হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের বিধান


অভিনন্দন বিনিময়ের কিছু উপলক্ষ :

১. পারস্পরিক স্বাভাবিক অভিনন্দন। যা একে অপরকে নতুন কোন নিয়ামত অর্জন বা মুসিবত থেকে মুক্তির প্রাক্কালে দিয়ে থাকে। উদ্দেশ্য আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং একজন মুসলিম ভাইকে আনন্দিত ও উৎসাহিত করা। এটা কোন দিনক্ষণ বা মাস, বৎসরের আগমন-প্রস্থানের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেমন, বিবাহ, নতুন সন্তান লাভ, পরীক্ষায় কৃতকার্য, চাকুরি লাভ করা ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন প্রদান।
এরূপ অভিনন্দন আদান-প্রদানে শরীর কোন সমস্যা নেই এটি একটি মানবিক স্বভাবগত বিষয়, বরং আশা করা যায় এতে অভিনন্দন প্রদানকারী ছাওয়াব পাবেন। কারণ তিনি একজন মুসলিম ভাইকে প্রফুল্ল করলেন। আনন্দিত করলেন। যাতে সে উৎসাহ বোধ করবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. এর মতে। মুবাহ কাজ ভাল নিয়তে সম্পর্কিত হলে কল্যাণ মূলক কর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। আর মন্দ নিয়তে সম্পাদন করলে মন্দ কর্মের ভিতর গণ্য হয়।

২. নির্দিষ্ট সময় যেমন ঈদ, বৎসর, মাস, দিন উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান এর বিধান সম্পর্কে বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ঈদ-ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভিনন্দন প্রসঙ্গে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটি জায়েয মর্মে মোটামুটি সকলের নিকটই পরিষ্কার। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহাবিদের আমলদ্বারা প্রমাণিত। নববর্ষ : যেমন হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন। মাস : যেমন রমজান মাস উপলক্ষে অভিনন্দন। এর একটি ভিত্তি আছে এবং এ প্রসঙ্গে মতানৈক্যের দিকটিও সকলের নিকট প্রসিদ্ধ।
আর বিভিন্ন দিবস যেমন নবিজির জন্ম দিবস, ইসরা, মি'রাজ দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়। এর বিধান স্পষ্ট-সকলেই জানে- অর্থাৎ বিদয়াত। কারণ বিদয়াত পন্থীদের রীতি-নীতির সাথে এর একটি সূত্রিতা রয়েছে। প্রথমটি ব্যতীত বর্ণিত অভিনন্দন সমূহের কোনটি সম্পর্কেই নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবিদের কারো থেকে কোন প্রমাণ নেই। অথচ তাঁদের যুগে এ উপলক্ষে ও কার্য কারণগুলো বিদ্যমান ছিল এবং অভিনন্দন প্রচলনের কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। তা সত্ত্বেও তাঁরা তা করেন নি, না নবিজি নিজে না তাঁর কোন সাহাবি। বরং তাঁরা অভিনন্দন বিনিময়কে শুধুমাত্র দুই ঈদ পর্যন্ত সীমিত রেখেছেন।

 বিজ্ঞ ঊলামায়ে কেরাম থেকে নববর্ষের শুরুতে পারস্পরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিধান সম্পর্কে দু'ধরনের মত পাওয়া যায়।

এক. বৈধ এবং এটি মানুষের স্বভাবগত একটি বিষয়। প্রখ্যাত মনীষী শায়খ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন র. ও এ মতের সমর্থক। তিনি বলেছেন।
আমার মতে নববর্ষের শুরুতে অভিনন্দন ও মোবারক বাদ প্রদানে শরীয়ী কোন সমস্যা নেই। তবে বিষয়টি (পূর্ব থেকে) অনুমোদিত এমন নয়। একথার অর্থ হচ্ছে আমরা লোকদের এরূপ বলব না যে, এ উপলক্ষে তোমাদের একে অপরকে অভিনন্দন জানানো সুন্নত। তবে হ্যাঁ তারা যদি এরূপ করে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। এখন যদি কেউ কাউকে অভিনন্দন করে তাহলে তার উপচিত হবে তাঁর জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করা যে এ বৎসরটি যেন তার জন্যে কল্যাণ ও বরকতের বৎসর হয়। আর মানুষ অভিনন্দন কামনা করে। এ মাস আলা সম্পর্কে আমি এতটুকুই জানি এবং আমার অভিমত ও তাই। অভিনন্দন মানুষের স্বভাবগত ব্যাপার, কোন ইবাদত সম্পর্কীয় বিষয় নয়।
لقاء الباب المفتوح (লিকাউল বাবিল মাফতুহ)
এ বিষয়ে শায়খ র. এর আরো বক্তব্য আছে (اللقاء الشهري/ লিকায়ে শাহরী/ মাসিক সাক্ষাতকারে) তিনি বলেছেন : যদি কেউ তোমাকে অভিনন্দন-মুবারকবাদ জানায় তাহলে তুমিও তাকে অভিনন্দিত করবে। কিন্তু তুমি আরম্ভ করবে না। এবং প্রথমে কাউকে অভিনন্দন জানাবে না। এ মাসআলাতে এটিই সঠিক।
যদি তোমাকে কেউ বলে, নববর্ষ উপলক্ষে তোমাকে অভিনন্দন বা শুভ নববর্ষ ইত্যাদি তাহলে উত্তরে তুমি বলবে। আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য কল্যাণ করুন। এ বৎসরকে তোমার জন্যে কল্যাণ ও বরকতময় করুন। কিন্তু তুমি প্রথমে লোকদের অভিনন্দন দেয়া শুরু করবে না। কারণ সালাফে সালেহীনদের কেউ এরূপ অভিনন্দন আদান-প্রদান করেছেন বলে আমার জানা নেই। বরং সকলের জানা থাকা ভাল, যে পূর্ববর্তী মনীষীগণ মহররম কে বৎসরের শুরু হিসাবে ওমর রা. এর খেলাফত কাল থেকে গণ্য করা শুরু করেছেন।
আল-জিয়াউল লামে'য়/ الضياء اللامع গ্রন্থের ৭০২ পৃষ্ঠায় বলেছেন
নববর্ষের আগমন উপলক্ষে উৎসব করা বা অভিনন্দন বিনিময়ের প্রচলন ঘটানো সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেউ কেউ এ অভিনন্দন বিনিময় কর্মকে যারা বৈধ বলে মত দিয়েছেন তাদের মধ্যে শাফেয়ি মাজহাবের মুতাআখখিরীনদের মধ্য হতে ইমাম কামভেলী /القمولىএবং ইমাম সুয়ূতী আর হাম্বলীদের মধ্য হতে ইমাম আবুল হাসান মাকদেসীর নাম উল্লেখ করেছেন। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় আমি এর বিস্তারিত বর্ণনায় গেলাম না।

