কুরআনের নির্বাচিত দো‘আ


কুরআনের নির্বাচিত দো‘আ:

১- رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
১। হে আমাদের প্রভু! দুনিয়াতে আমাদের কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও। আর আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও।১

২- رَبَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِيْنَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْراً كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلا تُحَمِّلْنَا مَا لا طَاقَةَ لَنَا بِهৃ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَآ أَنْتَ مَوْلانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
২। হে আমাদের রব! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করো না।
হে আমাদের রব! পূর্ববর্তীদের উপর যে গুরুদায়িত্ব তুমি অর্পণ করেছিলে সে রকম কোন কঠিন কাজ আমাদেরকে দিও না।
হে আমাদের রব! যে কাজ বহনের ক্ষমতা আমাদের নেই এমন কাজের ভারও তুমি আমাদের দিও না। তুমি আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের ক্ষমা কর। আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি আমাদের মাওলা। অতএব কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তুমি আমাদেরকে সাহায্য কর।[১]
৩- رَبَّنَا لا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
৩। হে আমাদের রব! যেহেতু তুমি আমাদেরকে হেদায়াত করেছ, কাজেই এরপর থেকে তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করিও না। তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দাও। তুমিতো মহাদাতা।[২]
৪- رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
৪। হে আমার পরওয়ারদেগার! তোমার কাছ থেকে আমাকে তুমি উত্তম সন্তান-সন্ততি দান কর। নিশ্চয়ই তুমিতো মানুষের ডাক শোনো।[৩]
৫- رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
৫। হে আমাদের রব! আমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দাও। যেসব কাজে আমাদের সীমালঙ্ঘন হয়ে গেছে সেগুলোও তুমি ক্ষমা কর। আর (সৎপথে) তুমি আমাদের কদমকে অটল রেখো এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তুমি আমাদেরকে সাহায্য কর।[৪]
৬- رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدْتَنَا عَلٰى رُسُلِكَ وَلاَ تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لاَ تُخْلِفُ الْمِيعَادَ
৬। হে রব! নবী-রাসূলদের মাধ্যমে তুমি যে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছো তা তুমি আমাদেরকে দিয়ে দিও। আর কিয়ামতের দিন আমাদেরকে তুমি অপমানিত করিও না। তুমিতো ওয়াদার বরখেলাফ কর না।[৫]
৭- رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
৭। হে আমাদের রব! তুমি যা কিছু নাযিল করেছো, তার উপর আমরা ঈমান এনেছি। আমরা রাসূলের কথাও মেনে নিয়েছি। কাজেই সত্য স্বীকারকারীদের দলে আমাদের নাম লিখিয়ে দাও।[৬]
৮- رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
৮। হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের উপর যুলম করেছি। এখন তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আর আমাদের প্রতি রহম না কর তাহলে নিশ্চিতই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।[৭]
৯- رَبَّنَا لا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
৯। হে রব! আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের সাথী করিও না।[৮]
১০- رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاূءِ
১০। হে আমার মালিক! আমাকে সালাত কায়েমকারী বানাও এবং আমার ছেলে-মেয়েদেরকেও নামাযী বানিয়ে দাও। হে আমার মালিক! আমার দোয়া তুমি কবুল কর।[৯]
১১- رَبَّنَا اغْفِرْلِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
১১। হে আমাদের পরওয়ারদেগার! যেদিন চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ হবে সেদিন তুমি আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সকল ঈমানদারদেরকে তুমি ক্ষমা করে দিও।[১০]
১২- رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَداً
১২। হে আমাদের রব! তোমার অপার অসীম করুণা থেকে আমাদেরকে রহমত দাও। আমাদের কাজগুলোকে সঠিক ও সহজ করে দাও।[১১]
১৩- قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي - وَيَسِّرْ لِيْ أَمْرِي -وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِيْ - يَفْقَهُوا قَوْلِيْ
১৩। হে আমার রব! আমার বক্ষকে তুমি প্রশস্ত করে দাও। আমার কাজগুলো সহজ করে দাও। জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা সহজেই বুঝতে পারে। [১২]
১৪- رَبِّ زِدْنِي عِلْماً
১৪। হে রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও।[১৩]
১৫- رَبِّ لاَ تَذَرْنِيْ فَرْداً وَأَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
১৫। হে রব! আমাকে তুমি নিঃসন্তান অবস্থায় রেখো না। তুমিতো সর্বোত্তম মালিকানার অধিকারী।[১৪]
১৬- رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ - وَأَعُوْذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ
১৬। হে রব! শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমি এ থেকেও তোমার নিকট পানাহ চাই যে, শয়তান যেন আমার ধারে কাছেও ঘেষতে না পারে।[১৫]
১৭- رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَاماً ু إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرّاً وَّمُقَاماً
১৭। হে আমাদের রব! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচিয়ে দিও। এর আযাব তো বড়ই সর্বনাশা। আশ্রয় ও বাস্থান হিসেবে এটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।[১৬]
১৮- رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَاماً
১৮। হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে এমন স্ত্রী-সন্তান দান কর যাদের দর্শনে আমাদের চক্ষুশীতল হয়ে যাবে। তুমি আমাদেরকে পরহেযগার লোকদের ইমাম (অভিভাবক) বানিয়ে দাও।[১৭]
১৯-২২- رَبِّ هَبْ لِيْ حُكْماً وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِيْنَ - وَاجْعَلْ لِيْ لِسَانَ صِدْقٍ فِي الآخِرِينَ - وَاجْعَلْنِيْ مِنْ وَرَثَةِ جَنَّةِ النَّعِيمِ - وَلا تُخْزِنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ
১৯। হে রব! আমাকে জ্ঞান-বুদ্ধি দান কর এবং আমাকে নেককার লোকদের সান্নিধ্যে রেখো।
২০। এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমার সুখ্যাতি চলমান রেখো।
২১। আমাকে তুমি নিয়ামতে ভরা জান্নাতের বাসিন্দা বানিয়ে দিও।
২২। যেদিন সব মানুষ আবার জীবিত হয়ে উঠবে সেদিন আমাকে তুমি অপমানিত করো না।১৯-২২
২৩- رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحاً تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ
২৩। হে প্রতিপালক! তুমি আমার ও আমার মাতা-পিতার প্রতি যে নিয়ামত দিয়েছো এর শোকরগোজারী করার তাওফীক দাও এবং আমাকে এমন সব নেক আমল করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার দয়ায় আমাকে তোমার নেক বান্দাদের মধ্যে শামিল করে দাও।২৩
২৪- رَبِّ انْصُرْنِي عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِينَ
২৪। হে রব! ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তুমি আমাকে সাহায্য কর।২৪
২৫- رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
২৫। হে রব! আমাকে তুমি নেককার সন্তান দান কর।২৫
২৬- رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحاً تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي
২৬। হে রব! তুমি আমার ও আমার মাতা-পিতার প্রতি যে নিয়ামত দিয়েছ এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার তাওফীক দাও এবং আমাকে এমন সব নেক আমল করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার ছেলে-মেয়ে ও পরবর্তী বংশধরকেও নেককার বানিয়ে দাও।২৬
