নিম্নে দান-সদকার দেওয়ার কিছু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র বর্ণনা করা হলো।
১. জনকল্যাণে পাড়ায় পাড়ায় পানি সরবরাহের জন্য পুকুর বা নলকূপ খনন করা:
সা’দ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোনো সদকা আপনার নিকট অধিক পছন্দনীয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«الْـمَاءُ»
“জনকল্যাণে পানি সরবরাহ করা”।[82]অন্য বর্ণনায় এসেছে, সা’দ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সা'দের মা তথা আমার মা তো মরে গেলো। অতএব তাঁর জন্য কোন্ সদকা করলে বেশি ভালো হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«الْـمَاءُ»
“জনকল্যাণে পানি সরবরাহ করা”।[83]তখন সা’দ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটি কূপ খনন করলেন এবং বললেন, এটি সা'দের মার জন্য।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَيْسَ صَدَقَةٌ أَعْظَمَ أَجْرًا مِنْ مَاءٍ»
“পানি সরবরাহের চাইতে আরো বেশি সাওয়াবের সদকা আর নেই”।[84]জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ حَفَرَ مَاءً لَمْ يَشْرَبْ مِنْهُ كَبِدٌ حَرَّى مِنْ جِنٍّ وَلاَ إِنْسٍ وَلاَ طَائِرٍ إِلاَّ آجَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
“কেউ কোনো কুয়া খনন করলে তা থেকে মানুষ, জিন, পাখি তথা যে কোনো পিপাসার্ত প্রাণীই পান করুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে এর সাওয়াব দিবেন”।[85]জনৈক ব্যক্তি কোনো মানুষকে নয় বরং একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করলেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِيْ بِطَرِيْقٍ، اشْتَدَّ عَلَيْهِ الْعَطَشُ، فَوَجَـدَ بِئْرًا فَنَزَلَ فِيْهَا، فَشَرِبَ ثُمَّ خَرَجَ، فَإِذَا كَلْبٌ يَلْهَثُ، يَأْكُلُ الثَّرَى مِنَ الْعَطَشِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: لَقَدْ بَلَغَ هَذَا الْكَلْبَ مِنَ الْعَطَشِ مِثْلُ الَّذِيْ كَانَ بَلَغَ بِيْ، فَنَزَلَ الْبِئْرَ فَمَلَأَ خُفَّهُ ثُمَّ أَمْسَكَهُ بِفِيْهِ فَسَقَى الْكَلْبَ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: فَأَدْخَلَهُ الْـجَنَّةَ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَإِنَّ لَنَا فِيْ الْبَهَائِمِ أَجْرًا؟ فَقَالَ: فِيْ كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ»
“একদা জনৈক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো। এমতাবস্থায় হঠাৎ তার কঠিন পিপাসা লেগে গেলো। পথিমধ্যে সে একটি কুয়া দেখতে পেয়ে তাতে নেমে পানি পান করে বেরিয়ে আসলো। উপরে উঠে সে দেখতে পেলো একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে কাঁচা মাটি খাচ্ছে। তখন লোকটি মনে মনে বললো, আমার যেমন পিপাসা লেগেছিলো তেমনি তো এ কুকুরটিরও পিপাসা লেগেছে। তখন সে আবারো কুয়ায় নেমে নিজের (চামড়ার) মোজায় পানি ভর্তি করে উপরে উঠলো এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তা‘আলা এর প্রতিদানস্বরূপ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাকে জান্নাত দিয়ে দিলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর পরিচর্যা করলেও কি আমরা সাওয়াব পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রতিটি প্রাণীর পরিচর্যায়ই সাওয়াব রয়েছে”।[86]২. কাউকে কোনো দুধেল পশু ধার দেওয়া:
আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَرْبَعُوْنَ خَصْلَةً أَعْلاَهُنَّ مَنِيْحَةُ الْعَنْزِ، مَا يَعْمَلُ رَجُلٌ بِخَصْلَةٍ مِنْهَا رَجَاءَ ثَوَابِهَا، وَتَصْدِيْقَ مَوْعُوْدِهَا، إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللهُ بِهَا الْـجَنَّةَ»
“চল্লিশটি কাজ এমন রয়েছে যার কোনো একটিও কেউ সাওয়াবের আশায় এবং পরকালের প্রাপ্তির উপর বিশ্বাস করে সম্পাদন করলে আল্লাহ তা‘আলা এর বিপরীতে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে তার মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে কোনো দুধেল ছাগী কাউকে ধার দেওয়া”।[87]৩. কোনো ঋণগ্রস্তকে তার ঋণ পরিশোধে সহযোগিতার জন্য যথাসাধ্য সদকা দেওয়া:
আবু সা’ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈক ব্যক্তি কিছু ফসল খরিদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতঃপর তার উপর ঋণের বোঝা খুব বেড়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَصَدَّقُوْا عَلَيْهِ، فَتَصَدَّقَ النَّاسُ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَبْلُغْ ذَلِكَ وَفَاءَ دَيْنِهِ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِغُرَمَائِهِ: خُذُوْا مَا وَجَدْتُمْ، وَلَيْسَ لَكُمْ إِلاَّ ذَلِكَ»
“তোমরা তাকে সদকা দাও। অতঃপর সবাই তাকে সদকা দিলো। কিন্তু তা তার ঋণ সমপরিমাণ হলো না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঋণদাতাদেরকে বললেন, তোমরা যা পাচ্ছো তাই নিয়ে যাও। এর চাইতে বেশি আর তোমরা পাচ্ছো না”।[88]৪. সুযোগ পেলেই কাউকে খানা খাওয়ানো:
আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীল বান্দাহদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿ يُوفُونَ بِٱلنَّذۡرِ وَيَخَافُونَ يَوۡمٗا كَانَ شَرُّهُۥ مُسۡتَطِيرٗا ٧ وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨ إِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجۡهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمۡ جَزَآءٗ وَلَا شُكُورًا ٩ إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوۡمًا عَبُوسٗا قَمۡطَرِيرٗا ١٠ فَوَقَىٰهُمُ ٱللَّهُ شَرَّ ذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمِ وَلَقَّىٰهُمۡ نَضۡرَةٗ وَسُرُورٗا ١١ وَجَزَىٰهُم بِمَا صَبَرُواْ جَنَّةٗ وَحَرِيرٗا ١٢ ﴾ [الانسان: ٧، ١٢]
“তারা মানত পুরা করে এবং সে দিনকে ভয় করে যে দিনের বিপদ হবে অত্যন্ত ব্যাপক। তারা খাবারের প্রতি নিজেদের প্রচন্ড আসক্তি থাকা সত্ত্বেও (তা নিজেরা না খেয়ে) অভাবী, এতিম ও বন্দীকে খাওয়ায়। তারা বলেঃ আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াচ্ছি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য। আমরা তোমাদের নিকট থেকে এর কোনো প্রতিদান চাই না; না চাই কোনো ধরনের কৃতজ্ঞতা। আমরা তো আমাদের প্রভুর কাছ থেকে এক চরম ভয়ঙ্কর দিনের ভয় পাচ্ছি। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে দিনের কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন অধিক আনন্দ ও উৎফুল্লতা। উপরন্তু তাদের ধৈর্যশীলতার দরুন তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী কাপড়”। [সূরা আল-ইনসান (দাহর), আয়াত: ৭-১২]সাধারণত কাফির ও জাহান্নামীরাই কাউকে খানা খাওয়ায় না এবং খাওয়াতে উৎসাহও দেয় না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ ٣٨ إِلَّآ أَصۡحَٰبَ ٱلۡيَمِينِ ٣٩ فِي جَنَّٰتٖ يَتَسَآءَلُونَ ٤٠ عَنِ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٤١ مَا سَلَكَكُمۡ فِي سَقَرَ ٤٢ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ ٤٣ وَلَمۡ نَكُ نُطۡعِمُ ٱلۡمِسۡكِينَ ٤٤ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ ٱلۡخَآئِضِينَ ٤٥ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤٦ ﴾ [المدثر: ٣٨، ٤٦]
“প্রতিটি ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ। তবে ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নয়। তারা তো থাকবে জান্নাতে। বরং তারা অপরাধীদেরকে জিজ্ঞাসা করবেঃ তোমরা কেন সাক্বার জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হলে? তখন তারা বলবে, আমরা তো সালাতীই ছিলাম না। অভাবীদেরকে খানাও খাওয়াতাম না। বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সাথেই (ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী) সমালোচনায় অংশ গ্রহণ করতাম। উপরন্তু আমরা ছিলাম কর্মফল দিবসে অবিশ্বাসী”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩৮-৪৬]আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ أَرَءَيۡتَ ٱلَّذِي يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ ١ فَذَٰلِكَ ٱلَّذِي يَدُعُّ ٱلۡيَتِيمَ ٢ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ ٣ ﴾ [الماعون: ١، ٣]