দুই. এটি একেবারেই নিষিদ্ধ আর এ মতটিই হচ্ছে অগ্রাধিকার যোগ্য মত। যারা এ মতামত ব্যক্ত করেছে তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন সুনান খ্যাত গবেষক শায়খ সালেহ আল ফাউযান। নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময় সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেছেন : এ কর্মের কোন শরয়ী ভিত্তি আছে বলে আমাদের জানা নেই। হিজরি তারিখের প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও এ ছিল না যে, শুরু বর্ষকে লোকেরা এটি উপলক্ষ বানাবে। একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে। বিভিন্ন উপায়ে উদযাপন করবে, উৎসব করবে, আলোচনা করবে। বরং হিজরি বৎসর ও তারিখ প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল تميز العقود তথা বিভিন্ন দাপ্তারিক কাজে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে চুক্তি ও সম্পাদন যোগ্য বিষয়াবলীর একটি থেকে অপরটিকে পৃথক করে সামঞ্জস্য বিধান। যেমনটি করেছিলেন হযরত ওমর রা. তাঁর রাজত্বকালে যখন ইসলামি খেলাফতের পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়ে গিয়ে ছিল, তাঁর নিকট বিভিন্ন স্টেট থেকে সময় তারিখ উল্লেখ বিহীন অনেক চিঠিপত্র আসতে লাগল, তখন প্রত্যেক চিঠিকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা এবং লেখার তারিখ ও সময় সম্পর্কে অবহিত হয়ে কাজে শৃঙ্খলা ও গত আনার জন্যে চিঠিতে তারিখ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। ওমর রা. সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলেন সাহাবারা হিজরতের বৎসরকে হিজরি তারিখের সূচনা করে নতুন গণনা শুরু করার পরামর্শ দিলেন এবং তৎকালীন বিদ্যমান থাকা মীলাদী (ঈসায়ী) তারিখকে বাদ দিয়ে হিজরতকে প্রথম ধরে হিজরি সনের প্রবর্তন করলেন। যাতে যুক্তি ও লেখার সময় জানা থাকে এবং কাজ সুশৃঙ্খল ও গতিশীল হয়। এটিই ছিল হিজরি সন প্রবর্তনের মূল কারণ। এটিকে একটি উপলক্ষ বানিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসব উদযাপন করে বিদয়াতের রাস্তা ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে এর প্রবর্তন হয়নি।

প্রশ্ন : যদি আমাকে কোন ব্যক্তি বলে : كل عام وأنتم بخير অর্থাৎ সারা বৎসর তুমি সুখ-শান্তিকে অতিবাহিত কর। এ জাতীয় বাক্য এসব দিবসে কি বৈধ?