২৭- رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالإِيْمَانِ وَلا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلاًّ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَحِيْمٌ
২৭। হে আমাদের মালিক! তুমি আমাদের মাফ করে দাও। আমাদের আগে যেসব ভাইয়েরা ঈমান এনেছে, তুমি তাদেরও মাফ করে দাও। আর ঈমানদার লোকদের প্রতি আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দিও না। হে রব! তুমিতো বড়ই দয়ালু ও মমতাময়ী।[১৮]
২৮- رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
২৮। হে আমাদের রব! আমাদের জন্য তুমি আমাদের নূরকে পরিপূর্ণ করে দাও। তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর। তুমি তো সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।[১৯]
২৯- رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِناً وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ
২৯। হে আমার রব! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে, যারা মুমিন অবস্থায় আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদেরকে এবং সকল মুমিন পুরুষ-নারীকে তুমি ক্ষমা করে দাও।[২০]
৩০-رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِياً يُنَادِي لِلإِيْمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأَبْرَارِ
৩০। হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমরা এক আহ্বানকারীকে আহ্বান করতে শুনেছিলাম যে, তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তাতেই আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর ও আমাদের পাপরাশি মোচন কর এবং পুণ্যবানদের সাথে আমাদেরকে মৃত্যু দান কর।[২১]

• হাদীসের নির্বাচিত দো‘আ:

মন খুলে, হৃদয় উজাড় করে আল্লাহ তা'আলার নিকট দোয়া করুন।
৩১- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ وَعَذَابِ النَّارِ وَفِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَشَرِّ فِتْنَةِ الْغِنَى وَشَرِّ فِتْنَةِ الْفَقْرِ - اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ - اللَّهُمَّ اغْسِلْ قَلْبِي بِمَاءِ الثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّ قَلْبِي مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنْ الدَّنَسِ وَبَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ - اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَالْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
৩১। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, জাহান্নামের ফিতনা ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে। কবরের ফিতনা ও কবরের 'আযাব থেকে। আশ্রয় চাচ্ছি, সম্পদের ফিতনা ও দারিদ্রের ফিতনার ক্ষতি থেকে।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি মাসীহিদ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে।
হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে বরফ ও ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধৌত করে দাও। আমার অন্তরকে গুনাহ থেকে পরিষ্কার করে দাও। যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে তুমি পরিষ্কার করে থাকো। হে আল্লাহ! থেকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত তুমি যে বিশাল দূরত্ব সৃষ্টি করেছ আমার আমলনামা থেকে আমার গুনাহগুলো ততটুকু দূরে সরিয়ে দাও। হে আল্লাহ! আমার অলসতা, গুনাহ ও ঋণ থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই।[২২]
৩২- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْهَرَمِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَامِ
৩২। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, বার্ধক্য, কৃপণতা থেকে। আশ্রয় চাই তোমার নিকট কবরের আযাব ও জীবন মরনের ফিতনা থেকে।[২৩]
৩৩- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ
৩৩। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই, কঠিন বালা-মুসিবত, দুর্ভাগ্য ও শত্রুদের বিদ্বেষ থেকে।[২৪]
৩৪- اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِي الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي - وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي - وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي - وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ - وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ
৩৪। হে আল্লাহ! আমার দ্বীনকে আমার জন্য সঠিক করে দিও যা কর্মের বন্ধন। দুনিয়াকেও আমার জন্য সঠিক করে দাও যেখানে রয়েছে আমার জীবন যাপন। আমার জন্য আমার পরকালকে পরিশুদ্ধ করে দাও, যা হচ্ছে আমার অনন্তকালের গন্তব্যস্থল। প্রতিটি ভাল কাজে আমার জীবনকে বেশী বেশী কাজে লাগাও এবং সকল অমঙ্গল ও কষ্ট থেকে আমার মৃত্যুকে আরামদায়ক করে দিও।[২৫]
৩৫- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُد্ى وَالتُّقٰى وَالْعَفَافَ وَالْغِنٰى
৩৫। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হেদায়াত তাকওয়া ও পবিত্র জীবন চাই। আরো চাই যেন কারো কাছে দ্বারস্থ না হই।[২৬]
৩৬- اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ- اَللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا - اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
৩৬। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের 'আযাব থেকে।
হে আল্লাহ! তুমি আমার মনে তাকওয়ার অনুভূতি দাও, আমার মনকে পবিত্র কর, তুমি-ই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী। তুমিই তো হৃদয়ের মালিক, অভিভাবক ও বন্ধু।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই এমন 'ইল্‌ম থেকে যে 'ইল্‌ম কোন উপকার দেয় না, এমন হৃদয় থেকে যে হৃদয় বিনম্র হয় না, এমন আত্মা থেকে যে আত্মা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই যে দোয়া কবূল হয় না।[২৭]
৩৭- اللَّهُمَّ اهْدِنِيْ وَسَدِّدْنِي - اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُد্ى وَالسَّدَادَ
৩৭। হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান কর, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত কর। হে আল্লাহ! তোমার নিকট হেদায়াত ও সঠিক পথ কামনা করছি।[২৮]
৩৮- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ
৩৮। হে আল্লাহ! তোমার দেয়া নেয়ামাত চলে যাওয়া ও অসুস্থতার পরিবর্তন হওয়া থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই তোমার পক্ষ থেকে আকষ্মিক গজব আসা ও তোমার সকল অসন্তোষ থেকে।[২৯]
৩৯- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
৩৯। হে আল্লাহ! আমি আমার অতীতের কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যে কাজ আমি করিনি তার অনিষ্টতা থেকেও আশ্রয় চাই।।[৩০]
৪০- اَللَّهُمَّ إِِنِّيْ أِعُوْذُبِكَ أِنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أِعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
৪০। হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর যদি অজান্তে শিক হয়ে থাকে তবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।[৩১]
৪১- اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو - فَلاَ تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ - وَأَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّه - لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ
৪১। হে আল্লাহ! তোমার রহমত প্রত্যাশা করছি। সুতরাং তুমি আমার নিজের উপর তাৎক্ষণিকভাবে কোন দায়িত্ব অর্পণ করে দিও না। আর আমার সব কিছু তুমি সহীহ শুদ্ধ করে দাও। তুমি ছাড়া আর কোন মা'বুদ নেই।[৩২]
