার ঘরের নারীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন – আপনার পরকাল নষ্ট হবে, সাথে সাথে আপনি দুনিয়ার জীবনে থার্ডক্লাস নিম্নশ্রেণীর পুরুষ হিসেবেই গণ্য হবেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

“শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয় অসম্মানজনক।” সুনানে আত-তিরমিযী।

স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করার অসিয়ত



আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ﴾ [النساء: ١٩] 
অর্থাৎ “তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর।” (সূরা নিসা ১৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَن تَسۡتَطِيعُوٓاْ أَن تَعۡدِلُواْ بَيۡنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡۖ فَلَا تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلۡمَيۡلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلۡمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصۡلِحُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٢٩ ﴾ [النساء: ١٢٩] 
অর্থাৎ “তোমরা যতই সাগ্রহে চেষ্টা কর না কেনস্ত্রীদের প্রতি সমান ভালোবাসা তোমরা কখনই রাখতে পারবে না। তবে তোমরা কোন এক জনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অপরকে ঝুলন্ত অবস্থায় ছেড়ে দিও না। আর যদি তোমরা নিজেদের সংশোধন কর ও সংযমী হওতবে নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীলপরম দয়ালু।” (সূরা নিসা ১২৯ আয়াত)
1/278. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «اسْتَوْصُوا بالنِّسَاءِ خَيْراً ؛ فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلعٍ، وَإنَّ أعْوَجَ مَا في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فَإنْ ذَهَبتَ تُقيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإنْ تَرَكْتَهُ، لَمْ يَزَلْ أعْوجَ، فَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية في الصحيحين: «المَرأةُ كالضِّلَعِ إنْ أقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا، وَإن اسْتَمتَعْتَ بِهَا، اسْتَمتَعْتَ وفِيهَا عوَجٌ».
وفي رواية لمسلم: «إنَّ المَرأةَ خُلِقَت مِنْ ضِلَع، لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَريقة، فإن اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفيهَا عوَجٌ، وإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَها، وَكَسْرُهَا طَلاَقُهَا».
১/২৭৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাওতাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)  [1]

বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মহিলা পাঁজরের হাড়ের মত। যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাওতবে তুমি তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাওতাহলে তার এ বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে।’’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মহিলাকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে কখনই একভাবে তোমার জন্য সোজা থাকবে না। এতএব তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাওতাহলে তার এ বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে। আর যদি তুমি তা সোজা করতে চাওতাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর তাকে ভেঙ্গে ফেলা হল তালাক দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/279. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ زَمْعَةَ رضي الله عنه : أنَّهُ سَمِعَ النَّبيَّ ﷺ يَخْطُبُ، وَذَكَرَ النَّاقَةَ وَالَّذِي عَقَرَهَا، فَقَالَ رَسُول اللهِ ﷺ: «﴿ إِذِ ٱنۢبَعَثَ أَشۡقَىٰهَا ١٢ ﴾ [الشمس: ١٢]  انْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزيزٌ، عَارِمٌ مَنيعٌ في رَهْطِهِ»، ثُمَّ ذَكَرَ النِّسَاءَ، فَوعَظَ فِيهنَّ، فَقَالَ: «يَعْمِدُ أحَدُكُمْ فَيَجْلِدُ امْرَأتَهُ جَلْدَ العَبْدِ فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَومِهِ».ثُمَّ وَعَظَهُمْ في ضَحِكِهمْ مِنَ الضَّرْطَةِ، وَقالَ: «لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ ؟!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২৭৯। আব্দুল্লাহ ইবনে যামআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুৎবাহ দিতে শুনলেন। তিনি (খুৎবার মাধ্যমে) (সালেহ নবীর) উটনী এবং ঐ ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেনযে ঐ উঁটনীটিকে কেটে ফেলেছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তাদের মধ্যকার সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল। (সূরা শাম্‌স ১২ আয়াত) (অর্থাৎ) উঁটনীটিকে মেরে ফেলার জন্য নিজ বংশের মধ্যে এক দুরন্ত চরিত্রহীন প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল।’’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের কথা আলোচনা করলেন এবং তাদের ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে দাসদের মত প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবত দিনের শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (এরূপ উচিত নয়।)’’ পুনরায় তিনি তাদেরকে বাতকর্মের ব্যাপারে হাসতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ এমন কাজে কেন হাসেযে কাজ সে নিজেও করে?’’ (বুখারী ও মুসলিম) [2]
3/280. وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقاً رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ»، أَوْ قَالَ: «غَيْرَهُ»رواه مسلم
৩/২৮০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারী (স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। যদি সে তার একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়তবে অন্য আচরণে সন্তুষ্ট হবে।’’ (মুসলিম)  [3]
4/281. وَعَن عَمرِو بنِ الأحوَصِ الجُشَمِي رضي الله عنه : أنَّهُ سَمِعَ النَّبيّ ﷺ في حَجَّةِ الوَدَاعِ يَقُولُ بَعْدَ أنْ حَمِدَ الله تَعَالَى، وَأثْنَى عَلَيهِ وَذَكَّرَ وَوَعظَ، ثُمَّ قَالَ: «ألا وَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ خَيْراً، فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ عِنْدَكُمْ لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئاً غَيْرَ ذلِكَ إلاَّ أنْ يَأتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ، فَإنْ فَعَلْنَ فَاهْجُرُوهُنَّ في المَضَاجِع، وَاضْرِبُوهُنَّ ضَرباً غَيْرَ مُبَرِّحٍ، فإنْ أطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيهنَّ سَبيلاً ؛ ألاَ إنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقّاً، وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ حَقّاً ؛ فَحَقُّكُمْ عَلَيهِنَّ أنْ لا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ مَنْ تَكْرَهُونَ، وَلا يَأْذَنَّ في بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُونَ ؛ ألاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ في كِسْوَتِهنَّ وَطَعَامِهنَّ»رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
৪/২৮১। ‘আমর ইবনে আহ্ওয়াস জুশামী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিততিনি বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনতিনি সর্বপ্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন এবং উপদেশ দান ও নসীহত করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘শোনো! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। কেননাতারা তোমাদের নিকট কয়েদী। তোমরা তাদের নিকটে এ (শয্যা-সঙ্গিনী হওয়ানিজের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং তোমাদের মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি) ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের অধিকার রাখ না। হ্যাঁসে যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতার কাজ করে (তাহলে তোমরা তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাখ)। সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করেতবে তাদেরকে বিছানায় আলাদা ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে মার। কিন্তু সে মার যেন যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়ে যায়তবে তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। মনে রেখতোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছেঅনুরূপ তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। তোমাদের অধিকার হলতারা যেন তোমাদের বিছানায় ঐ সব লোককে আসতে না দেয়যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন ঐ সব লোককে তোমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি না দেয়যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। আর শোনো! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যেতাদেরকে ভালোরূপে খেতে-পরতে দেবে।’’ (তিরমিযী,হাসান সূত্রে)  [4]
* কয়েদী অর্থাৎ বন্দিনী। স্বামীর হুকুম পালনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীকে বন্দিনীর সাথে তুলনা করেছেন।
* যন্ত্রণাদায়ক না হয়ঃ অর্থাৎ তাতে কেটে-ফুটে না যায় এবং কঠিন ব্যথা না হয়।
* অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো নাঃ অর্থাৎ এমন পথ অনুসন্ধান করো নাযাতে তাদেরকে নাজেহাল করে কষ্ট দাও। (অথবা তালাক ইত্যাদি দেওয়ার কথা ভেবো না।)
5/282. وَعَن مُعَاوِيَةَ بنِ حَيدَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ الله، مَا حَقُّ زَوجَةِ أَحَدِنَا عَلَيهِ ؟ قَالَ: «أنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طعِمْتَ، وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، وَلاَ تَضْرِبِ الوَجْهَ، وَلا تُقَبِّحْ، وَلا تَهْجُرْ إلاَّ في البَيْتِ».حديثٌ حسنٌ رواه أَبُو داود وَقالَ : معنى «لا تُقَبِّحْ»أي : لا تقل : قبحكِ الله .
৫/২৮২। মুআবিয়াহ ইবনে হাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যেআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো স্ত্রীর অধিকার স্বামীর উপর কতটুকু?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি খেলে তাকে খাওয়াবে এবং তুমি পরলে তাকে পরাবে। (তার) চেহারায় মারবে নাতাকে কুৎসিত হ’ বলবে না এবং তার থেকে পৃথক থাকলে বাড়ীর ভিতরেই থাকবে।’’ (অর্থাৎ অবাধ্য স্ত্রীকে বাধ্য করার জন্য বিছানা পৃথক করতে পারা যাবেকিন্তু রুম পৃথক করা যাবে না।) (আবূ দাউদহাসান সূত্রে)  [5]
কুৎসিত হ’ বলবে নাঃ অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে কুৎসিত করুক’ বলে অভিশাপ দেবে না।
6/283. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أكْمَلُ المُؤمِنِينَ إيمَاناً أحْسَنُهُمْ خُلُقاً، وخِيَارُكُمْ خِيَارُكُم لِنِسَائِهِمْ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
৬/২৮৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুমিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার চেয়ে সুন্দরআর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তিযে নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম।’’ (তিরমিযী)  [6]
7/284. وَعَن إِيَاسِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ أَبي ذِبَابٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ تَضْرِبُوا إمَاء الله» فجاء عُمَرُ رضي الله عنه إِلَى رسولِ الله ﷺ، فَقَالَ : ذَئِرْنَ النِّسَاءُ عَلَى أزْوَاجِهِنَّ، فَرَخَّصَ في ضَرْبِهِنَّ، فَأطَافَ بآلِ رَسُولِ اللهِ ﷺ نِسَاءٌ كَثيرٌ يَشْكُونَ أزْواجَهُنَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لَقَدْ أطَافَ بِآلِ بَيتِ مُحَمَّدٍ نِسَاءٌ كثيرٌ يَشْكُونَ أزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أولَئكَ بخيَارِكُمْ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৭/২৮৪। ইয়াস ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে প্রহার করবে না।’’ পরবর্তীতে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের স্বামীদের উপর বড় দুঃসাহসিনী হয়ে গেছে।’ সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রহার করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের নিকট বহু মহিলা এসে নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরম্ভ করল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট প্রচুর মহিলাদের সমাগমযারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। (জেনে রাখমারকুটে) ঐ (স্বামী)রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ নয়।’’ (আবূ দাউদবিশুদ্ধ সূত্রে)  [7]
8/285. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «الدُّنْيَا مَتَاعٌ، وَخَيرُ مَتَاعِهَا المَرْأَةُ الصَّالِحَةُ». رواه مسلم
৮/২৮৫। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’ (মুসলিম) [8]