উত্তর : না, এসব অনুমোদিত নয়। এগুলো জায়েযও নেই।
দেখুন: الإجابات المهمة فى المشاكل الملحة আল ইজাবাতুল মুহিম্মাহ ফিল মাশাকিলিল মুলিম্মাহ। পৃ: ২২৯
এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তাশীল ব্যক্তি "অভিনন্দন নিষিদ্ধ" মর্মে বক্তব্যকে সমর্থন যোগ্য বলে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এর কারণ অনেক। কিছু নিম্নে প্রদত্ব হল।
(১) এ অভিনন্দন কর্মটি বৎসরের এমন একটি দিনে সম্পাদিত হবে যা প্রতি বৎসর বার বার ফিরে আসবে। ফলে একে অন্যান্য উদযাপন যোগ্য দিনের সাথে গণ্য করা হবে অথচ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন ঈদ উদযাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ দিকটির বিবেচনায় নববর্ষে অভিনন্দন মুবারকবাদ বিনিময়কে নিষেধ করা হবে।
(২) এটি ইয়াহুদী-নাসারাদের সাদৃশ্যাবলম্বন। অথচ আমাদেরকে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াহুদীরা হিব্রু (Hebrwe) বর্ষের শুরুতে যা (تسري) তাশরী নামক মাসে শুরু হয়, একে অপরকে অভিনন্দন জানায়। শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাশরী (تسري) হচ্ছে ইয়াহুদীদের প্রথম মাস। শনিবারের ন্যায় এদিনও যাবতীয় কাজ-কর্ম হারাম আর নাসারা (খৃষ্টান) রা ঈসায়ী বর্ষের শুরুতে পরস্পর অভিনন্দন আদান প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
(৩) এর মাধ্যমে অগ্নিপূজক এবং আরব্য মুশরিকদের সাদৃশ্যাবলম্বন এবং তারেদ অনুকরণ করা হয়। অগ্নিপূজকরা নওরোজ তথা তাদের শুরু বর্ষে অভিনন্দন বিনিময় করত। নওরোজ অর্থ হচ্ছে-নতুন দিন। আর জাহেলী যুগের আরবরা মুহররম মাসের প্রথমদিনে নিজ রাজাদেরকে মুবারকবাদ জানাত। আল্লামা কাযভীনী র. স্বীয় কিতাবু আজায়েবুল মাখলুকাত
এমনিটিই বর্ণনা করেছেন। দেখুন : الأعياد وأثرها على المسلمين আল আ'ইয়াদ ওয়া আছরুহা আলাল মুসলিমীন। ড. সুলাইমান আল সুহাইমী
(৪) হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দনকে বৈধতা প্রদান করা প্রকারান্তরে এ জাতীয় অনেক দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের রাস্তা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়া। যেমন শিক্ষা বর্ষের সূচনা উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস অনুরূপ অনেক দিবস যা নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন জায়েয মর্মে মত প্রদান কারীরাও বলেনি। বরং এসকল দিবসে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার দাবি নববর্ষে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার চেয়েও জোরালো কেননা নবী কারীম ও সাহাবাদের যুগে এসব দিবসে অভিনন্দন প্রচলনের কার্যকারণ অনুপস্থিত ছিল আর নববর্ষ উপলক্ষে ছিল বিদ্যমান।
(৫) অভিনন্দনকে বৈধ বলে রায় দেয়ার অর্থই হচ্ছে তাতে অনেক ব্যাপকতা ও সুযোগ প্রদান করা। যার কারণে মোবাইল ফোনে চিঠির আদান প্রদান, ভিউ কার্ডের আদান-প্রদান যদিও তারা একে অভিনন্দন বার্তা বলে থাকে। বেড়ে যাবে এ উপলক্ষে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করবে, মিডিয়া তথা স্যাটেলাইট চ্যানেল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদিতেও বিশেষ আয়োজন করা হবে। বরং এক পর্যায়ে এসে অভিনন্দন জানানোর জন্যে ভ্রমণ করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হবে এটি কোন অলীক কাহিনি নয় বরং বিশ্বের কোন কোন রাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ যদি এসব করে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এগুলো তাদের স্বভাবে পরিণত হয় তাহলে যারা এসকল (বাড়াবাড়ী পূর্ণ) কাজ করে আর নিষেধ করতে পারবে না। সুতরাং অভিনন্দনের রাস্তা বন্ধ করাই সংগত।
(৬) হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদানের মূলত কোন অর্থ নেই। কারণ অভিনন্দনের মূল অর্থতো হচ্ছে নতুন কোন নিয়ামত অর্জিত হওয়া বা কোন ক্ষতিকর জিনিসকে প্রতিহত করতে পারা এবং আনন্দ প্রকাশ স্বরূপ অভিনন্দন বিনিময় করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি হিজরি বর্ষ শেষ হওয়ার মাধ্যমে কী নিয়ামত অর্জিত হল? বরং অধিক যুক্তিযুক্ত ও সংগত হচ্ছে, একটি বৎসর জীবন থেকে চলে গেল। বয়স কমে গেল মৃত্যু ঘনিয়ে আসল এসব নিয়ে চিন্তা করা এবং শিক্ষা গ্রহণ করা।
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বিদায়ি বর্ষের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরকে অভিনন্দন জানায় অথচ তাদের শত্রু তাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। তাদের ভাইদের হত্যা করেছে। তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তখন তারা নিজেদের কি দিয়ে অভিনন্দিত করবে?
এসব দিক বিবেচনা করা আমরা বলব, অভিনন্দন- মুবারকবাদ নববর্ষ উপলক্ষে নিষিদ্ধ হওয়ারই দাবি রাখে এবং এটিই সঠিক যুক্তি সংগত। যদি কেউ আপনাকে এ উপলক্ষে অভিনন্দন জানায় আপনার উচিত হবে তাকে বুঝানো ও নসিহত করা। কারণ পাল্টা অভিনন্দন জানানো এবং প্রকার এর বৈধতাকে স্বীকার করে না।
সালামের আদান-প্রদানের উপর একে তুলনা করা যায় না। তুলনা করা হলে, এটি হবে একটি অসংলগ্ন কাজ।
তবে বিষয়টি যেহেতু ইজতেহাদী তাই খুব কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করা ঠিক হবে না। ইজতেহাদী মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোন ইনকার নেই।

কুরআন ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন



ইংরেজি নববর্ষ ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ কিংবা হিজরি নববর্ষ পালন করা হারাম। 
ইব্‌ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “কোন মুসলিমের সুযোগ নেই কাফেরদের সামঞ্জস্য গ্রহণ করা, না তাদের ধর্মীয় উৎসবে, না মৌসুমি উৎসবে, না তাদের কোন ইবাদতে। কারণ আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে সর্বশেষ নবী দ্বারা সম্মানিত করেছেন, যাকে পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী দীন দেয়া হয়েছে। যদি মূসা ইব্‌ন ইমরান জীবিত থাকত, যার উপর তাওরাত নাযিল হয়েছে; কিংবা ঈসা ইব্‌ন মারইয়াম জীবিত থাকত, যার উপর ইঞ্জিল নাযিল হয়েছে; তারাও ইসলামের অনুসারী হত। তারাসহ সকল নবী থাকলেও কারো পক্ষে পরিপূর্ণ ও সম্মানিত শরিয়তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকত না। অতএব মহান নবীর আদর্শ ত্যাগ করে আমাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব এমন জাতির অনুসরণ করা, যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট, মানুষকে পথ ভ্রষ্টকারী ও সঠিক দীন থেকে বিচ্যুত। তারা বিকৃতি, পরিবর্তন ও অপব্যাখ্যা করে আসমানি ওহির কোন বৈশিষ্ট্য তাদের দীনে অবশিষ্ট রাখেনি। দ্বিতীয়ত তাদের ধর্ম রহিত, রহিত ধর্মের অনুসরণ করা হারাম, তার উপর যত আমল করা হোক আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। তাদের ধর্ম ও মানব রচিত ধর্মের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ যাকে চান সঠিক পথের সন্ধান দান করেন”।[15]