“তুমি কি দেখেছো তাকে যে কর্মফলকে মিথ্যা বলে। সেই তো ওই ব্যক্তি যে এতিমকে (ঘৃণাভরে) তাড়িয়ে দেয়। এমনকি সে কোনো অভাবীকে খানা খাওয়াতেও কাউকে উৎসাহ দেয় না”। [সূরা আল-মাঊন, আয়াত: ১-৩]আব্দুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّهَا النَّاسُ! أَفْشُوْا السَّلاَمَ، وَأَطْعِمُوْا الطَّعَامَ، وَصَلُّوْا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ؛ تَدْخُلُوْا الْـجَنَّةَ بِسَلاَمٍ»
“হে মানবসকল! তোমরা একে অপরকে সালাম দাও। মানুষকে খানা খাওয়াও। রাত্রিবেলায় তাহাজ্জুদের সালাত পড়ো যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তা হলে তোমরা চরম নিরাপত্তার মাধ্যমেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।[89]আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اُعْبُدُوْا الرَّحْمَنَ، وَأَطْعِمُوْا الطَّعَامَ، وَأَفْشُوْا السَّلاَمَ ؛ تَدْخُلُوْا الْـجَنَّةَ بِسَلاَمٍ»
“তোমরা দয়াময় প্রভুর ইবাদাত করো। মানুষকে খানা খাওয়াও। একে অপরকে সালাম দাও তা হলে তোমরা চরম নিরাপত্তার মাধ্যমেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।[90]৫. মানুষের মাঝে যে কোনো ধরনের বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস, ওয়ায-নসীহতের বিশুদ্ধ অডিও-ভিডিও কিংবা সিডি ক্যাসেট ও লিফলেট ইত্যাদি বিতরণ করা:
মানুষ মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সর্বদা সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে মানুষের মাঝে যে কোনো ধরনের বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস, ওয়ায-নসীহতের বিশুদ্ধ অডিও-ভিডিও কিংবা সিডি ক্যাসেট ও লিফলেট ইত্যাদি বিতরণ করা অন্যতম।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ»
“কোনো মানুষ মারা গেলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল তার মৃত্যুর পরও চালু থাকেঃ দীর্ঘস্থায়ী সদকা, এমন জ্ঞান যা দিয়ে মানুষ তার মৃত্যুর পরও লাভবান হয়, এমন নেককার সন্তান যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দো‘আ করে”।[91]আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الـْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَـرَهُ، وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ، وَمُصْحَفًا وَرَّثَهُ، أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ، أَوْ بَيْتًا لابْنِ السَّبِيْلِ بَنَاهُ، أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ، أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِيْ صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ تَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ»
“একজন মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সাওয়াব পেতে থাকবে তা হচ্ছে, এমন লাভজনক জ্ঞান যা সে কাউকে সরাসরি শিখিয়েছে এবং প্রচার করেছে (তা যেভাবেই হোক না কেন)। এমন নেককার সন্তান যা সে মৃত্যুর সময় রেখে গেছে। এমন কুরআন যা সে মিরাস রেখে গেছে। এমন মসজিদ যা সে বানিয়েছে। এমন ঘর যা সে মুসাফিরের জন্য বানিয়েছে। এমন খাল যা সে খনন করেছে। এমন সদকা যা সে সুস্থ ও জীবিত থাকাবস্থায় নিজ সম্পদ থেকে দিয়েছে এবং যার সাওয়াব তার মৃত্যুর পরও তার নিকট পৌঁছবে”।[92]৬. কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস কিংবা যে কোনো বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, লিফলেট, দেওয়ালিকা ইত্যাদি মানুষের মাঝে ফ্রি বিতরণের জন্য দেশে দেশে অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস অথবা আধুনিক রুচি ও উচ্চ মানসম্পন্ন ইসলামী পুস্তক প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করা:
মানুষ মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সর্বদা সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে মানুষের মাঝে কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস কিংবা যে কোনো বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, লিফলেট, দেওয়ালিকা ইত্যাদি ফ্রি বিতরণের জন্য দেশে দেশে অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস অথবা আধুনিক রুচি ও উচ্চ মান সম্পন্ন ইসলামী পুস্তক প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম। যা উপরোল্লিখিত হাদীসগুলো থেকে সহজেই বুঝা যায়।