৪২- اللَّهُمَّ اجْعَلِ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي وَنُورَ صَدْرِيْ وَجِلاَءَ حُزْنِيْ وَذَهَابَ هَمِّيْ
৪২। হে আল্লাহ! কুরআনকে তুমি আমার হৃদয়ের বসন্তকাল বানিয়ে দাও, বানিয়ে দাও আমার বুকের নূর এবং কুরআনকে আমার দুঃখ ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার মাধ্যম বানিয়ে দাও।[৩৩]
৪৩- اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلٰى طَاعَتِكَ
৪৩। হে অন্তরের পরিবর্তন সাধনকারী রব! আমাদের অন্তরকে তোমার অনুগত্যের দিকে পরিবর্তন করে দাও।[৩৪]
৪৪- يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
৪৪। হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তুমি তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ।[৩৫]
৪৫- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ
৪৫। হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা ও সুস্থতা কামনা করছি।[৩৬]
৪৬- اللَّهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِي الأُمُورِ كُلِّهَا وَأَجِرْنَا مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الآخِرَةِ
৪৬। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সকল কাজের পরিণতি সুন্দর ও উত্তম করে দাও এবং আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা, অপমান এবং আখেরাতের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দিও।[৩৭]
৪৭- رَبِّ أَعِنِّي وَلاَ تُعِنْ عَلَيَّ - وَانْصُرْنِي وَلاَ تَنْصُرْ عَلَيَّ - وَامْكُرْ لِي وَلاَ تَمْكُرْ عَلَيَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرْ هُدَايَ إِلَيَّ - وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ - اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي لَكَ شَاكِرًا لَكَ ذَاكِرًا لَكَ رَاهِبًا لَكَ مِطْوَاعًا إِلَيْكَ مُخْبِتًا أَوْ مُنِيبًا - رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِي - وَاغْسِلْ حَوْبَتِي - وَأَجِبْ دَعْوَتِي - وَثَبِّتْ حُجَّتِي - وَاهْدِ قَلْبِي - وَسَدِّدْ لِسَانِي - وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ قَلْبِي
৪৭। হে আমার রব! তুমি আমাকে সাহায্য কর, আমার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করো না। আমাকে সহায়তা কর, আমার বিপক্ষে কাউকে সহায়তা করো না। আমাকে কৌশল শিখিয়ে দাও, আমার বিপক্ষে কাউকে চক্রান্ত করতে দিও না। আমাকে হেদায়ত দাও, হেদায়তের পথ আমার জন্য সহজ করে দাও। আমার বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করে, তার বিপক্ষে আমাকে সাহায্য কর। আমাকে তোমার অধিক শুকরগুজার, যিক্‌রকারী বান্দা বানিয়ে দাও। তাওফিক দাও যাতে তোমাকে অধিক ভয় করি। তোমার আনুগত্য করি। তাওফিক দাও যাতে আমি তোমার প্রতি বিনয়ী হই, তাওবাকারী প্রত্যাবর্তনশীল বান্দা হই।
হে আমার রব! তুমি আমার তাওবা কবূল কর। আমার অপরাধটুকু ধুয়ে ফেল। আমার দু'আ কবূল কর। আমার যুক্তিগুলো অকাট্য করে দাও। আর অন্তরকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত কর, আমার ভাষাকে সঠিক করে দাও এবং আমার কলব থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দাও।[৩৮]
৪৮- اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ -صلى الله عليه وسلم- وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ -صلى الله عليه وسلم- وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ وَعَلَيْكَ الْبَلاَغُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ
৪৮। হে আল্লাহ! তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে যেসব কল্যাণকর জিনিস চেয়েছিলেন সেগুলো আমাকেও তুমি দাও। আর তোমার নিকট ঐ অমঙ্গল-অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, যে অমঙ্গল থেকে তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় চেয়েছিলেন। সাহায্য তো শুধু তোমার কাছে চাইতে হয় এবং সবকিছু পৌঁছিয়ে দেয়ার দায়িত্বও তোমার। তুমি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন নেক কাজ করা কিংবা গুনাহ করার কোন শক্তি নেই।[৩৯]
৪৯- اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِيْ وَمِنْ شَرِّ بَصَرِيْ وَمِنْ شَرِّ لِسَانِيْ وَمِنْ شَرِّ قَلْبِيْ وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّيْ
৪৯। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি আমার জিহ্বা ও অন্তর এবং আমার ভাগ্য এসব অঙ্গের অনিষ্টতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই।[৪০]
৫০- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئْ الأَسْقَامِ
৫০। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট শ্বেতরোগ পাগলামি ও কুষ্ঠ রোগসহ সকল জটিল রোগ থেকে আশ্রয় চাই।[৪১]
৫১-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
৫১। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি অসৎ চরিত্র, অপকর্ম এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে আশ্রয় চাই।[৪২]
৫২-اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
৫২। হে আল্লাহ! তুমিতো ক্ষমার ভাণ্ডার, ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ কর। কাজেই আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।[৪৩]
৫৩-اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ - وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي - وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةً فِي قَوْمٍ فَتَوَفَّنِي غَيْرَ مَفْتُونٍ - وَأَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ - وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُنِي إِلَى حُبِّكَ
৫৩। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নেক কাজ করা, অসৎ কাজ পরিত্যাগ এবং মিসকীনদের ভালবাসার গুণাবলী দাও। আরো প্রর্থানা করিছ যে, তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর। আর যখন তুমি কোন জাতিকে কোন প্রকার ফিতনায় ফেলার ইচ্ছা কর তখন আমাকে ফিতনামুক্ত মৃত্যু দান কর। তোমার ভালবাসা আমি চাই, যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের ভালবাসাও চাই এবং এমন আমলের ভালবাসা আমি চাই, যে আমল আমাকে তোমার ভালবাসার নিকট পৌঁছে দেবে।[৪৪]
৫৪- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ الْخَيْرِ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ- وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الشَّرِّ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ - اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ بِهِ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ - اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ - وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ - وَأَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ كُلَّ قَضَاءٍ قَضَيْتَهُ لِي خَيْرًا
৫৪। হে আল্লাহ! দুনিয়া ও আখিরাতের আমার জানা অজানা যত কল্যাণ ও নেয়ামাত আছে তা সবই আমি চাই। দুনিয়া ও আখিরাতের আমার জানা-অজানা সকল অকল্যাণ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঐ সব কল্যাণ চাচ্ছি যা তোমার বান্দা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেয়েছিলেন এবং তোমার নিকট ঐ সব অমঙ্গল থেকে আশ্রয় চাচ্ছি যা থেকে তোমার বান্দা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় চেয়েছিলেন।
হে আল্লাহ! আমি তো বেহেশতে যেতে চাই। আর সে কথা ও কাজের তাওফীক চাই যা সহজেই আমাকে বেহেশতে পৌঁছাবে। হে আল্লাহ! জাহান্নামের আগুন থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই এবং যে কথা ও কাজ মানুষকে জাহান্নামবাসী করে সেগুলো থেকেও তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আর প্রতিটি কাজের বিচারে আমার জন্য কল্যাণকর ফায়সালা করে দিও।[৪৫]