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করে আমরা তাদের অনুসরণ করতে পারি না। তারা অভিশপ্ত ও গোমরাহ। এসব তাদের বানানো উৎসব, কুসংস্কার ও পাপ কম। ইহুদিদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ وَيَقُولُونَ سَمِعۡنَا وَعَصَيۡنَا وَٱسۡمَعۡ غَيۡرَ مُسۡمَعٖ وَرَٰعِنَا لَيَّۢا بِأَلۡسِنَتِهِمۡ وَطَعۡنٗا فِي ٱلدِّينِۚ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ قَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَا وَٱسۡمَعۡ وَٱنظُرۡنَا لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۡ وَأَقۡوَمَ وَلَٰكِن لَّعَنَهُمُ ٱللَّهُ بِكُفۡرِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُونَ إِلَّا قَلِيلٗا ٤٦﴾ [النساء : ٤٦] 
“ইহুদিদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা কালামসমূহকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে ফেলে এবং বলে, ‘আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম’। আর তুমি শোন না শোনার মত, তারা নিজেদের জিহ্বা বাঁকা করে এবং দীনের প্রতি খোঁচা মেরে বলে, ‘রাইনা’[16] আর তারা যদি বলত, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম এবং তুমি শোন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ’ তাহলে এটি হত তাদের জন্য কল্যাণকর ও যথার্থ। কিন্তু তাদের কুফরির কারণে আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন। তাই তাদের কম সংখ্যক লোকই ঈমান আনে”।[17]
খৃস্টানদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলে:
﴿وَمِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّا نَصَٰرَىٰٓ أَخَذۡنَا مِيثَٰقَهُمۡ فَنَسُواْ حَظّٗا مِّمَّا ذُكِّرُواْ بِهِۦ فَأَغۡرَيۡنَا بَيۡنَهُمُ ٱلۡعَدَاوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ وَسَوۡفَ يُنَبِّئُهُمُ ٱللَّهُ بِمَا كَانُواْ يَصۡنَعُونَ ١٤﴾ [المائدة: ١٤] 
“আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’, আমি তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তার একটি অংশ ভুলে গেছে। ফলে আমি তাদের মধ্যে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রুতা ও ঘৃণা উস্‌কে দিয়েছি এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে অবহিত করবেন”।[18]

আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব অনুষ্ঠান পালন করি তার অধিকাংশ ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের তৈরি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমরা আকিকা ত্যাগ করে খাতনার সময় ঘটা করে অনুষ্ঠান করি। খাতনা করা সুন্নত, এতে কোন অনুষ্ঠান নেই, তাতে আমরা অনুষ্ঠান করি, এদিকে আকিকা দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ, অথচ আমরা তাই ত্যাগ করছি। আমরা কি এতটাই নির্বোধ বনে গেলাম! আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে সতেরো বার সূরা ফাতেহা পাঠ করে সিরাতে মুস্তাকিমের প্রার্থনা করি, বাস্তবে আমরা যা ত্যাগ করছি, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ ও সুন্নত। কমপক্ষে সতেরো বার অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের রাস্তা থেকে পানাহ চাই, অথচ বাস্তবে আমরা তাদের অনুসরণ করছি, অর্থাৎ ইহুদি ও খৃস্টানদের পথ। এ কেমন বৈপরীত্য! আমাদের অবচেতনতা যেন পাগলামিকেও হারমানায়।

ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকরা মুসলিমের শত্রু

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করে আমরা যাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছি, তারা প্রকৃতপক্ষে আমাদের শত্রু। তারা কখনো আমাদের বন্ধু হবে না, যাবত আমরা আমাদের দীন ত্যাগ করে তাদের ধর্মের অনুসরণ না করি। তারা আমাদের দীন ও নবীকে নিয়ে উপহাস করে। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ دِينَكُمۡ هُزُوٗا وَلَعِبٗا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَٱلۡكُفَّارَ أَوۡلِيَآءَۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٥٧﴾ [المائدة: ٥٧]
“হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক”।[19] 
অন্যত্র ঘোষণা দিচ্ছেন, যে তাদের দিকে ধাবিত হবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوۡلِيَآءَۘ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١﴾ [المائ‍دة: ٥١]    
“হে মুমিনগণ, ইহুদি ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত দেন না”।[20] 
অতএব তাদের ঈদ ও উৎসবে যোগ দেয়া, তাদের সমর্থন জানানো কিংবা কোন ধরণের সহায়তা করা নিজের দীনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। 

মুসলিমের ঈদ

আমাদেরকে ইসলামে স্বীকৃত উৎসব তথা ঈদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ঈদ একটি ইবাদত, যার দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করি। এ ঈদের সংখ্যা তিনটি, চতুর্থ কোন ঈদ নেই। জুমা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ يَوْمُ عِيدٍ، فَلَا تَجْعَلُوا يَوْمَ عِيدِكُمْ يَوْمَ صِيَامِكُمْ، إِلَّا أَنْ تَصُومُوا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ»
“নিশ্চয় জুমার দিন ঈদের দিন, অতএব তোমাদের ঈদের দিনকে তোমরা সিয়ামের দিন বানিয়ো না, তবে তার পূর্বে কিংবা পরে যদি সিয়াম রাখ, তাহলে পার”।[21] 
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: " مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ " قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন, তখন তাদের দু’টি দিন ছিল, যেখানে তারা খেলা-ধুলা করত। তিনি বললেন: এ দু’টি দিন কি? তারা বলল: আমরা এতে জাহিলি যুগে খেলা-ধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন: ঈদুল আদহা ও ঈদুল ফিতর”[22] 
ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ হাদিস প্রমাণ করে কাফেরদের উৎসব পালন করা হারাম। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের জাহিলি দুই ঈদের উপর বহাল রাখেননি। রীতি মোতাবেক তাতে খেলা-ধুলার অনুমতি দেননি। তিনি বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এর দাবি পূর্বের আমল ত্যাগ করা। কারণ বদল করার পর উভয় বস্তুকে জমা করা যায় না। বদল শব্দের অর্থ একটি ত্যাগ করে অপরটি গ্রহণ করা”[23] 
অতএব কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের উৎসব পালন করা, যেমন নববর্ষ ও অন্যান্য উৎসবসমূহ