প্রাচীন যুগে ইসলাম প্রচারের কাজগুলো একমাত্র আলিমগণই করতেন। কিন্তু বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষতার সুবাদে এ কাজ আর তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলো না। এখন যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি উক্ত কাফেলায় খুব সহজেই শামিল হতে পারছেন। কেউ নিজে লিখতে বা বলতে না পারলেও কারোর লেখা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পান্ডুলিপি ছাপানোর কাজে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করে কিংবা কারোর লেখা বই বা ওয়াযের ক্যাসেট মানুষের মাঝে বিতরণ করে এ মহান প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করা যায়। আশা করি কোনো বুদ্ধিমান মানুষ এ সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে অবহেলা করবেন না।
৭. জায়গায় জায়গায় মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় সেন্টার প্রতিষ্ঠা করাঃ
আনাস্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبْعٌ يَجْرِيْ لِلْعَبْدِ أَجْرُهُنَّ وَهُوَ فِيْ قَبْرِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ: مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا، أَوْ كَـرَى نَهْرًا، أَوْ حَفَرَ بِئْرًا، أَوْ غَرَسَ نَخْلاً، أَوْ بَنَى مَسْجِدًا، أَوْ وَرَّثَ مُصْحَفًا، أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ»
“সাতটা কাজ এমন রয়েছে যার সাওয়াব বান্দাহ্’র জন্য দীর্ঘকাল চালু থাকবে; অথচ সে মৃত্যুর পর তার কবরেই শায়িতঃ যে ব্যক্তি কাউকে লাভজনক কোনো জ্ঞান শিক্ষা দিলো। (জনগণের পানির সঙ্কট দূর করণার্থে) কোথাও খাল বা কূপ খনন করলো। কোথাও বা খেজুর গাছ লাগালো। আবার কোথাও বা মসজিদ ঘর তৈরি করে দিলো। কোনো কুরআন মাজীদ মিরাস রেখে গেলো। কোনো (নেককার) সন্তান মৃত্যুর সময় রেখে গেলো যে তার জন্য তার মৃত্যুর পর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে”।[93]‘উসমান ইবন ‘আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ بَنَى مَسْجِدًا - يَبْتَغِيْ بِهِ وَجْهَ اللهِ – بَنَى اللهُ لَهُ مِثْلَهُ فِيْ الْـجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কোনো একটি মসজিদ বানালো আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে সেরূপ একটি ঘর বানাবেন”।[94]উক্ত সাওয়াব পাওয়ার জন্য জুমার মসজিদ কিংবা বড় শাহী মসজিদই বানাতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। বরং মসজিদ যত ছোটই হোক না কেন মসজিদ নির্মাণকারী উক্ত সাওয়াব থেকে কখনো বঞ্চিত হবেন না।
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ بَنَى مَسْجِدًا يُذْكَرُ فِيْهِ اسْمُ اللهِ بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِيْ الْـجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি এমন একটি মসজিদ বানালো যাতে আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারিত হয় আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”।[95]জাবির ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ أَوْ أَصْغَرَ بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِيْ الْـجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি কবুতরের বাসা সমপরিমাণ অথবা এর চাইতেও আরো ছোট একটি মসজিদ তৈরি করলো আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন”।[96]৮. সর্ব সাধারণের জ্ঞান আহরণের সুবিধার জন্য জায়গায় জায়গায় পাঠাগার বা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা:
মানুষ মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে সর্ব সাধারণের জ্ঞান আহরণের সুবিধার জন্য জায়গায় জায়গায় গ্রন্থাগার কিংবা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা পূর্বের আনাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর হাদীসদ্বয় থেকেই বুঝা যায়।
৯. মানুষের সুবিধার জন্য জায়গায় জায়গায় ফলদার বৃক্ষ রোপণ করা:
মানুষ মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে জায়গায় জায়গায় ফলদার বৃক্ষ রোপণ করাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা পূর্বের হাদীস থেকেই বুঝা যায়।
আনাস্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيْمَةٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ»
“যে কোনো মুসলিম কোনো ফলদার বৃক্ষ রোপণ করলে অথবা কোনো ফসল বপন করলে তা থেকে যদি কোনো পাখী, মানুষ কিংবা পশু খায় তা হলে তা তার জন্য সদকা হয়ে যাবে”।[97]জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلاَّ كَانَ مَا أُكِـلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةً، وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَلاَ يَزْرَؤُهُ أَحَدٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ»
“যে কোনো মুসলিম কোনো ফলদার বৃক্ষ রোপণ করলে তা থেকে যা খাওয়া হয় তা তার জন্য সদকা হয়ে যাবে। যা চুরি করা হয় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে। যা কোনো হিংস্র পশু খায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে। যা কোনো পাখী খায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে এবং যা কোনো মানুষ নিয়ে যায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে”।[98]১০. মুসাফিরদের রাত্রি যাপনের সুবিধার জন্য ট্রেন বা বাস স্টেশনগুলোর আশে-পাশে খাবারের ব্যবস্থাসহ সম্পূর্ণ আবাসিক হোটেল তৈরি করাঃ
মানুষ মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে মুসাফিরদের রাত্রি যাপনের সুবিধার জন্য ট্রেন বা বাস স্টেশনগুলোর আশে-পাশে খাবারের ব্যবস্থা সহ সম্পূর্ণ আবাসিক হোটেল তৈরি করাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা পূর্বের আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর হাদীস থেকেই বুঝা যায়।
১১. কোনো এতিমের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করাঃ
কোনো এতিমের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করা জান্নাতে যাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম।
সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيْمِ فِيْ الْـجَنَّةِ هَكَذَا، وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئً»
“আমি ও এতিমের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণকারী এতো পাশাপাশি থাকবো যতটুকু পাশাপাশি থাকে তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলীদ্বয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত ব্যাপারটি অঙ্গুলীদ্বয়ের ইশারার মাধ্যমে বুঝিয়েছেন এবং উভয় অঙ্গুলীর মাঝে তিনি সামান্যটুকু ফাঁকও রাখেন”।[99]১২. বিধবা ও মিসকীনের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করা:
বিধবা ও মিসকীনের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করা আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করা এবং নিরলস নফল সালাত ও নফল সাওম আদায় করার সমতুল্য।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«السَّاعِيْ عَلَى الْأَرْمَلَةِ وَالـْمِسْكِيْنِ كَالْـمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَأَحْسِبُهُ قَالَ: وَكَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُ، وَكَالصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ»
“বিধবা ও মিসকীনের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণকারী আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নফল সালাত ও নফল সাওম আদায়কারীর সমতুল্য”।[100]১৩. যে কোনো সাওমদারকে ইফতার করানো:
যে কোনো সাওমদারকে ইফতার করালে তার সাওমর সমপরিমাণ সাওয়াব ইফতার আয়োজনকারী পাবে।
যায়েদ ইবন খালিদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا؛ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ؛ غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا»
“যে ব্যক্তি কোনো সাওমদারকে ইফতার করালো তার সাওমর সমপরিমাণ সাওয়াব ইফতার আয়োজনকারী পাবে। তবে এতে সাওমদারের সাওয়াব এতটুকুও কমানো হবে না”।[101]