৫৫- اَللَّهُمَّ احْفَظْنِيْ بِالإسْلامِ قَائِمًا وَاحْفَظْنِيْ بِالإسلامِ قَاعِدًا وَاحْفَظْنِيْ بِالإسْلامِ رِاقِدًا وَلاَ تشمتْ بِيْ عَدُوَّا وَلاَ حَاسِدًا - اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ كُلِّ خَيْرٍ خَزَائِنُهُ بِيَدِكَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ كُلِّ شَرٍّ خَزَائِنُهُ بِيَدِكَ
৫৫। হে আল্লাহ! দাঁড়ানো অবস্থায় ইসলামের মাধ্যমে আমাকে হেফাযত করিও, বসা অবস্থা ইসলামের মাধ্যমে হেফাযত করিও এবং শোয়া অবস্থা ইসলামের মাধ্যমে আমাকে হেফাযত করিও। আমার বিপদে শত্রুকে আনন্দ করার সুযোগ দিও না। শত্রুকে আমার জন্য হিংসুটে হতে দিও না।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঐ সব কল্যাণের প্রার্থনা করছি, যেসব কল্যাণ তোমার হাতে রয়েছে। সে সব অকল্যাণ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই যা তোমার হাতে রয়েছে।[৪৬]
৫৬-اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي
৫৬। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার প্রতি দয়া কর, আমাকে হেদায়াত কর, নিরাপদে রাখ এবং আমাকে রিযিক দান কর।[৪৭]
৫৭-اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
৫৭। হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের প্রতি অনেক যুলম করে ফেলেছি। আর তুমি ছাড়া গুনাহ ক্ষমা করার কেউ নেই। অতএব তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে বিশেষভাবে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর। নিশ্চয়ই তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু রব।[৪৮]
৫৮-اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ خَاصَمْتُ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِعِزَّتِكَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الَّذِي لاَ يَمُوتُ وَالْجِنُّ وَالْإِنْسُ يَمُوتُونَ
৫৮। হে আল্লাহ! তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার প্রতি-ই ঈমান এনেছি এবং তোমার উপর-ই তাওয়াক্কুল করেছি। আর তোমার নিকট-ই ফায়সালা চেয়েছি।
হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের আশ্রয় চাচ্ছি তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি চিরস্থায়ী, যাঁর মৃত্যু নেই। আর জ্বিন ও মানব তো সবাই মরে যাবে।[৪৯]
৫৯-اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي وَبَارِكْ لِي فِيمَا رَزَقْتَنِي
৫৯। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহকে ক্ষমা করে দাও, আমার ঘরে প্রশস্ততা দান কর এবং আমার রিযিকে বরকত দাও।[৫০]
৬০-اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ وَرَحْمَتِكَ فَإِنَّهُ لاَ يَمْلِكُهَا إِلاَّ أَنْتَ
৬০। হে আল্লাহ! তোমার নিকট অনুগ্রহ ও দয়া চাই। কারণ অনুগ্রহ ও দয়ার মালিক তুমি ছাড়া কেউ না।[৫১]
৬১-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي وَالْهَدْمِ وَالْغَرَقِ وَالْحَرِيقِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا
৬১। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট যমীন ধসে পড়া, ধ্বংস হওয়া, পানিতে ডুবা ও আগুনে পোড়া থেকে আশ্রয় চাই। মৃত্যুর সময় শয়তানের ছোবল থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই তোমার নিকট তোমার পথে পৃষ্ঠপ্রদর্শন হয়ে মৃত্যু থেকে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই দংশনজনিত মৃত্যু থেকে।[৫২]
৬২-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُوعِ فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيعُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخِيَانَةِ فَإِنَّهَا بِئْسَتِ الْبِطَانَةُ
৬২। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষুধা থেকে আশ্রয় চাই। করণ এটা নিকৃষ্ট শয্যাসঙ্গী। খেয়ানত থেকেও তোমার কাছে আশ্রয় চাই। কারণ এটা নিকৃষ্ট বন্ধু।[৫৩]
৬৩-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَالْقَسْوَةِ وَالْغَفْلَةِ وَالْعَيْلَةِ وَالذِّلَّةِ وَالْمَسْكَنَةِ - وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْفَقْرِ وَالْكُفْرِ وَالْفُسُوْقِ وَالشِّقَاقِ وَالنِّفَاقِ وَالسَّمْعَةِ وَالرِّيَاءِ - وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الصَّمَمِ وَالْبَكَمِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَالْبَرَصِ وَسيء الأسْقَامِ
৬৩। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য, নিষ্ঠুরতা, গাফিলতি, অভাব-অনটন, হীনতা, নিঃস্বতা থেকে আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই দারিদ্র্য, কুফরী, পাপাচার, ঝগড়াঝাটি, কপটতা, সুনাম-কামনা করা ও লোক দেখানো ইবাদত থেকে।
আশ্রয় চাই তোমার নিকট বধিরতা, বোবা, পাগলামী, কুষ্ঠরোগ ও শ্বেত রোগসহ সকল খারাপ রোগ থেকে।[৫৪]
৬৪-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْفَقْرِ وَالْقِلَّةِ وَالذِّلَّةِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ
৬৪। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দারিদ্র্য, স্বল্পতা, হীনতা থেকে আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই যালিম ও মাযলুম হওয়া থেকে।[৫৫]
৬৫- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ يَوْمِ السُّوْءِ وَمِنْ لَيْلَةِ السُّوْءِ وَمِنْ سَاعَةِ السُّوْءِ وَمِنْ صَاحِبِ السُّوْءِ وَمِنْ جَارِ السُّوْءِ فِي دَارِ الْمَقَامَةِ
৬৫। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই খারাপ দিন, খারাপ রাত, বিপদ মুহূর্ত, অসৎসঙ্গী এবং স্থায়ীভাবে বসবাসকারী খারাপ প্রতিবেশী থেকে।[৫৬]
৬৬-اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْئَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَسْتَجِيْرُبِكَ مِنَ النَّارِ
৬৬। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাতের প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাচ্ছি।[৫৭]
৬৭-اَللَّهُمَّ فَقِّهْنِيْ فِي الدِّيْنِ
৬৬। হে আল্লাহ! আমাকে দ্বীনের পাণ্ডিত্য দান কর।[৫৮]
৬৮-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
৬৭। হে আল্লাহ! জেনে বুঝে তোমার সাথে শির্ক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই এবং না জেনে শির্ক করা থেকে তোমার নিকট ক্ষমা চাই।[৫৯]
৬৯-اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
৬৮। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী 'ইল্‌ম, পবিত্র রিযিক এবং কবূল আমলের প্রার্থনা করছি।[৬০]
৭০-رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
৭০। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার তাওবা কবূল কর। নিশ্চয়ই তুমি তাওবা গ্রহণকারী ও অতিশয় ক্ষমাশীল।[৬১]
৭১-اللَّهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْهَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ اللَّهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَالْمَاءِ الْبَارِدِ
৭১। হে আল্লাহ! আমাকে যাবতীয় গোনাহ ও ভুলভ্রান্তি থেকে পবিত্র কর। হে আল্লাহ! আমাকে গোনাহ থেকে এমনভাবে পরিচ্ছন্ন কর যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। হে আল্লাহ! আমাকে বরফ, শীতল ও ঠাণ্ডা পানি দ্বারা পবিত্র কর।[৬২]
৭২-اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَرَبَّ إِسْرَافِيلَ أَعُوذُ بِكَ مِنْ حَرِّ النَّارِ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
৭২। হে আল্লাহ! হে জিব্রাইল, মিকাইল ও ইসরাফিলের রব! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের উত্তাপ ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই।[৬৩]
৭৩-اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي.