রাহমানের বান্দারা মুশরিকদের উৎসবে যোগ দেয় না

সূরা ফুরকানে আল্লাহ তাআলা বিশেষ বান্দাদের গুণাবলী উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে তিনি রহমানের বান্দা বলে সম্বোধন করেছেন। তাদের একটি বিশেষ গুণ, তারা কখনো কাফেরদের উৎসবে যোগ দেয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا ٧٢﴾ [الفرقان: ٧٢] 
“আর যারা উৎসবে উপস্থিত হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়”[24]
তাবেয়ি মুহাম্মদ ইব্‌ন সিরিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ﴿ٱلزُّورَ  অর্থ খৃস্টানদের ঈদ[25], মুজাহিদ, রাবি ইব্‌ন আনাস ও দাহহাক রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ বলেন: ﴿ٱلزُّورَ  অর্থ মুশরিকদের ঈদ। ইকরিমা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ﴿ٱلزُّورَ  অর্থ “জাহেলি যুগে প্রচলিত তাদের একটি খেলনা”। আমর ইব্‌ন মুররাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ﴿ٱلزُّورَ  অর্থ “রহমানের বান্দারা মুশরিকদের শিরকি কাজের দিকে ধাবিত হয় না এবং তাদের সাথে মিশে না”। 
শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ এসব বাণী নকল করে বলেন: তাবেয়িদের এ অর্থ এবং যারা বলেন: ﴿ٱلزُّورَ  অর্থ শিরক বা জাহেলি যুগের মূর্তি, বা অশ্লীল মেলা ও যাত্রা, বা গানবাদ্য ইত্যাদি অর্থে কোন বৈপরীত্য নেই, কারণ পূর্বসূরিরা এভাবে তাফসির করতেন। তারা শ্রোতার অবস্থা ও প্রয়োজনের খাতিরে এক বস্তুকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করতেন। আর যারা বলেন: لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ অর্থ “তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না”, তাদের ব্যাখ্যা সঠিক নয়, কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন: لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ তিনি لَا يَشۡهَدُونَ بـِٱلزُّورَ বলেননি। অর্থাৎ ب উপসর্গ যোগে বলেননি। আরবরা কোথাও উপস্থিত হলে বলে: شهدت كذا  আমি সেখানে উপস্থিত হয়েছি, অর্থাৎ شهد ক্রিয়ার সাথে ب উপসর্গ যোগ করেন না। ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«أَنَّ الْغَنِيمَةَ لِمَنْ شَهِدَ الْوَقْعَةَ»
“যুদ্ধে যে উপস্থিত হবে তার জন্যই গণিমত”।[26] 
এভাবে তারা উপস্থিতির জন্য شهد ক্রিয়া ব্যবহার করেন ب উপসর্গ ব্যতীত। আর যখন কেউ বলে: شهدت بكذا  তার অর্থ আমি তার সংবাদ দিয়েছি। অতএব আরবদের ব্যবহার থেকেও প্রমাণ হয় ﴿لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ অর্থ “তারা কাফেরদের উৎসবে উপস্থিত হয় না, যদি ﴿ٱلزُّورَ  অর্থ “তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না” হত, তাহলে شهد ক্রিয়ার পর ب উপসর্গ যোগ হত, যেমন আরবদের রীতি। অতএব এখানে আল্লাহ কাফেরদের ঈদ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন এবং বলেছেন রহমানের বান্দারা সেখানে হাজির হয় না। যখন তাদের ঈদ ও উৎসবসমূহ দেখা ও সেখানে উপস্থিত হওয়া সমীচীন নয়, তখন তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা ও একাত্মতা পোষণ করা কত বড় জঘন্য অপরাধ সহজে অনুমেয়”[27]
ইব্‌ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন: لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ অর্থ “তারা কাফেরদের উৎসবে উপস্থিত হয় না” স্পষ্টভাবে বুঝে আসে। এ জন্য হয়তো আল্লাহ পরবর্তীতে বলেছেন: وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا “এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়”।[28] অর্থাৎ তারা সেখানে উপস্থিত হয় না, যদি কখনো ঘটনাক্রমে তার পাশ দিয়ে যেতে হয়, তারা চলে যায়, কিন্তু তার কোন বিষয় দ্বারা নিজেদেরকে কলুষিত করে না। এ জন্য আল্লাহ বলেছেন: مَرُّواْ كِرَامٗا সম্মানের সাথে চলে যায়। একদা ইব্‌ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু গানবাদ্যের পাশ দিয়ে সেগুলোকে উপেক্ষা করে অতিক্রম করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
 «لقد أصبح ابن مسعود، وأمسى كريمًا».
“ইব্‌ন মাসউদ সকাল ও সন্ধ্যা করেছে সম্মানের সাথে”। অতঃপর তাবেয়ি ইবরাহিম ইব্‌ন মায়সারাহ রাহিমাহুল্লাহ তিলাওয়াত করেন: وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا [এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়]”[29]

কাফেরদের সাথে ঘনিষ্ঠতা নিফাকি

কাফেরদের সাথে সম্পর্ক রাখা, তাদের কাজ ও কর্মে সমর্থন বা সহায়তা দেয়া, সেখানে উপস্থিত হওয়া, তাদের থেকে লাভের আশায় হোক কিংবা ভয়ে হোক নেফাকের আলামত। মদিনার যেসব মুনাফিকরা মুসলিমদের বিপর্যয় আশঙ্কা করে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ বন্ধুত্ব নিয়ে ইহুদি ও মক্কার কাফেরদের সাথে সম্পর্ক কায়েম করেছিল, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন:     
﴿فَتَرَى ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ يُسَٰرِعُونَ فِيهِمۡ يَقُولُونَ نَخۡشَىٰٓ أَن تُصِيبَنَا دَآئِرَةٞۚ فَعَسَى ٱللَّهُ أَن يَأۡتِيَ بِٱلۡفَتۡحِ أَوۡ أَمۡرٖ مِّنۡ عِندِهِۦ فَيُصۡبِحُواْ عَلَىٰ مَآ أَسَرُّواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ نَٰدِمِينَ ٥٢﴾ [المائدة: ٥٢] 
“সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের জন্য) ছুটছে। তারা বলে: ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোন বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে’। অতঃপর হতে পারে আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তার পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে”।[30] 
ইব্‌ন কাসির রহ. বলেন: مَّرَضٞ  অর্থ সন্দেহ, দ্বিধা ও নিফাক। يُسَٰرِعُونَ فِيهِمۡ অর্থ বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ মহব্বত ও বন্ধুত্বের প্রস্তাব নিয়ে দ্রুত ছুটে যায়[31] 
সন্দেহ নেই তাদের উৎসব পালন করা মানে তাদের সাথে বন্ধুত্বের বিনিময় করা, যা নেফাকের নিদর্শন, কোন মুসলিমের পক্ষে তা কখনো সম্ভব নয়।