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা থাকা কি আবশ্যকীয়



স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা: একটি মানুষের সহজাত প্রকৃতি। এ ধরণের বিষয়ের ক্ষেত্রে এ কথা বলা যাবে না যে, শরিয়তে এটি ওয়াজিব। কিংবা শরিয়ত এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে। বরং এ ধরণের বিষয়ের ক্ষেত্রে নতুন কোন শরয়ি নির্দেশ সন্ধানের বদলে প্রকৃতিগত কারণই যথেষ্ট।

নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি দাম্পত্য জীবনকে শুধু রোমান্টিক উপন্যাস কিংবা গোলাপি স্বপ্ন কল্পনা করে বেড়ায় সে যেন এমন কিছুর সন্ধান করছে মানুষের এই দুনিয়াতে যার অস্তিত্ব অসম্ভব। যে দুনিয়াকে কষ্ট, ক্লেশ ও ক্লান্তির প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় আমি মানবজাতিকে কষ্ট-ক্লেশনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।”[সূরা বালাদ, আয়াত: ৪]

কবি বলেন:

প্রকৃতিগতভাবে জীবন হচ্ছে ক্লেশময়; অথচ তুমি জীবনকে পেতে চাও সমস্যা ও সংকটমুক্ত নির্মল।

যে ব্যক্তি জীবনকে তার সহজাত প্রকৃতি বিরুদ্ধ দায়িত্ব দিতে চায় সে যেন পানির ভেতরে আগুনের অঙ্গার সন্ধান করে বেড়াচ্ছে।

আমরা যদি এইটুকু বুঝে থাকি এবং যথাযথ দৃষ্টিতে জীবনকে দেখি তখন আমরা দেখব যে, কামালিয়াত তথা পূর্ণতায় পৌঁছা কিংবা সর্বদোষ মুক্ত হওয়ার কোন পথ নেই। আপনার জন্য এইটুকু যথেষ্ট যে, আপনি যে দোষ বা ঘাটতি দেখতে পাচ্ছেন সেটা যেন প্রশান্তি ও পথ চলা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক না হয়। এক ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে তালাক দেয়া চিন্তা-ভাবনা করছিল তখন উমর (রাঃ) তাকে বললেন: আপনি কেন তাকে তালাক দিতে চাচ্ছেন? লোকটি বলল: আমি তাকে ভালবাসি না। তিনি বললেন: প্রত্যেক ঘর কি ভালোবাসার ভিত্তিতে গড়ে উঠে? আদর-যত্ম ও লোক-নিন্দাবোধ কোথায়?!!