৭৩। হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরে হেদায়েতের অনুপ্রেরণা দান কর। আমার অন্তরের অনিষ্টতা থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখো।[৬৪]
৭৪-اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَّ يَنْفَعُ.
৭৪। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি উপকার দানকারী ইলম চাই, এমন ইলম থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই যা কোন উপকারে আসে না।[৬৫]
৭৫-اَللَّهُمَّ أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوْبِنَا - وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا - وَاهْدِنَا سُبُلَ السَّلاَمِ - وَنَجِّنَا مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ - وَجَنِّبْنَا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ু وَبَارِكْ لَنَا فِيْ أَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُلُوْبِنَا وَأَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا - وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ - وَاجْعَلْنَا شَاكِرِيْنَ لِنِعَمِكَ مثنين بِهَا عَلَيْكَ قَابِلِيْنَ لَهَا وَأَتْمِمْهَا عَلَيْنَا.
৭৫। হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরসমূহে ভালবাসা স্থাপন করে দাও। আমাদের নিজেদের মাঝে সংশোধন করে দাও। আমাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত কর। অন্ধকার গোমরাহী থেকে বাঁচিয়ে আলোকিত হিদায়াতের পথে নিয়ে যাও। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখ। আমাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, অন্তরসমূহসহ আমাদের স্ত্রী-পুত্র সন্তানদের মাঝে বরকত দান কর। আমাদের তাওবা কবূল কর। তুমিতো দয়াময় তওবা কবুলকারী। আমাদেরকে তোমার প্রশংসা করে তোমার নেয়ামতের শুকরিয়া করার তাওফীক দাও। তুমি তোমার নেয়ামত আগ্রহভরে গ্রহণ করার তাওফীক দাও এবং তা আমাদের প্রতি পরিপূর্ণরূপে দান কর।[৬৬]
৭৬-اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَسْأَلَةِ وَخَيْرَ الدُّعَاءِ وَخَيْرَ النَّجَاحِ وَخَيْرَ الْعَمَلِ وَخَيْرَ الثَّوَابِ وَخَيْرَ الْحَيَاةِ وَخَيْرَ الْمَمَاتِ - وَثَبِّتْنِيْ وَثَقِّلْ مَوَازِيْنِيْ وَحَقِّقْ إِيْمَانِيْ وَارْفَعْ دَرَجَاتِيْ وَتَقَبَّلْ صَلاَتِيْ وَاغْفِرْ خَطِيْئَتِيْ وَأَسْأَلُكَ الدَّرَجَاتُ الْعُلَى مِنَ الْجَنَّةِ - اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ فَوَاتِحِ الْخَيْر وَخَوَاتِمَهُ وَجَوَامِعَهُ وَأَوَّلَهُ وَظَاهِرَهُ وَبَاطِنَهُ وَالدَّرَجَاتِ الْعُلَى مِنَ الْجَنَّةِ آَمِيْنَ - اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا آتي وَخَيْرَ مَا أَفْعَلُ وَخَيْرَ مَا أَعْمَلُ وَخَيْرَ مَا بَطَنَ وَخَيْرَ مَا ظَهَرَ وَالدَّرَجَاتِ العُلَى مِنَ الْجَنَّةِ آمِيْن -اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنْ تَرْفَعَ ذِكْرِيْ وَتَضَعَ وِزْرِيْ وَتُصْلِحَ أَمْرِيْ وَتَطْهَرْ قَلْبِيْ وَتَحْصِنَ فَرْجِيْ وَتَنَوَّرَ قَلْبِيْ وَتَغْفِرَ لِيْ ذَنْبِيْ - اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنْ تُبَارِكَ فِيْ نَفْسِيْ وَفِيْ قَلْبِيْ وَفِيْ سَمْعِيْ وَفِيْ بَصَرِيْ وَفِيْ رُوْحِيْ وَفِيْ خَلْقِيْ وَفِيْ خُلُقِيْ وَفِيْ أَهْلِيْ وَفِيْ مَحْيَايَ وَفِيْ مَمَاتِيْ وَفِيْ عَمَلِيْ فَتَقَبَّلْ حَسَنَاتِيْ وَأَسْأَلُكَ الدَّرَجَاتِ الْعُلَى مِنَ الْجَنَّةِ آمِيْنْ
৭৬। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি উত্তম প্রার্থনা, দু'আ, উত্তম সফলতা, উত্তম আমল, উত্তম সাওয়াব, উত্তম জীবন ও উত্তম মৃত্যু কামনা করছি। আমাকে তুমি অটল অবিচল রাখ। আমার আমলনামা ভারী করে দাও, আমার ঈমানকে সুদৃঢ় কর, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। আমার সলাত কবূল কর এবং আমার গুনাহ ক্ষমা কর। জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে আমাকে অধিষ্ঠিত কর।
হে আল্লাহ! আমাকে তুমি কল্যাণের শুরু, শেষ, পূর্ণাঙ্গ, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্যসহ জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা দান কর। আমীন!
হে আল্লাহ! আমি যা উপস্থিত করছি, কর্ম করছি ও আমল করছি এবং এসবের উত্তম প্রতিদান অর্জনের জন্য তোমার নিকট মুনাজাত করছি। আর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব কিছুর কল্যাণসহ জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা তোমার কাছে চাই। আমীন!
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এই মর্মে প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমার মর্যাদা বুলন্দ কর, আমার গোনাহর বোঝা সরিয়ে নাও। আমার সবকিছু ঠিক করে দাও, আমার অন্তরকে পবিত্র কর, আমার লজ্জাস্থানকে হেফাজাত কর, আমার অন্তরকে আলোকিত কর, আমার গুনাহ ক্ষমা কর।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, আমার মন ও আত্মায়, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিতে বরকত দান কর। বরকত দান কর আমার রুহে, আকৃতিতে, চরিত্র-মাধুর্যে, আমার পরিবারে, আমার জীবনে, মৃত্যুতে এবং আমার আমলে বরকত দান কর। সুতরাং আমার নেক আমল কবূল কর। জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে তুমি আমাকে অধিষ্ঠিত করিও। আমীন!