শুভ নববর্ষ বলা

আমরা চিন্তা করেছি কিংবা ভেবে দেখেছি যে, নববর্ষের শুরুতে যখন বলি, যাকেই বলি: “শুভ নববর্ষ”, কিংবা “হ্যাপি নিউ ইয়ার”? কার অনুসরণ করছি, কাকে বলছি ও কি বলছি? নিশ্চয় আমরা চিন্তা করিনি, চিন্তা করলে কখনো আমাদের বিবেক সায় দিত না কুফরি কথার পক্ষে, কিংবা তাদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রতি, যারা ঈসা আলাইহিস সালামকে বলেছে স্বয়ং আল্লাহ, কখনো বলেছে আল্লাহর পুত্র, কখনো বলেছে তিনজনের তৃতীয় সত্বা। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ عُزَيۡرٌ ٱبۡنُ ٱللَّهِ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَى ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ ٱللَّهِۖ ذَٰلِكَ قَوۡلُهُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡۖ يُضَٰهِ‍ُٔونَ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبۡلُۚ قَٰتَلَهُمُ ٱللَّهُۖ أَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٣٠﴾ [التوبة: ٣٠] 
“আর ইহুদিরা বলে, ‘উজাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র। এটা তাদের মুখের কথা, তারা সেসব লোকের কথার অনুরূপ বলছে যারা ইতঃপূর্বে কুফরি করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন, কোথায় ফেরানো হচ্ছে এদেরকে”?[32] 
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
﴿لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ ثَالِثُ ثَلَٰثَةٖۘ وَمَا مِنۡ إِلَٰهٍ إِلَّآ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۚ وَإِن لَّمۡ يَنتَهُواْ عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٧٣﴾ [المائ‍دة: ٧٣] 
“অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন’। যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব স্পর্শ করবে”।[33] 
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
﴿لَقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ ٧٢﴾ [المائ‍دة: ٧٢]   
“অবশ্যই তারা কুফরি করেছে, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হলেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ’[34] 
অথচ ঈসা আলাইহিস সালাম কখনো এ কথা বলেননি। তার কথা আল্লাহ নকল করেছেন এভাবে:
﴿وَقَالَ ٱلۡمَسِيحُ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۖ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [المائ‍دة: ٧٢]  
“আর মাসীহ বলেছে, ‘হে বনি ইসারাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর’। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই”।[35]
তাদের কুফরি কথার কারণে আসামন, যমীন ও পাহাড়সমূহে কম্পন সৃষ্টি হয়, তারা ভীত হয়। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿تَكَادُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ يَتَفَطَّرۡنَ مِنۡهُ وَتَنشَقُّ ٱلۡأَرۡضُ وَتَخِرُّ ٱلۡجِبَالُ هَدًّا ٩٠ أَن دَعَوۡاْ لِلرَّحۡمَٰنِ وَلَدٗا ٩١ وَمَا يَنۢبَغِي لِلرَّحۡمَٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا ٩٢﴾ [مريم: ٩٠،  ٩٢] 
“এতে আসমানসমূহ ফেটে পড়ার, যমীন বিদীর্ণ হওয়ার এবং পাহাড়সমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। কারণ তারা পরম করুণাময়ের সন্তান আছে বলে দাবি করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা পরম করুণাময়ের জন্য শোভনীয় নয়”।[36]
যারা আল্লাহর সাথে শরীক করেছে ও তার গোস্বার পাত্রে পরিণত হয়েছে, তাদের জন্য আল্লাহ জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন, আমরা কিভাবে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাই, কিভাবে তাদের অনুসরণ করি এবং বলি নববর্ষের শুভেচ্ছা! 
ইব্‌নুল কায়্যিম জাওযি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “তাদেরকে তাদের কুফরি উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সবার নিকট হারাম, যেমন বলা: “তোমার উৎসব সফল হোক”, “শুভ বড় দিন” অথবা এ জাতীয় অন্যান্য শব্দ, যা বর্তমান আমরা শুনতে পাইএভাবে শুভেচ্ছা জানানোর ফলে যদিও সে কাফের হয় না, কিন্তু তার এ কর্ম হারাম কোন সন্দেহ নেই। কারণ প্রকারান্তরে এভাবে সে ক্রুশকে সেজদার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছে! এ জাতীয় শুভেচ্ছা মদ্যপ, হত্যাকারী ও ব্যভিচারীকে শুভেচ্ছার জানানোর চেয়ে মারাত্মক। অথচ যে কবিরা গুনাহের জন্য শুভেচ্ছা জানাল, সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তি ও গোস্বার জন্য প্রস্তুত করল”[37]

প্রিয় পাঠক, আপনার জন্য বৈধ নয় ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের শুভেচ্ছা জানানো, তাদেরকে কার্ড উপহার দেয়া, বা তাদের উৎসবে কল্যাণ কামনা করা
তারা ফিলিস্তিনের বুকে আপনার ভাইকে হত্যা করছে, ইহুদিদের মদদ দিচ্ছে এবং দেশে দেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আফসোস, ধোঁকায় লিপ্ত কতক মুসলিম তবুও তাদের শুভেচ্ছা জানায়! এরূপ কখনো ঠিক নয়, যেমন ঠিক নয় তাদের উপহার গ্রহণ করা, বরং তাদের মুখের উপর তা ফেরত দেয়াই শ্রেয়।
তাদের উৎসব ও কুফরিতে ব্যবহৃত বস্তুসমূহ বিক্রি করা, তৈরি করা ও বাজারজাত করা নিষেধ। তাদের ইবাদত ও ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, হল রোম, হোটেল ও মাঠ ভাড়া দেয়া বৈধ নয়। 
শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এমন কোন বস্তু বিক্রি করা বৈধ নয়, যার দ্বারা তারা ধর্মীয় উৎসব পালনে উপকৃত হয়”। অর্থাৎ তাদের নিকট এমন বস্তু বিক্রি করা যাবে না, যার দ্বারা কুফরি, গোমরাহি ও বাতিল ধর্মের উৎসব পালনে সক্ষম হয়। এসব পণ্য থেকে উপার্জিত মুনাফা হারাম। আর যে শরীর হারাম বস্তু দ্বারা সৃষ্ট তার জন্য জাহান্নাম শ্রেয়।