অর্থাৎ আপনার সঙ্গিনী, আপনার স্ত্রী থেকে প্রাপ্ত কষ্টে ধৈর্য ধরুন। আপনার যে অবস্থা সকল মানুষের তাদের স্ত্রী ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে একই অবস্থা। মানুষ একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া সত্ত্বেও, একে অপরকে পছন্দ না করা সত্ত্বেও একত্রিত হয়। একের প্রতি অপরের প্রয়োজন তাদেরকে সমাবেত করে।!!

তাই পরিবারের সদস্যরা একে অপরের যত্ম নেয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠে এবং প্রত্যেকে একের প্রতি অন্যের কর্তব্য বুঝতে পারে। আর লোক-নিন্দাবোধ হচ্ছে প্রত্যেকে এমন আচরণ পরিহার করে চলা যাতে করে তার মাধ্যমে তাদের পথচলা আলাদা হয়ে যাওয়া বা বিচ্ছিন্নতা না ঘটে।

আপনি আল্লাহ্‌ তাআলার এ বাণীটি নিয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করুন:

“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।”[সূরা রূম, আয়াত: ২১]

এখানে আল্লাহ্‌ তাআলা স্বামী-স্ত্রীর মাঝের “ভালোবাসা” কে আল্লাহ্‌র সৃষ্টি ও তাঁর ক্ষমতার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন; তাঁর নির্দেশিত আবশ্যক পালনীয় হিসেবে উল্লেখ করেননি। কারণ অন্তরের ভালোবাসা বান্দার মালিকানাধীন নয়। বরং বান্দা যেটার মালিক সেটা হচ্ছে– অনুগ্রহ ও সদাচরণ।

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন”। এর অর্থ তোমাদের স্বজাতি থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীর ব্যবস্থা করেছেন। “যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও”। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।”[সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮৯] এর দ্বারা আল্লাহ্‌ বুঝাতে চাচ্ছেন ‘হাওয়া’ কে। আদম (আঃ) এর বাম পাঁজরের ছোটতম হাড় থেকে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। যদি আল্লাহ্‌ সকল বনী আদমকে পুরুষ বানাতেন, আর তাদের নারীদেরকে অন্য জাতি থেকে বানাতেন, যেমন- জ্বিন কিংবা অন্য প্রাণী থেকে তাহলে তাদের মাঝে ও তাদের স্ত্রীদের মাঝে এ ধরণের মেল-বন্ধন তৈরী হত না। বরং স্ত্রীরা অন্য জাতির হলে তাদের পরস্পরের মাঝে বিরাগ ঘটত। বনী আদমের প্রতি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ অনুগ্রহ হচ্ছে যে, তিনি তাদের স্ত্রীদেরকে তাদের জাতি থেকেই সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের পরস্পরের মাঝে অনুরাগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যেটা হচ্ছে- ভালোবাসা। এবং দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যেটা হচ্ছে- মায়া। তাই একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ধরে রাখেন হয়তো তার প্রতি ভালোবাসার কারণে; কিংবা তার প্রতি মায়ার কারণে– সেই স্ত্রীর ঘরে তার সন্তান থাকলে কিংবা স্ত্রী তার ভরণপোষণের মুখাপেক্ষী হলে কিংবা তাদের দুইজনের মাঝে মেলবন্ধনের কারণে ইত্যাদি।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৬/৩০৯) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন:

“আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ্‌ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা সেটাকেই অপছন্দ করছ।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৯]

শাইখ সা’দী (রহঃ) বলেন: স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে­­ –  স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করা; যেমন- ভাল সঙ্গ দেয়া, কষ্ট না দেয়া, অনুগ্রহ করা, সুন্দর ব্যবহার করা, এর মধ্যে ভরণ-পোষণ ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত হবে।

“তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ্‌ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।” 

অর্থাৎ ওহে স্বামীগণ, তোমাদের উচিত অপছন্দ করলেও তোমাদের স্ত্রীদেরকে ধরে রাখা। কারণ এতে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সে কল্যাণের মধ্যে রয়েছে:

-          আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন ও তাঁর ওসিয়ত গ্রহণ; যাতে নিহিত আছে দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ।

-          অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীকে ধরে রাখতে নিজেকে বাধ্য করা। এতে করে প্রবৃত্তির দমন ও উত্তম চরিত্র অর্জিত হয়।

-          হতে পারে স্ত্রীর প্রতি ঘৃণাবোধ দূর হয়ে সেখানে ভালোবাসা স্থান করে নিবে; বাস্তবে এটাই ঘটে।