৭৭-اَللَّهُمَّ جَنِّبْنِيْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَهْوَاءِ وَالأَعَمَالِ وَالأَدْوَاءِ
৭৭। হে আল্লাহ! আমাকে অসৎ চরিত্র, কুপ্রবৃত্তি, অপকর্ম ও অপ্রতিষেধক (ঔষধ) থেকে দূরে রাখ।৭৭
৭৮-اَللَّهُمًَّ قَنِّعْنِيْ بِمَا رَزَقْتَنِيْ وَبَارِكْ لِيْ فِيْهِ وَاخْلُفْ عَلَيَّ كُلَّ غَائِبَةٍ لِيْ بِخَيْرٍ
৭৮। হে আল্লাহ! আমাকে যে রিযিক দান করেছ এতে তুমি আমাকে তুষ্টি দান কর এবং বরকত দাও। আর আমার প্রতিটি অজানা বিষয়ের পরে আমাকে তুমি কল্যাণ এনে দাও।[৬৭]
৭৯-اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا
৭৯। হে আল্লাহ! আমার হিসাবকে তুমি সহজ করে দাও।[৬৮]
৮০-اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
৮০। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার যিকর, কৃতজ্ঞতা এবং তোমার উত্তম ইবাদাত করার তাওফীক দাও।[৬৯]
৮১-اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ إِيمَانًا لاَ يَرْتَدُّ وَنَعِيمًا لاَ يَنْفَدُ وَمُرَافَقَةَ النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم-فِي أَعْلَى جَنَّةِ الْخُلْدِ
৮১। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এমন ঈমানের প্রার্থনা করছি, যে ঈমান হবে দৃঢ় ও মজবুত, যা নড়বড়ে হবে না, চাই এমন নেয়ামত যা ফুরিয়ে যাবে না। এবং চিরস্থায়ী সুউচ্চ জান্নাতে প্রিয় নবী মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থাকার তাওফীক আমাকে দিও।[৭০]
৮২-اللَّهُمَّ قِنِي شَرَّ نَفْسِي وَاعْزِمْ لِي عَلَى أَرْشَدِ أَمْرِي - اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَخْطَأْتُ وَمَا عَمَدْتُ وَمَا عَلِمْتُ وَمَا جَهِلْتُ
৮২। হে আল্লাহ! আমাকে আমার আত্মার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা কর। পথনির্দেশপূর্ণ কাজে আমাকে তুমি দৃঢ় রাখ। হে আল্লাহ! আমি যা গোপন করি এবং যা প্রকাশ করি, ভুল করি, ইচ্ছা বশতঃ করি, যা জেনে করি এবং না জেনে করি- এসব কিছুতে আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।[৭১]
৮৩-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الْعَدُوِّ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ
৮৩। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঋণের প্রভাব ও আধিক্য, শত্রুর বিজয় এবং শত্রুদের আনন্দ উল্লাস থেকে আশ্রয় চাই।[৭২]
৮৪-اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي وَعَافِنِي أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ ضِيقِ الْمَقَامِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
৮৪। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে হেদায়েত দান কর, আমাকে রিযিক দান কর, আমাকে নিরাপদে রাখ, ক্বিয়ামাতের দিনের সংকীর্ণ স্থান থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।[৭৩]
৮৫-اللَّهُمَّ أَحْسَنْتَ خَلْقِي فَأَحْسِنْ خُلُقِي.
৮৫। হে আল্লাহ! তুমি আমার আকৃতি ও অবয়বকে সুন্দর করেছ। অতএব আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।[৭৪]
৮৬-اَللَّهُمَّ ثَبِّتْنِيْ وَاجْعَلْنِيْ هَادِيًا مَهْدِيًّا.
৮৬। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে অটল-অবিচল রাখ এবং আমাকে পথপ্রদর্শক ও হিদায়াতপ্রাপ্ত হিসেবে গ্রহণ করে নাও।[৭৫]
৮৭-اَللَّهُمَّ آتِنْيْ الْحِكْمَةَ الَّتِيْ مَنْ أُوْتِيْهَا فَقَدْ أُوْتِيَ خَيْرًا كَثِيْراً.
৮৭। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেকমত দান কর। যাকে তুমি হেকমত দান করেছ, তাকে অনেক কল্যাণ দান করা হয়েছে। আমীন!
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِيْنَ
হে আল্লাহ! প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (স) ও তাঁর পরিবার পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রা) এর প্রতি দুরূদ ও সালাম বর্ষিত কর।

চার ইমামের আক্বীদাসমূহ ও মাযহাব মতভেদ

মুসলিম বিশ্ব আজ দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মনগড়া বানানো পথে চলছে। কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর হাদীসকে ভাগ করে এক একটি দলের জন্যে এক একটি নিয়ে কিছু মেনে কিছু পরিত্যাগ করে নিজেদের মতো করে চলছে। আর প্রত্যেকটি দলই দাবী করে তারা হাক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। অথচ আল্লাহ, রাসূল(সা), কুরআন, ঈমান ইত্যাদি সম্পর্কে ঐ সকল দলের আক্বীদাও ভুলে পরিপূর্ণ।
পরকালে মু্ক্তি পেতে হলে অবশ্যই ‘আক্বীদাহ্‌ বিশুদ্ধ হতে হবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ) থেকে শেষ নাবী ও রাসূর মুহাম্মাদ (স) পর্যন্ত যত নাবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন সকলকেই তাদের উম্মাতদের ‘আক্বীদাহ বিশুদ্ধ করার জন্য প্রেয়ণ করেছেন। যেমন- আল্লাহ বলেন:
আমি প্রত্যেক উম্মাতদের নিকট তাদের নাবী-রাসূলদেরকে এ দাওয়াত নিয়ে প্রেরণ করেছি যে, তোমরা এক আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকবে” (সুরা নাহল- ১৬:৩৬)
তাই ‘আক্বীদার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাংলাদেশে চারটি মাযহাব বা দল খুবই পরিচিত। এ সকল মাযহাবের সর্বস্তরের লোকদের আল্লাহ, রাসূল (সা) কুরআন, ঈমান ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের ‘আক্কীদাহ ভুলে পরিপূর্ণ। তা সত্বেও তারা তাদের ‘আক্বীদাহকে বিশুদ্ধ বলে দাবী করে। তারা বলে থাকে আমরা অমুক মাযহাবের লোক, অথচ সে মাযহাবের ইমামের ‘আক্বীদাহ বা বিশ্বাস কি ছিল তা তারা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে মনেও করে না। তারা দেখেনা রাসূল (সা) সাহাবা গণ, তাবেয়ীগণ, তাবে তাবেয়ীগণ অর্থ্যাৎ – সালাফগনদের আক্বীদাহ কী ছিল?