নববর্ষ ও আমাদের সতর্কতা

আমরা বছরের অন্যান্য দিনের ন্যায় নববর্ষের দিনকে গণ্য করব। এতে কোন ধরণের অনুষ্ঠান করব না ও তাতে অংশ নেব না। আমাদের সন্তানদের প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখব, যেন তারা বিজাতীয় উৎসবে অংশ গ্রহণ না করে। ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْأَمِيرُ رَاعٍ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ».
“তোমরা সবাই জিম্মাদার এবং তোমাদের সবাইকে তার জিম্মাদারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আমির জিম্মাদার, অনুরূপ ব্যক্তি তার পরিবারে জিম্মাদার। নারী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের জিম্মাদার। অতএব তোমরা সবাই জিম্মাদার এবং সবাইকে তার জিম্মাদারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে”[38] 
অতএব যার অধীনে যারা রয়েছে তাদের দেখা-শুনা করা, দীন ও দুনিয়ার কল্যাণের পথ বাতলানো এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা তার দায়িত্ব। যে নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিবে, তার জন্য রয়েছে বড় প্রতিদান, আর যে নিজ দায়িত্বে অবহেলা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
নববর্ষ কিংবা এ জাতীয় উৎসবে আমরা মুসলিম অমুসলিম কারো সাথে উপহার আদান-প্রদান করব না, বিশেষ করে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন ও ইংরেজি নববর্ষে। আমরা এতে ছুটি কাটাব না, না স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করব। এ দিনের সংস্কৃতি হিসেবে কারো যোগাযোগ করব না।

প্রিয় পাঠক, সন্তান কিংবা পরিবারের কোন সদস্যের আবদার রক্ষার্থে আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে তাদের উৎসব উদযাপন করা যাবে না। 
ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “যদি কেউ বলে: আমরা এগুলো ছোট বাচ্চা ও নারীদের জন্য করি, তাকে বলা হবে: সবচেয়ে হতভাগা সে ব্যক্তি যে আল্লাহর গোস্বার বস্তু দ্বারা পরিবার ও সন্তানকে সন্তুষ্ট করে। অতঃপর তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«مَنْ تَنَافَى أَرْضَ الأَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانِهِمْ حُشِرَ مَعَهُمْ»
“যে অনারব দেশ বিচরণ করে, অতঃপর তাদের নওরোজ ও মেহেরজান উৎযান করে, তাদের সাথে তাকে উঠানো হবে”[39] 
তার এ কথার দাবি এসব কর্ম কবিরা গুনা এবং এ জাতীয় অল্প অপরাধ অধিক অপরাধের দিকে ধাবিত করে। তাই মুসলিমের কর্তব্য এ জাতীয় কর্মের পথ একেবারে বন্ধ করা এবং পরিবার ও সন্তানের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করা। বিদআত থেকে বিরত থাকা ইবাদত। কেউ বলবেন না: এর দ্বারা বাচ্চাদের আনন্দ দেই! আপনি কি বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য আল্লাহর গোস্বা ও শয়তানের সন্তুষ্টির বস্তু ব্যতীত কিছু পেলেন না! এগুলো কুফরির আলামত ও সীমালঙ্ঘন বৈ কিছু নয়?! আপনি খারাপ অভিভাবক, বস্তুত আপনি গড়ে উঠেছেন এভাবে”।[40] 
        