-          হতে পারে এ স্ত্রীর ঘরে কোন নেক সন্তান জন্ম নিবে। যে সন্তান তার পিতামাতার দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ করবে।

কোন গুনাহর কাজে লিপ্ত হওয়া ছাড়া বিবাহ-বন্ধন অটুট রাখতে পারলে এ কল্যাণগুলো ঘটতে পারে। আর যদি বিবাহ বিচ্ছেদ করতেই হয়; বিবাহ অটুট রাখার কোন সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে ধলে রাখা আবশ্যক নয়।[তাফসিরে সা’দী (পৃষ্ঠা-১৭২) থেকে সমাপ্ত]

সহিহ মুসলিমে (১৪৬৯) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন মুমিন স্বামী যেন মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। যদি তার কোন একটি আচরণ অপছন্দনীয় হয় অন্য আরেকটি আচরণ সন্তোষজনক হবে।”

ইমাম নববী বলেন:

“অর্থাৎ স্বামীর উচিত স্ত্রীকে ঘৃণা না করা। কারণ স্বামী যদি স্ত্রীর মাঝে এমন কোন আচরণ পায় যা তার অপছন্দ হয়, তবে সে তার মাঝে এমন গুণও পায় যার প্রতি সে সন্তুষ্ট হয়। যেমন– বদমেজাজী কিন্তু দ্বীনদার কিংবা সুন্দরী কিংবা সতী কিংবা স্বামীর প্রতি কোমলপ্রাণ ইত্যাদি”।[সমাপ্ত]

দুই:

যদি আমরা ধরেও নিই যে, স্বামী-স্ত্রীর একের প্রতি অন্যের “ভালোবাসা” থাকা ওয়াজিব, স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে ভালোবাসা ও তার সাথে সম্পৃক্ত থাকা অনিবার্য; সেক্ষেত্রেও একজন পুরুষের দুইজন, তিনজন বা চারজন নারীকে বিয়ে করতে ও তাদের সকলকে ভালবাসতে সমস্যা কোথায়?!

এতে প্রতিবন্ধকতা কোথায়! কেবল স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা কিংবা দুই ব্যক্তির ভালোবাসার ক্ষেত্রে “রোমান্টিক” কিছু চিন্তাধারা ব্যতীত। যে সব চিন্তাধারায় মনে করা হয় যে, ভালোবাসায় “অংশীদারিত্ব” চলে না। তারা যেন ভালোবাসার মানুষকে রব্ব বা প্রতিপালকের মর্যাদায় চিত্রিত করতে চায়। প্রতিপালকের ইবাদতে যেমন অংশীদারিত্ব চলে না?!!

একই ব্যক্তি তার বাবাকে ভালোবাসে, তার মাকে ভালোবাসে, তার অমুক অমুককে ভালোবাসে; তাই নয় কী? এ সবই তো এক জাতীয় ভালোবাসা। কই এই ভালোবাসার অংশীদারিত্বে তো কোন বিঘ্ন ঘটছে না। তাহলে কোন কারণে একজন পুরুষ ও তার একাধিক স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা তৈরী হওয়াকে অসম্ভব জ্ঞান করা হবে?!

খাবারের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে অমুক অমুক খাবার পছন্দ করেন। অমুক অমুক খাবার ভালোবাসে। সবগুলোই খাবার। স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন। ঘ্রাণ ভিন্ন ভিন্ন। সে ব্যক্তি সবগুলোকেই পছন্দ করে, খেতে ভালোবাসে। সুতরাং, কোন যুক্তি কিংবা কোন শরিয়ত একই সময়ে একাধিক স্ত্রীকে ভালবাসতে বাধা দিচ্ছে?!

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা কেন এমন খাস বিষয় যে, এতে অংশীদারিত্ব চলবে না?!

এমন ভালাবাসা কি জগৎসমূহের প্রতিপালকের প্রতি ইবাদতস্বরূপ ভালোবাসা ছাড়া আর কোন ভালোবাসা হতে পারে?!

যদি কেউ বলে যে, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এটাই তো ঘটে আসছে যে, একজন পুরুষ শুধু একজন নারীর সাথেই সম্পৃক্ত হয় এবং একজন নারী শুধু একজন পুরুষকেই ভালোবাসে?

এর জবাব হল: তা ঠিক আছে। অধিকাংশ মানুষ একাধিক বিয়ে করে না। কিন্তু অন্য অনেক মানুষ তো একাধিক বিয়ে করছে এবং তারা একাধিক স্ত্রীকে ভালবেসে যাচ্ছে। এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে এবং বর্তমানেও পুনঃপুনঃ ঘটে যাচ্ছে।