চার ইমাম যেমন- ইমাম আবূ হানিফাহ (র), ইমাম মালিক (র), ইমাম শাফিয়ী (র), ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (র), এদের সকলেরই আক্বীদাহ বিশুদ্ধ ছিল। তাদের আক্বীদাহ ছিল কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ি ‘আক্বীদাহ। তাদের আক্বীদাহ ছিল রাসূল (সা) এবং তার সাহাবা কিরামদের ‘আক্বীদাহ্‌। অর্থাৎ তাদের সকলেরই ‘আক্বীদাহ ছিল এক। কিন্তু আমরা সেদিকে কর্ণপাত না করে, মাযহাবের দোহাই দিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো চলছি। যা একজন সত্যিকারের মুসলমানের উচিৎ নয়।
চার মাযহাব সম্পর্কে জানতে হলে চারজন ইমাম সম্পর্কে জানা দরকার।
চার ইমামের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইমাম আবু হানিফা (রা) নাম নুমান বিন ছাবিত। উপনাম আবু হানিফা। রাসূল (সা) –এর ইন্তেকালের ৭০ বছর পর ৮০ হিজরীতে ইরাকের কুফায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৫০ হিজরীতে ৭০ বছর বয়সে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। তিনি তর্ক ও ফিকাহ শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি উচ্চ মানের একজন পরহেজগার ছিলেন। ইমামের কোন প্রামাণ্য লেখা বর্তমানে নেই।
ইমাম মালিক (রা) নাম মালিক বিন আনাস। রাসূল (সা) এর ইন্তেকালের ৮৩ বছর পর ৯৩ হিজরীতে পবিত্র মাদীনাতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৭৯ হিজরীতে ৮৬ বছর বয়সে মদীনাতেই ইন্তেকাল করেন। তিনি হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম হাদীসের ইল্লেখযোগ্য কিতাব লিখেছেন। এটি ‘মুয়াত্বা মালিক” নামে প্রসিদ্ধ। এছাড়া আরও বহু কিতাব তিনি লিখেছেন।
ইমাম শাফিয়ী (রা) নাম মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস আশ-শাফেয়ী। রাসূল (সা) এর ইন্তেকালের ১৪০ বছর পর ১৫০ হিজরীতে গাযায় জন্ম গ্রহণ করেন। পবিত্র মক্কায় বড় হন এবং জ্ঞান অর্জন করেন। ২০৪ হিজরীতে ৫৪ বছর বয়সে মিশরে ইন্তেকাল করেন। তিনি উচ্চ মানের একজন হাদীস বিশারদ ছিলেন। তিনি মহামূল্যবান বহুগ্রন্থ লিখেছেন। এসবের মধ্যে ‘কিতাবুল উম্ম’ ও ‘আর-রিসালাহ’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইমাম আহমদ (রা) নাম আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন হাম্বল। রাসূল (সা)-এর ইন্তেকালের ১৫৪ বছর পর ১৬৪ হিজরীতে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। ২৪১ হিজরীতে ৭৭ বছর বয়সে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন।
তিনি হাদীস জগতে এক উজ্জল নক্ষত্র। হাদীসের এক বিশাল সমুদ্র। তিনি তাঁর সু-প্রসিদ্ধ কিতাব “আল মুসনাদ” এ চল্লিশ হাজার হাদীস মুসলিম বিশ্বকে উপহার দিয়ে গেছেন। এছাড়া আরও বহু গ্রন্থ তিনি লিখেছেন। গ্রন্থ রচনা ও হাদীসের জ্ঞানের ক্ষেত্রে চার ইমামের মধ্যে তিনিই সবার সেরা। বিস্তারিত দেখুন বই- চার ইমামের অবস্থান ।

পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস অনুসারণ করাই চার ইমামের মূলনীতি। এই ব্যাপারে সন্মানিত চার ইমামের বক্তব্য তুলে ধরা হলো
ইমাম আবূ হানীফা (র) বলেছেন: যখন কোন (বিষয়ে) সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে সেই সহীহ হাদীসকে আমার মাযহাব বলে জানবে।
তিনি আরও বলেছেন: আমি যদি এমন কথা বলি যা আল্লাহ তায়ালার কিতাব এবং রাসূল (স) –এর হাদীসের বিপরীত, তাহলে আমার  কথাকে বর্জন কর (এবং কোরআন-হাদীসকে আঁকড়ে ধর)
তিনি আরও বলেছেন: সাবধান! তোমরা আল্লাহর দ্বীনে নিজেদের অভিমত প্রয়োগ করা হতে বিরত থাক। সকল অবস্থায়ই সুন্নাহর অনুসরণ কর। যে ব্যক্তি সুন্নাহ হতে বের হবে সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
২. ইমাম মালিক (রা) বলেছেন: আমি একজন মানুষ মাত্র। চিন্তা গবেষণায় ভুলও হয় আবার সঠিকও হয়। সুতরাং আমার যে অভিমত কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে পাও তা গ্রহণ কর। আর যা অনুকূলে নেই তা বর্জন কর।
৩. ইমাম শাফিয়ী (র) বলেছেন: তোমাদের কারো কাছ থেকে যেন রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাহ ছুটে না যায়। আমি যতো কিছুই বলে থাকি তা যদি রাসূল (সা) এর হাদীসের বিপরীত হয় তাহলে রাসূল (সা) এর কথাই আমার কথা।
৪. ইমাম আহমদ (র) বলেছেন: ইমাম আওযাঈ এর অভিমত, ইমাম মালিক এর অভিমত এবং ইমাম আবু হানিফার অভিমত সবই আমার কাছে অভিমত হিসাবে সমান অর্থাৎ একটাও শরীয়তের দলীল হতে পারে না। সাহাবীদের কথা শরীয়তের দলীল হবে।
ইমাম আহমদ (রা) আরও বলেছেন: যে ব্যক্তি রাসূল (সা) এর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে সে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
সন্মানিত ইমামগণের ইমামগণের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, তাঁদের ভুল ইজতেহাদ এবং দুর্বল দলিলের বিপরীতে সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে তাঁদের কথা বর্জন করে সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে হবে।
মাযহাব মূলত: একটাই
মাননীয় ইমামগণের বক্তব্য থেকে এ কথাও ফুটে উঠেছে যে, চার ইমামের প্রকৃত মাযহাব মূলত: একটাই। আর তা হলো, পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস অনুসরণ করা। এটাই রাসূল (সা) ও সাহবয়ে কেরামের মাযহাব। এই মাযহাবের নাম হলো ইসলাম আর অনুসারীর নাম মুসলিম। এই মাযহাবের ইমামে আজম হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) এই মাযহাবের প্রথম কাতারের অনুসারী হলেন সাহাবায়ে কেরাম। দ্বীতীয কাতারের অনুসারী হলেন তাবেঈগণ। আর তৃতীয় কাতারের অনুসারী তাবে তাবেঈগণ এবং মুজতাহিদ সকল ইমাম। এভাবে প্রত্যেক যুগের খাঁটি মুমিম-মুসলিমগণ এই জামাতে শরীক হয়েছেন। আমরাও এই জামাতের অনুসারী। কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ দুনিয়াতে আসবে, মুক্তি পেতে হলে এই জামাতেই শরীক হতে হবে।
প্রচলিত চার মাযহাব মানা কি ফরজ?
মাযহাব আরবী শব্দ। মাযহাব অর্থ চলার পথ, ধর্মমত এবং বিশ্বাস।  বিশ্ব মুসলিমের চলার পথ, ধর্মমত এবং বিশ্বাস এক-অভিন্ন। কারণ, বিশ্ব মুসলিমের আল্লাহ এক, কুরআন এক, রাসূল এক, কিবলা এক, দ্বীন এক। সুতরার মুসলিমরা চার মাযহাবের নামে চার দলে বিভক্ত হবে কেন?