মুসলিম ভাই, আসুন কাফেরদের অনুসরণ ত্যাগ করে আমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করি। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱدۡخُلُواْ فِي ٱلسِّلۡمِ كَآفَّةٗ وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٢٠٨﴾ [البقرة: ٢٠٨] 
“হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু”।[41]
অভিধানে ইসলাম শব্দের অর্থ দু’টি: (ক). আত্মসমর্পণ করা ও আনুগত্য স্বীকার করা। (খ). আল্লাহর জন্য ইবাদত একনিষ্ঠ করা। প্রথম অর্থের সমর্থনে আল্লাহ তাআলার বাণী:
﴿أَفَغَيۡرَ دِينِ ٱللَّهِ يَبۡغُونَ وَلَهُۥٓ أَسۡلَمَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ طَوۡعٗا وَكَرۡهٗا وَإِلَيۡهِ يُرۡجَعُونَ ٨٣﴾ [ال عمران: ٨٣] 
“তারা কি আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা তারই আনুগত্য করে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তাদেরকে তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করা হবে”।[42] 
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
﴿فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِينِ ١٠٣﴾ [الصافات : ١٠٣] 
“অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে কাত করে শুইয়ে দিল”।[43] 
এ দুই আয়াতে ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য করা।
দ্বিতীয় অর্থ সমর্থনে আল্লাহ তাআলার বাণী:
﴿وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ وَإِلَى ٱللَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٢٢﴾ [لقمان: ٢٢] 
“আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে”।[44] 
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
﴿وَمَن يَرۡغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفۡسَهُۥۚ وَلَقَدِ ٱصۡطَفَيۡنَٰهُ فِي ٱلدُّنۡيَاۖ وَإِنَّهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٣٠ إِذۡ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسۡلِمۡۖ قَالَ أَسۡلَمۡتُ لِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٣١﴾ [البقرة: ١٣٠،  ١٣١] 
“আর যে নিজেকে নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া কে ইবরাহিমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? আর অবশ্যই আমি তাকে দুনিয়াতে বেছে নিয়েছি এবং নিশ্চয় সে আখিরাতে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যখন তার রব তাকে বললেন: ‘তুমি আত্মসমর্পণ কর’। সে বলল, ‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলাম’।[45] 
এ দুই আয়াতে ইসলামের অর্থ শিরক মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য সকল প্রকার ইবাদত উৎসর্গ করা। তাই মুসলিম হতে হলে আমাদের দু’টি কাজ করতে হবে: এক. আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা। দুই. সকল প্রকার ইবাদত একনিষ্ঠভাবে তাকে উৎসর্গ করা। মাখলুকের নিকট প্রেরিত আল্লাহর সকল রেসালাতের শিক্ষা এটাই ছিল। এ ইসলাম আল্লাহর একমাত্র দীন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ١٩﴾ [ال عمران: ١٩] 
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম”।[46] 
নুহ আলাইহিস সালাম তার কওমকে বলছেন:
﴿فَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَمَا سَأَلۡتُكُم مِّنۡ أَجۡرٍۖ إِنۡ أَجۡرِيَ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِۖ وَأُمِرۡتُ أَنۡ أَكُونَ مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٧٢﴾ [يونس : ٧٢] 
“অতঃপর তোমরা যদি বিমুখ হও, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর দায়িত্বে। আর আমি আদিষ্ট হয়েছি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার”।[47] 
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে:
﴿مَا كَانَ إِبۡرَٰهِيمُ يَهُودِيّٗا وَلَا نَصۡرَانِيّٗا وَلَٰكِن كَانَ حَنِيفٗا مُّسۡلِمٗا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٦٧﴾ [ال عمران: ٦٧] 
“ইবরাহিম ইহুদি ছিল না, নাসারাও ছিল না, বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না”।[48] 
কাবা নির্মাণের সময় ইবরাহিম ও ইসমাঈল নিজেদের ও সন্তানের জন্য মুসলিম হওয়ার দোয়া করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿رَبَّنَا وَٱجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَيۡنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةٗ مُّسۡلِمَةٗ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبۡ عَلَيۡنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٢٨﴾ [البقرة: ١٢٨] 
“হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[49] 
ইয়াকুব আলাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় তার সন্তানেরা তাকে মুসলিম হিসেবে বেচে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِيۖ قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ ءَابَآئِكَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗا وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ١٣٣﴾ [البقرة: ١٣٣] 
“নাকি তোমরা সাক্ষী ছিলে, যখন ইয়াকূবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, ‘আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা বলল, ‘আমরা ইবাদত করব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহিম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের, যিনি এক ইলাহ। আর আমরা তারই অনুগত”।[50] 
মুসা আলাইহিস সালাম মুসলিম হওয়ার শর্তে তার কওমকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿وَقَالَ مُوسَىٰ يَٰقَوۡمِ إِن كُنتُمۡ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ فَعَلَيۡهِ تَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّسۡلِمِينَ ٨٤﴾ [يونس : ٨٤] 
“আর মুসা বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তারই উপর তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক”।[51] 
ইউসুফ আলাইহিস সালাম মুসলিম হিসেবে মৃত্যু বরণের জন্য আল্লাহ নিকট দোয়া করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿رَبِّ قَدۡ ءَاتَيۡتَنِي مِنَ ٱلۡمُلۡكِ وَعَلَّمۡتَنِي مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ أَنتَ وَلِيِّۦ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ تَوَفَّنِي مُسۡلِمٗا وَأَلۡحِقۡنِي بِٱلصَّٰلِحِينَ ١٠١﴾ [يوسف: ١٠٠] 
“হে আমার রব, আপনি আমাকে রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন”।[52] 
ঈসা আলাইহিস সালামের সাথীগণ নিজেদের ইসলামের উপর ঈসা আলাইহিস সালামকে সাক্ষী বানিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنۡهُمُ ٱلۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ أَنصَارِيٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٥٢﴾ [ال عمران: ٥٢] 
“অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ হতে কুফরি উপলব্ধি করল, তখন বলল: ‘কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে’? হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম”।[53]
আমরা দেখছি সকল নবী ও রাসূলগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং তারা স্বীয় কওমকে তার দিকে আহ্বান করতেন, যার অর্থ আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ কর এবং সকল ইবাদত একনিষ্ঠভাবে তাকে উৎসর্গ কর। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিলকৃত দীনের নাম হয় ইসলাম এবং তার অনুসারীদের নাম হয় মুসলিম। তাদের এ নামকরণ করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿وَجَٰهِدُواْ فِي ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦۚ هُوَ ٱجۡتَبَىٰكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٰهِيمَۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ مِن قَبۡلُ ٧٨﴾ [الحج : ٧٨] 
“আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের দীন। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বে”।[54] 
আল্লাহ তাআলা এ দীন ব্যতীত কোন দীন গ্রহণ করবেন না। ইরশাদ হচ্ছে:    
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥] 
“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায়, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।[55] 
আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য ইসলামকে পছন্দ করেছেন এবং আমাদের জন্য আমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائ‍دة: ٣] 
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”।[56] 
আল্লাহ যাকে হিদায়েত দেয়ার ইচ্ছা করেন ইসলামের জন্য তার অন্তর খুলে দেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿فَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يَهۡدِيَهُۥ يَشۡرَحۡ صَدۡرَهُۥ لِلۡإِسۡلَٰمِۖ ١٢٥﴾ [الانعام: ١٢٥] 
“সুতরাং যাকে আল্লাহ হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার বুক উন্মুক্ত করে দেন”।[57] 
আল্লাহ তাআলা মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ال عمران: ١٠٢] 
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেও না”।[58]  
আমি মুসলিম, আমার আত্মসমর্পণ আল্লাহর সমীপে, তার সকল বিধান মেনে নিলাম, এ ছাড়া বিধর্মী সকল বিধান, উৎসব ও ইবাদত প্রত্যাখ্যান করলাম। আমার সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য উৎসর্গ। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣﴾ [الانعام: ١٦٢،  ١٦٣] 
“বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব। তার কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম”।[59]

মুসলিম ভাই, পৃথিবীতে দু’প্রকার দীন রয়েছে: (ক). মানব রচিত দীন (খ). আসমানী বা ওহী নির্ভর দীন। (ক). মানব রচিত দীন যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ ও অগ্নিপূজক ইত্যাদি। (খ). আসমানী দীন যেমন ইহুদি, খৃস্টান ও ইসলাম। মানব জাতির হিদায়েত ও কল্যাণের জন্য আল্লাহ তাআলা সকল নবী ও রাসূলকে এ দীনসহ প্রেরণ করেছেন। ইহুদি-খৃস্টানদের দীন আজ বিকৃত, রহিত ও মানব রচিত দীনের ন্যায় প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহর নিকট তার কোন মূল্য নেই। আল্লাহ আমাদেরকে সর্বোত্তম দীন, সর্বোত্তম কুরআন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল দান করেছেন। আসুন আমরা দীন ইসলাম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে আঁকড়ে ধরি, পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করি এবং কাফের মুশরিকদের সঙ্গ ত্যাগ করি, তাদের কৃষ্টি-কালচার পরিহার করি। আল্লাহ আমাদেরকে তার নিকট আত্মসমর্পণকারী ও একনিষ্ঠভাবে সকল ইবাদত উৎসর্গকারী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।