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো এবং তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যেও না। (সুর ইমরান- ৩:১০৩)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন:
যারা নিজেদের ধর্মকে ভাগ ভাগ করে পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে (হে রাসূল) আপনার কোনো সম্পর্ক নেই তাদের সাথে। তাদের বিষয় আল্লাহর হাতে। তিনি তাদেরকে (এর কুফল) জানিয়ে দিবেন। (সুরা আন আম- ৬:১৫৯)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন:
নিশ্চয় এটাই হচ্ছে আমার সরল-সোজা পথ। সুতরাং তোমরা এই পথেই চলো। আর অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।  (সূরা আন-আম – ৬:১৫৩)
মুসনাদে আহমদ ও হাকিমে সহীহ সানাদে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, রাসূল (সা) একবার আমাদের সামনে একটি সরল-সোজা দাগ টানলেন। অতঃপর বলেন, এটা আল্লাহর সরল-সোজা পথ। তারপর ঐ দাগের ডানে-বাম আরও কতগুলি দাগ দিয়ে বললেন, এগুলি অন্যান্য ভ্রান্ত পথ। এই পথগুলির প্রত্যেকটার উপর একটি করে শয়তান আছে। সে ঐ পথের দিকে মানুষকে ডাকে। অতঃপর রাসূল (সা) উল্লেখিত (সুরা আনআমের ১৫৩ নং) আয়াতখানা তিলাওয়াত করলেন।
উল্লেখিত আয়াত এবং হাসীস থেকে পরিকষ্কার বুঝা যায় যে, সিরাতে মুস্তাকিম-সোজা পথ একটাই। সকলকে এক পথেই চলতে বলা হয়েছে। দলে দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে।

চার মায়হাব রাসূল (সা) –এর সুন্নাতও নয় এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতও নয়
সুন্নাত রাসূল (সা) বলেছেন, তোমারাদের মধ্যে যারা আমার পর বেঁচে থাকবে তারা (দ্বীনি বিষয়ে) বহু মতভেদ দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের অপরিহার্য্য কর্তব্য হলো আমার সুন্নাত এবং সুপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা। সুন্নাতকে মাড়িয়ে দাঁত দ্বারা শক্তভাবে কামড় দিয়ে ধরবে। আর সাবধান থাকবে (দ্বীনের নামে) নব আবিস্কৃত বিষয় সমূহ হতে। কারণ, প্রতিটি নব আবিস্কৃত বিষয় হল বিদআত। আর সকল প্রকার বিদআত হলো পথভ্রষ্টতা (আর সকল পথ ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম) – সুনানে আবু দাউদ, তিরমিজী; সানাদ সহীহ।
প্রচলিত চার মাযহাব রাসূল (সা) এর সুন্নাতও নয়, খলিফা আবুবকর, উমর, উসমান এবং আলী (রা)-এর সুন্নাতও নয়। বরং তাঁদের অনেক পরে এসব নতুন আবিষ্কার করা হয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন: বনি ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছে। আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি ছাড়া সবই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জিজ্ঞাসা করা হলো ঐ নাজাত প্রাপ্তদল কারা? রাসূল (সা) বললেন, যারা ঐ পথে থাকবে যে পথে আমি ও আমার সাহাবাগণ রয়েছি। – সুনানে আবু দাউদ
উল্লেখিত হাদীস থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মুক্তি পেতে হলে সে পথেই চলতে হবে যে পথে রাসূল (সা) এবং সাহাবীগণ ছিলেন। এবার প্রশ্ন হলো, আমরা কি সেপথে আছি, যে পথে তাঁরা ছিলেন? তাঁরা কি চার মাযহাবের নামে চার দলে বিভক্ত ছিলেন? “চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাব মানতেই হবে- মাযহাব মানা ফরজ”- এমন আক্বীদা-বিশ্বাস কি তাঁদের ছিল? কোরআন-হাদীসের কোনো স্থানে চার মাযহাব মানা ফরজ বা ওয়াজিব এমন কথা লেখা নেই। এমন কি, কোরআন-হাদীসের কোথাও চার ইমামের অথবা চার মাযহাবের নামটুকুও উল্লেখ নেই।
সর্বোপরি, ঈমামগণ প্রচলিত চার মাযহাব চালুও করেননি। আর তা মেনে চলা ফরজ বা ওয়াজিব এমন কথা ঘোষনাও করেননি। তাঁরা রাসূল (সা) এবং সাহাবায়ে কেরামের আলোকিত সহীহ পথের পথিক ছিলেন। তাঁদের ইন্তে-কালের বহু বছর পর প্রচলিত চার মাযহাব আবিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং কোনো দিক থেকেই প্রচলিত মাযহাব মানা ওয়াজিব বা ফরজ নয়।
চারশত হিজরীর পর প্রচলিত চার মাযহাব শুরু হয়েছে
সম্মানিত চার ইমাম নিজ নিজ সময়ে স্ব স্ব এলাকায় বড় আলিম হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ফলে লোকজন তাঁদেরকে জরুরী মাসআলা-মাসাইল জিজ্ঞাসা করতো। তাঁরা ফয়সালা দিতেন। ইমামগণের ইস্তেকবালের পর তাঁদের ভক্তরা তাঁদের মতামত ও নীতি প্রচার প্রসার করেন। এমনকি গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করতে থাকেন। এক ইমামের ভক্তরা অন্য ইমামের ভক্তদের সাথে তর্ক-বাহাস করতে থাকেন। দলাদলি-বাড়াবাড়ি চলতে থাকে। রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে শাসকবর্গও এতে জড়িত হয়ে পড়েন। এভাবে কালক্রমে ধীর ধীর প্রচলিত চার মাযহাবের রূপ ধারণ করেছে। উপমহাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম, আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহ্‌লভী (রা) লিখেছেন:
‘জেনে রাখ! হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর আগের লোকেরা কোন একজন নিদিষ্ট ব্যক্তির একক মাযহাবী তাক্বলীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না’।
চার ইমামের যে কোন একজনকেই মানতে হবে। সর্ব বিষয়ে এক মাযহাবের মাসআলা মতেই চলতে হবে। অন্য কিছু মানা যাবেনা- ‘মাযহাবের এমন অন্ধ অনুসরণ হিজরী চারশত বছরের পর থেকে শুরু হয়েছে।
বর্তমানে কোরআনের সঠিক তরজমা, নির্ভরযোগ্য তাফসীর এবং হাদীসের বিশাল ভান্ডার রয়েছে। সহীহ হাদীস থেকে জঈফ ও জাল বর্ণনা পৃথক করা আছে। মাযহাবের যে সব মাসআলা পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের সাথে মিলে তা মানতে হবে। আর যা মিলে না তা বর্জন করতে হবে। ভুল কিয়াস এবং জঈফ ও জাল দলিল ভিত্তিক যে সব মাসআলা মাযহাবে আছে তা মানা ফরজ নয়। বরং তা বর্জন করে কোনআন-হাদীস মোতাবেক আমল করা ফরজ। এটাই আমাদের মূল বক্তব্য। আর এটাই সম্মানিত চার ইমামের প্রকৃত মাযহাব। আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধাশীল। তাই আসুন দলে উপদলে বিভক্ত না হয়ে কুরআন এবং সহীহ হাদীসকে আকড়িয়ে ধরি।